বাজেট নিয়ে ডিএসইর একগুচ্ছ প্রস্তাব

পুঁজিবাজার উন্নয়নে আসন্ন ২০১৯-২০ সালের বাজেটে করণীয় বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই)। এতে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জের কর অবকাশ সুবিধা বৃদ্ধি করা, করমুক্ত আয় ও করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের পরিমাণ বাড়ানো, বহুজাতিক কোম্পানি ও স্থানীয় ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তকরণে আরও বেশি উৎসহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান বাড়ানোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রচলিত নিয়মে পূর্ণ কর অব্যাহতির পরিবর্তে ২০১৪-১৫ অর্থবছর হতে ৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদী ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়। তবে সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বৎসরও পূর্ণ কর অবকাশ প্রদান করেন।

এখানে উল্লেখ্য, আয়কর ধারা ৫৩ বিবিবি, ৫৩এম, ডিভিডেন্ড ট্যাক্স এবং বিও অ্যাকাউন্ট চার্জ ইত্যাদি বাবদ সরকার ২০১৭-১৮ অর্থ বৎসরে প্রায় ৩৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।

অন্যদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মাত্র ৭৭ কোটি টাকা লেনদেন ফি আয় করে যা সরকারি কোষাগারে জমাকৃত করের মাত্র ২০ (বিশ) শতাংশ। লেনদেন ২৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত হলে এ সকল খাত হতে সরকার বাৎসরিক ১০০০ কোটি টাকার বেশী রাজস্ব আয় করবে (বিবরনী সংযুক্ত)। অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ এর আয়ের উপর করের পরিবর্তে ট্রেড বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার অধিকতর লাভবান হতে পারে ।

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পূর্বে এক্সচেঞ্জের আয় করমুক্ত ছিল। এখন যদি আয়কর আরোপ করা হয় তবে সরকার, এক্সচেঞ্জসহ দেশের সকল বিনিয়োগকারী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

১। বর্তমানে ডিএসই পরিচালন ক্ষতির সম্মুখীন। এমতাবস্থায়, এক্সচেঞ্জ-এর আয়ের উপর যদি কর আরোপ করা হয় সেক্ষেত্রে এক্সচেঞ্জ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে লেনদেন ফির হার বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হবে। যা প্রকারান্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীর উপরই বর্তাবে। ফলতঃ বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে যা শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

২। করের কারণে লেনদেন ফি বাড়িয়ে দিলে ট্রেডের পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে, ফলশ্রুতিতে এই খাতেও প্রচুর রাজস্ব হ্রাস পাবে।

৩। ডিএসই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুধুমাত্র ৬ কোটি টাকা নেট পরিচালন মুনাফা করেছে, সুতরাং এখনই যদি আবার এই আয়ের ওপর করারোপ করা হয় সেক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ অতি শিগগিরই পরিচালন মূলধনের ঘাটতির সম্মুখীন হবে। যা সরকারের ডিমিউচ্যুয়ালাইজড্ এক্সচেঞ্জ-এর সফলতার ব্যাপারে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্বদিচ্ছার ব্যাত্যয় ঘটাবে বলে প্রতীয়মান হয়।

৪। বর্তমানে দেশের প্রায় ১ কোটি লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পুঁজিবাজারগুলোর ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এমতাবস্থায়, দেশে স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের জন্য উপরোক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড পরবর্তী ৩ অর্থবছর (২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯) -এর জন্য পূর্ণাঙ্গ কর অবকাশ প্রাপ্তির ন্যায্য দাবিদার।

এছাড়া ৩০ শে জুন, ২০১৩ এর পূর্বে বন্ডের লেনদেনের উপর স্টক এক্সচেঞ্জের মেম্বারদের নিকট হইতে ০.০৫% কর আদায় করা হত। যেহেতু FA ২০১৩ অনুযায়ী বন্ড এর লেনদেনের উপর কর কর্তন প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেহেতু আইন অনুযায়ী, ১লা জুলাই, ২০১৩ হইতে বন্ড এর উপর উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য নয়।

পুঁজিবাজারের ট্রেজারি বন্ড ও বিলের সেকেন্ডারি মার্কেট সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই) সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উক্ত উদ্যোগের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ যেমন ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ এ বিনিয়োগের সুবিধা পাবেন তেমনি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডের লেনদেন এর ওপর কর অব্যাহতির বিষয়টি আলোচনা হয়। উল্লেয্য, Income Tax Ordinance, 1984-এর 53BBB ধারা অনুযায়ী বন্ড এর লেনদেন করযোগ্য নয়। আমরা জানি, “ট্রেজারি বিল ও বন্ড” বন্ডের একটি প্রকারভেদ; সুতরাং ট্রেজারি বিল ও বন্ডের লেনদেনও করযোগ্য হওয়ার কথা নয়। সভায় প্রতিনিধিগণ উপরোল্লিখিত কর অব্যাহতির বিষয়টি এন.বি.আর থেকে সুস্পষ্টকরণের জন্য অভিমত ব্যক্ত করেন।

উপরোক্ত বিষয়ে সুস্পষ্টকরণের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যথাক্রমে ৮/১/২০১৮ ইং এবং ১/২/২০১৮ ইং তারিখে চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর দুটি আবেদন পত্র প্রেরণ করে।

পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে ট্রেজারি বন্ড ও বিলের ওপর কর অব্যাহতির বিষয়টি সুস্পষ্টকরণের জন্য আপনার নিকট বিনীত অনুরোধ করছি। আশা করি আপনার এই বিষয়ে সদয় উদ্যোগ দেশের অর্থনীতি এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এছাড়া তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট আয়কর হারের পার্থক্য শতকরা ১০ এর পরিবর্তে শতকরা ২০ এ বৃদ্ধি করা উচিত। এতে অধিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ও স্থানীয় ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তকরণে আরও অধিকতর উৎসহিত করবে। চূড়ান্তভাবে এতে আমাদের দেশে ও পুঁজিবাজারে অধিক পরিমান বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। রাজস্ব প্রণোদনার মাধ্যমে দেশে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন উন্নত দেশের সরকারের জন্য একটি প্রচলিত ঘটনা।