বাজেটের কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ সুজনের

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় লক্ষ্য পূরণে বাজেটের কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ গুরুত্বারোপ করেন।

তারা বলেন, জাতীয় বাজেট প্রণয়ন ও পাস প্রক্রিয়ায় ‘গণতান্ত্রিক চর্চা ও জবাবদিহির’ ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।

গোলটেবিল আলোচনায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এতে তিনি বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতার মধ্যেই সংসদে ৪৮তম জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সরকারের প্রতিবেদন এটাও বলছে যে বৈষম্যও দ্রুত বাড়ছে। আবার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ব্যর্থ হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপার্সন রাশেদ আরও বলেন, বাজেট পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া, খাত ভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

বাজেট বিশ্লেষণ করে তিনি আরও বলেন ‘রাজস্ব উৎপাদনের চেয়ে ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। অ-উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। ব্যাপক ঘাটতি রেখে বাজেট প্রণয়ন করায় প্রতিবছরই বাড়ছে ঋণের বোঝা।

বাজেট বরাদ্দে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো খাতগুলোকে অবহেলা করা হয়েছে বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক।

বাজেট পদ্ধতির সমলোচনা করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাজেটের সংশোধন করা হয়।

‘সংসদে উপস্থাপনের পর কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই সংশোধিত বাজেট পাস করা হয়। কণ্ঠভোটে বাজেট পাস করানো ছাড়া সংসদ সদস্যদের আর কোনো ক্ষমতা নেই। ফলে পুরো প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক চর্চার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।

সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান তিনটি স্তম্ভ- সমতা, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণের প্রধান চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। অন্যথায় জাতি তার প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হবে।

তিনি বলেন, ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলেও অর্থমন্ত্রী তার বাজেটে কৃষকদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি এবং ভর্তুকি রাখেননি।

দেশের সেরা ১০ ধনীর মধ্যে অর্থমন্ত্রী একজন উল্লেখ করে সুজন সভাপতি বলেন, তিনি গরীবদের দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন কীভাবে?

এদিকে বাজেটের আকারের চেয়ে সঠিক বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র অধ্যপক ড. আনু মুহাম্মাদ।

অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, ‘বাজেটে জবাবদিহির অভাব রয়েছে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহ দেখা যায়, ছোট-ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় না।’

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতা করা উচিত। জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নে তিনিও বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার চেয়েছেন। তথ্যসূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ