বাজেটে কৃষি ভর্তুকি

আমাদের দেশের জন্য কৃষি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর আমরা যা খেয়ে বেঁচে থাকি তা এই গ্রামের মানুষগুলোই উৎপাদন করে। সেক্ষেত্রে কৃষিকে বাদ দিয়ে আমাদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের সরকারও তাই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়েই বাজেট ঘোষণা করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে, এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে।

এতসবের পরও আমাদের দেশে কৃষির মূল ফসল ধান উৎপাদনে খরচ অনেক বেশী। এমনকি পার্শ্ববতী দেশ ভারতের চেয়েও বেশী। এর কারণ হলো, আমাদের কৃষি শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। ২০০০ সালে গ্রামের প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ লোক কৃষিতে কাজ করতো, সেটা এখন ৪০ শতাংশের মত দাড়িয়েছে। শ্রমিকদের এই হার কমার কারণে তাদের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে।

দেখা যায় যে, দেশের অধিকাংশ শ্রমিকই গার্মেন্টস বা এই ধরণের কাজের দিকে ঝুঁকছে। কারণ, সেখানে কাজে কমফোর্ট আছে এবং ইনকামও বেশী পাওয়া যায়। অন্যদিকে কৃষিক্ষেত্রে অনেক জটিলতা আছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচন্ড রোদ এবং খরায় কৃষিক্ষেত্রে কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

এখন কথা হলো, আমাদের কৃষিতে কাজ করবে কে? আমাদের কৃষিতে গ্রামের মানুষরাই কাজ করবে, এখানে শহর থেকে গিয়ে কেউ কাজ করবে না। তাহলে এই গ্রামীন মানুষদের কাজে কষ্ট কমানোর জন্য একটু কমফোর্ট দরকার। এজন্য অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হবে। যা ব্যবহার করে কৃষকরা একটু কমফোর্ট পাবে এবং ব্যয়ও কমবে।

এবারের বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য। প্রয়োজন হলে আরও ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়গণ। যাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে এবং ইনকাম বাড়ে। কৃষিকে এভাবে গুরুত্ব দিয়েই এবারের বাজেট সাজানো হয়েছে। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অন্যান্য যেসব কলাকৌশল (যেমন- ইনোভেশন, রিসার্চ) লাগবে সেগুলোকে সাপোর্ট করার জন্যও একটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে। যদিও বরাদ্দটা (৫০কোটি টাকার মত) অনেক ছোট, তবে এই বরাদ্দটা বড় করা যেতে পারে।

আমি মনে করি রিসার্চের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা উচিত। যে টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো রিসার্চ করতে পারবে। পাশাপাশি রিসার্চের জন্য বরাদ্দের একটা বড় অংশ প্রাইভেট সেক্টরে দেওয়া উচিত। কেননা অধিকাংশ প্রাইভেট সেক্টরগুলো কিন্তু রিসার্চ ইনস্টিটিউট করে থাকে। আর এসব প্রাইভেট কোম্পানিগুলোই গ্লোবাললি রিসার্চ করছে।

কৃষকের লোকসান কামানোর উপায়: কম্বাইন হার্ভেস্টার-এমন একটা আধুনিক যন্ত্র, যার সাহায্যে খুব সহজেই ধান কাটা যায়। এই যন্ত্রটি শুয়ে যাওয়া কিংবা কাঁদায় পড়ে যাওয়া ধান এবং দাড়িয়ে থাকা গাছের ধান কেটে আলাদা করে মাড়াই করে বস্তায় দিয়ে দিবে। আর ধান গাছের খড়টা সারিবদ্ধভাবে এক পাশে রেখে যাবে। এতে সুবিধা হলো খড়টাও নষ্ট হবে না, আর মাড়াই করার খরচটাও কমে আসবে। এভাবে উৎপাদন খরচ কমানো গেলে তখন ধান কম দামে বিক্রি করলেও লস হবে না।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ধান ব্যতীত অন্যান্য কিছু কৃষি পণ্যের (মুরগি, মাছ কিংবা গরু) জন্য যেকোন রকম র-ম্যাটেরিয়াল বাহির থেকে আনতে হলে অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। এসব র-ম্যাটেরিয়ালের উপর যদি ট্যাক্স থাকে তাহলে লাভজনক মুরগি, মাছ কিংবা গরুর খামার তৈরি করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সরকারের একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাতে অগ্রিম ট্যাক্স থেকে মুক্তি পেয়ে খামারিরা লাভবান হতে পারে এবং খামার তৈরিতে আগ্রহী হতে পারে।

কৃষকদের লাভবান করতে হলে প্রথমত (ফসলের ক্ষেত্রে) প্রোডাক্টের গুনগত মান নিয়ে রিসার্চ করতে হবে। ইনোভেশন করে ভালো জাত পাওয়া গেলে ফলনও ভালো পাওয়া যাবে। আর এই ভালো জাতকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা গেলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে। সবকিছু মিলিয়ে যখন খরচ কমে আসবে তখন বাজারে দাম কম পেলেও ভালো লাভ পাওয়া যাবে। তারপর মুরগি, মাছ ও গরুর জন্য র-ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে অগ্রিম ট্যাক্স কমানো গেলে খামারিরা লাভবান হবে। এসব খামারিদের জন্য একটা উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা করা গেলে আরও ভালো হয়।

ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী
এসিআই এগ্রিবিজনেস