বাচ্চার খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা

গল্পের ঝুলি শেষ হলেও শেষ হয় না বাচ্চার মুখের খাবার। ফল দেখলেই নাক কুঁচকোনো, দুধের কথা শুনলেই ছুট্টে পালিয়ে যাওয়া, খেতে বসে শাকসবজি সরিয়ে রাখা নিত্যদিনের অভ্যাস। বাড়ির খুদে সদস্যের মুখে প্রায় কিছুই মুখে না।

অন্যদিকে চাউমিন, পেস্ট্রি, চিপস এনে হাজির করলে, নিমেষে শেষ। ফলে ক্যালরির হিসেবে একশোয় একশো আর পুষ্টি এক্কেবারে জিরো। বকাঝকা, বোঝানো, শাস্তি সব স্ট্র্যাটেজি ফেল। অগত্যা মায়ের মাথায় হাত, বাবার ভ্রুতে ভাঁজ।

খাওয়াদাওয়া নিয়ে বায়নাক্কা প্রায় সব বাচ্চাই করে। কিন্তু তাতে বাচ্চাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আপনাকে যদি পুষ্টির নামে রোজ আপেলসিদ্ধ, দুধ-কলা খেতে হয়, তা হলে আপনিও কি রাজি হবেন? ট্যালট্যালে মাছের ঝোল, অখাদ্য তরকারি যদি ভাবেন বাচ্চা নির্বিবাদে খেয়ে নেবে, তা হলে বলব আপনাদের ভাবনাতেই গলদ।

খেতে বাচ্চা তখনই ভালবাসবে যখন স্বাদে, প্রেজেন্টেশনে আপনি ফুল মার্কস পাবেন। আর তার সঙ্গে চাই একটু বুদ্ধি, একটু স্ট্র্যাটেজি। বাচ্চারা দায়িত্ব নিতে ভালবাসে। খাওয়াদাওয়ার ব্যপারটায় ওকে ইনভলভ করুন। তা হলেই দেখবেন আপনি ও বাচ্চা একই প্ল্যাটফর্মে আছেন।

মেনু সিলেকশন
প্রতি সপ্তাহে বাচ্চাকে নিয়ে বসে সারা সপ্তাহের মেনু প্ল্যান করুন। প্ল্যান করতে বসে গল্প করে বুঝিয়ে দিন ব্যালেন্সড ডায়েটে কী ধরনের খাবার থাকা উচিত, সেগুলো খেলে ওর কী উপকার হবে ইত্যাদি। হেলথ ফুড সংক্রান্ত বই, পত্রপত্রিকা বা ওয়েবসাইটও একসঙ্গে ঘাঁটাঘাটি করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার কথাগুলো যেন পড়ার বইয়ের মতো না শোনায়। রোজকার খাবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর কিন্তু মুখোরোচক খাবার, যেমন ফ্রুট স্যালাড, মিল্ক শেক, ভেজিটেবল পরোটা অবশ্যই রাখবেন। ওকে বাদ দিয়ে নিজেরা বাইরের খাবার খাবেন না। বুঝতে পারলে ও কিন্তু প্রতারিত বোধ করবে এবং অবাধ্য হবে। বাড়ির সবাই একসঙ্গে খেতে বসুন এবং একই খাবার খান। সপ্তাহে একদিন ওর পছন্দমতো জাঙ্কফুড খেতে দিন।

শপিং স্প্রি
ছুটির দিনে বাড়ির বাজার করার সময় বাচ্চাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। বাজার করার সময় নানা ধরনের সবজি, ফল, মাছ ইত্যাদি চেনাতে থাকুন। বিভিন্ন খাবারের রং, আকার, গন্ধ, স্পর্শ বুঝতে সাহায্য করুন। বিভিন্ন রঙের সবজি, ফল একসঙ্গে বেছে কিনে আসুন। রান্না করার সময় ওর সাহায্য নিন, তা যত সামান্যই হোক। দেখবেন নিজের পছন্দ করা খাবার ও আনন্দ করেই খাবে। একটু বড় বাচ্চা হলে কয়েকটি সহজ অথচ পুষ্টিকর রেসিপি শিখিয়ে দিন। সবাই মিলে খেতে বেশ মজাই লাগবে।

হেলদি ডায়েট
বাচ্চাদের ডায়েটে ক্যালশিয়াম একটি অত্যন্ত জরুরি উপাদান। টোনড দুধ ঠান্ডা করে ওর পছন্দমতো ফ্লেভার মিশিয়ে দিতে পারেন। বাড়িতে তৈরি অল্প মিষ্টি দেওয়া আইসক্রিমও সুস্বাদু। কাসটার্ড, পুডিংও চলতে পারে। এ ছাড়া টিফিনে চিপস বা বার্গারের বদলে চিজ স্যান্ডউইচ বা ভেজিটেবল ক্যাসারোল জাতীয় মুখোরোচক খাবার দিন।

স্কুল থেকে ফিরে সফট ড্রিঙ্কের বদলে ফ্রেশ ফ্রুট জুস বা বাড়িতে তৈরি লেবুর শরবত করে খাওয়ান।

শীতের দিনে নানারকম মরশুমি সবজি দিয়ে গরমাগরম স্যুপ দিনের যে কোনও সময় খাওয়া যেতে পারে।

টক-মিষ্টি রায়তা বা ডিপ বানিয়ে শসা, টমাটো, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য ফল মিশিয়ে স্ন্যাকস হিসেবে সার্ভ করুন।

বাড়িতে চকোলেট, টফি, মিষ্টি বা পেস্ট্রিজাতীয় জিনিস ফ্রিজে বেশি পরিমাণে স্টক করে রাখলে বাচ্চারা বারণ করা সত্ত্বেও খাবে। কোথাও বেড়াতে বেরলে এগুলো অকেশনাল ট্রিট হিসেবে থাকুক।

আজকের বাজার: আরআর/ ১০ জুন ২০১৭