বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে সফল যুবক শিমুল

চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করছেন যুবক শিমুল হোসেন।

পেয়ারা, আম ও কুল চাষ করে সফলতা পেয়ে তিনি এখন উন্নত জাতের ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

উপজেলার বকশিপুর গ্রামের মৃত মতিয়ার রহমানের এক মাত্র ছেলে শিমুল হোসেন। ২০০৭ সালে লেখাপড়া শেষ করে ২০০৮ সালে তিনি দুবাই যান। দুবাই সরকার কর্মী ছাটাই করলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে উন্নত জাতের ফল আম, পেঁয়ারা, কুল, লেবু চাষ শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পিরোজপুর থেকে চারা এনে নিজের অল্প জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন তিনি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বকশিপুর, পাতিবিলা, বাদেখানপুর, হাকিমপুর, শিশুতলা, শাহাজাদপুর, নারায়নপুর, গুয়াতলী, দেবীপুর, হিজলী ও পৌর এলাকার ইছাপুর গ্রামে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে বারী-১ (কাশমিরি) পয়সা জাতের রঙিন মাল্টা চাষ হয়েছে। তবে উপজেলায় শিমুল হোসেন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন।

শিমুল হোসেন বলেন, ‘চৌগাছা বাজারের আদর্শ নার্সারির মালিক হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে জেনে আমি পিরোজপুর ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাল্টার চারা সংগ্রহ করে প্রথমে অল্প জমিতে চাষ করি। চারা রোপন করার দেড় বছরের মধ্যে ফল ধরা শুরু হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফল বেশি হয়েছে। বর্তমানে ৪ বিঘা জমির প্রতিটি গাছে প্রায় ২ মণ করে মাল্টা রয়েছে। প্রতি কেজি মাল্টা ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে কীটনাশক বেশি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি মাল্টার ওজন ১৫০-২শ গ্রাম হয়ে থাকে। এক বিঘা জমিতে ৮-৮ হাত করে একশ গাছ রোপণ করা যায়। বিঘা প্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করে খুব কম সময়ে ১ থেকে দেড় লাখ টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৫০-৬০ মণ মাল্টা বিক্রি করেছি। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। তার মাল্টা বাগানে মাসিক বেতনভুক্ত তিনজন কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। তার সফলতা দেখে উপজেলার অনেকে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন।

বাগানে জৈব সার ব্যবহার কারায় ফলের রং ও স্বাদ ভালো হয়েছে। যে কারণে বড়-বড় মোকাম থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে ফল বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা নেই।’

এ ব্যাপারে চাষি হাবিবুর রহমান জানান, মাল্টা গাছের কার্টিং (সায়ন) লাগাতে হয় আষাঢ় মাসে। এক বছর ছয় মাসের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করে। একবার লাগিয়ে সঠিক পরিচর্যা করলে একটানা ১০-১৫ বছর ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ৫-৬ হাজার টাকার কার্টিং (সায়ন) বিক্রি করা যায়।

চৌগাছা মডেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নাহিদ সিরাজ জানান, মাল্টায় ক্যালোরি খুব কম থাকায় এ ফলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। যে কারণে শরীরের চর্বি ও রক্তের কোলেস্টরেল কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীন জানান, মাল্টা একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। মাল্টা চাষ দেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় কৃষি খাত। চৌগাছা এলাকার মাটি মাল্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ কারণে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তথ্য-ইউএনবি।

আজকের বাজার/এমএইচ