বিএনপির আন্দোলন মা‌নে আদাল‌তের বিরু‌দ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা: কাদের

দুর্নী‌তির মামলায় কারাবন্দি খা‌লেদা জিয়ার মু‌ক্তির দা‌বি‌তে বিএনপি যে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে তার কোনো যৌক্তিকতা দেখেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেটি রাজনৈতিক মামলা নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা এই মামলা এখন আদাল‌তে বিচারাধীন। সুতরাং আন্দোলন করা মা‌নে আদাল‌তের বিরু‌দ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।’

শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকার বিভিন্ন আসনের সাংসদ ও নবনির্বাচিত দুই মেয়‌রের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন ওবায়দুল কা‌দের।

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কারণে বিএনপি বিষেদাগার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন তারা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আন্দোলনের এই হুমকিতে আমরা অভ্যস্ত। এই হুমকি আমরা বারবার শুনে আসছি। বেগম জিয়াকে তারা আন্দোলন করে মুক্ত করবেন এটাই আজকে মোটামুটি অনেকে উচ্চারণ করেছে।’

বিএন‌পি আদালতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘যাদের বিবেক আছে তাদের কাছে প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ সরকার খা‌লেদা জিয়া‌কে কারাবন্দি করেনি। এই সরকার মামলাও দেয়নি। এটা রাজনৈতিক মামলাও নয়। এটা দুর্নীতির মামলা মামলা যা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। রাজনৈতিক কারণে সরকার যদি বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করত তাহলে রাজনৈতিক কারণে তাকে মুক্তি দেয়া প্রশ্ন আসতে পারত। কিন্তু যেহেতু এটা রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি, কাজেই সরকারের রাজনীতি বিবেচনার কোনো এখানে সুযোগ নেই।

‘যদি মনে করেন তারা আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করবে তাহ‌লে সেটি সম্ভব না। সরকার‌কে বাধ্য করতে পারবে না; পার‌বে আদালতকে। ত‌বে এটা কতোটা সমীচীন, ক‌তোটা যুক্তিযুক্ত? বিচার ব্যবস্থার দিক থেকে আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, আন্দোলন ঘোষণা তারা কেন করছে, এটা কোন গণতন্ত্র, ড. কামাল হোসেন সাহেবকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই।”

বিএনপির আন্দোলন পরিক্রমা সরকার ধৈর্য‌্য সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘যদি আন্দোলন করতে চায় করবে। সরকার হিসেবে আমাদের জনগণের জানমাল রক্ষার দায় দায়িত্ব আছে। রাজনৈতিকভাবে কোনো আন্দোলন যদি হয়, আমরা সেখানে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।

‘আন্দোলনের নামে যত সহিংসতা হয়, যেটা তারা বারবার করে আসছে, যেমন আদালতকেও তারা কলুষিত করেছে। সেরকম কোনো আন্দোলন যদি তারা করতে চান- সেটা কিন্তু মোকাবেলা করা হবে এবং দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।”

বিরোধীদলের প্রতি সরকার কতটা সহনশীল ভূমিকা পালন করে সেটি বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়া থেকে বোঝা যায় বলে মন্তব্য করেন তি‌নি।

ওবায়দুল কা‌দের ব‌লেন, ‘সভা-সমাবেশের ওপর কোনো বাধা-নিষেধ শেখ হাসিনার সরকার করবে না। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সরকার বাধা দেবে না। যদি সেখানে সহিংসতা উপাদান যুক্ত হয় আন্দোলন সমাবেশের নামে তাহলে সেটার জবাব দেয়া হ‌বে।’

এ সময় তি‌নি জানান, যেসব জেলার সম্মেলন হ‌য়ে‌ছে এই মাসের মধ্যে সেসব জেলা পূর্ণাঙ্গ ক‌মি‌টি ক‌রে সভাপতির কার্যালয়ে জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর যেসব জেলায় সম্মেলন হয়নি, সেসব মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা সম্মেলনগুলোর কাজ সমাপ্ত করার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

ওবায়দুল কা‌দের ব‌লেন, ‘তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে সম্মেলনের মাধ্যমে এই বিষয়টিকে জোর দিয়েছি। এটা যেমন একদিকে নির্বাচনের জন্য দরকার, তেমনি প্রতিপক্ষের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ঠেকানোর জন্যও আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সংগঠনের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক যে তৎপরতা আছে, সেটাও প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে।’

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

আজরেক বাজার/এমএইচ