মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ

বিআইএফসির ক্লাসিফাইড ঋণ রিকভারি জোরদার করা হচ্ছে

এম এম মোস্তফা বিলাল: বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানী লিমিটেডের (বিআইএফসি) ক্রান্তিলগ্নে আমি এখানে যোগদান করি। যোগাদানের পর থেকেই আমাদের অগ্রাধিকার ছিল ম্যানেজমেন্ট টিমটাকে ঢেলে সাজানো। একইসঙ্গে আমাদের যে লোনগুলো ক্লাসিফাইড হয়ে গেছে; সেগুলোর রিকভারি জোরদার করা। সেজন্য শক্তিশালী রিকভারি টিম গঠন করা হয়েছে। কারণ বিগত দিনে লোন দেওয়ার পর যে সব গ্রাহককে আর ফলোআপ করা হয়নি; তাদের আমরা খোঁজে বের করছি। যেখানে মামলা করার প্রয়োজন, সেখানে আমরা মামলা করছি। অর্থ্যাৎ যেখানে যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের বোর্ড আমাদেরকে যথেষ্ট সহযোগীতা করছে। পাশাপাশি আমানত গ্রহণের প্রকল্পগুলোকে পুনরায় পর্যালোচনা করে সীমা এবং প্রোডাক্ট বাড়িয়েছি। বর্তমানে আমাদের নয়টি প্রোডাক্ট রয়েছে। প্রোডাক্টগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে; যাতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের যে ধরনের চাহিদা আছে, সেগুলোকে যেন কভার করা যায়। যেমন- এফডিআর আছে, মান্থলী ইনকাম স্কীম আছে, কোয়াটারলী ইনকাম স্কীম, ডাবল বেনিফিট স্কীম, ডিপিএস, কোটিপতি ইত্যাদি স্কীম রয়েছে। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্টুডেন্ট স্কীম আছে। সুতরাং আমরা চেষ্টা করেছি সব শ্রেণীর এ সংক্রান্ত চাহিদা যাতে মেটানো যায়। আর ডিপোজিটগুলো সংগ্রহের জন্যও আমরা শক্তিশালী টিম গঠন করেছি। আমরা আশা করছি অচিরেই আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।

বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যাংকি খাত বা ফিনান্সিয়াল সেক্টর একটা বড় ভ’মিকা রাখে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে বিনিয়োগকে কাংখিত মাত্রায় নিয়ে যেতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লেই আমাদের জিডিপির গ্রোথ বাড়বে। অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অগ্রগতি হবে। আর বিনিয়োগের যোগানটা দিতে পারে আমাদের ব্যাংকি খাত বা ফিনান্সিয়াল খাত।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য আমাদের শিল্পায়নের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে ব্যাংকি খাত বা ফিনান্সিয়াল সেক্টর অর্থের যোগান দিয়ে ভূমিকা রাখে। একইসঙ্গে ব্যাংক কিন্তু নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরীতেও ভূমিকা রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের ক্যাপিটাল বা মূলধন কম হলে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি তাকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এভাবে অর্থের যোগান দিয়ে ব্যাংকগুলো শিল্পায়নে ভ’মিকা রাখতে পারে।

গত বছর ব্যাংকিং খাত নিয়ে নেতিবাচক অনেক খবর এসেছে। তবে যে কোন সেক্টরের জন্যই সুশাসনের প্রয়োজন। সুশাসনের কোন বিকল্প নেই। ব্যাংকিং সেক্টরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে এখানেও সুশাসনের প্রয়োজন আছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে গত বছর কিন্তু প্রাইভেট সেক্টর ইস্টিমেট বা প্রাক্কলন থেকেও ক্রেডিট গ্রোথ বেশী হয়েছে। গ্রোথের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে নন পারফর্মিং লোন। সেটা একটা সমস্যা। এটার জন্য আমাদেরকে একটু ভেতরে ঢুকতে হবে। দেখতে হবে কেন এটা হচ্ছে। তবে সেজন্য সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তখন নন পারর্মিংয়ের এ্যাসেটের রেসিওটাও কমে আসবে। তবে ডিফলডার বা ঋণ খেলাপীর ক্ষেত্রে আমরা দুই ধরনের দেখি।

একটা হচ্ছে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিতে চায় না। আরেকটি হচ্ছে,কোন সেক্টরে ডিজাস্টারের কারণেই হোক বা গ্লোবাল কারনেই হোক; সত্যিকার অর্থেই ব্যবসায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাকে সহযোগীতা দিয়ে উদ্ধার করতে হবে। অন্যদিকে যারা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিতে চান না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে সরকারের সহযোগীতায় আমরা যদি খেলাপী ঋণ বা এমপিএল সমস্যাটা কমিয়ে আনতে পারি; তাহলে ব্যাংকিং খাত আরো বেশী সুসংখত হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো বেশী ভূমিকা রাখতে পারবে।

নন ব্যাংক ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিউশন বা এনবিএফআই খাত এবং ব্যাংকিং খাত প্রতিযোগীতামূলক হলেও একে অপরের পরিপূরক। অনেক সময় দেখা যায় যে, বিভিন্ন কারণে ব্যাংকে একটা লোন প্রসেস করতে অনেক সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে এনবিএফআই কোম্পানিগুলো অনেক কম সময় নিয়ে থাকে। এছাড়া চলমান বা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য যেসব মূলধনী যন্ত্রপাতি লাগে, সেগুলোর জন্য এনবিএফআই কোম্পানিগুলো দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে পারে। কারণ এনবিএফআই কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদী ডিপোজিট নিতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

এম এম মোস্তফা বিলাল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানী লিঃ