বিদেশি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নিচ্ছে বিকাশ

আজকের বাজার প্রতিবেদন
প্রযুক্তি ও সেবার মানোন্নয়নে বিদেশী স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার বিকাশ লিমিটেড। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের কাছে কিছু শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনার একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে। অবশ্য এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে গতকাল ব্র্যাক ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের জানায়, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের কাছে শেয়ার বিক্রির বিষযটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা পরিপালন করার বিষয় রয়েছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ারের দর নিয়ে আলোচনাও করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার বিক্রির জন্য চুক্তি করতে হবে। সর্বোপরি এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলোও পরিপালন করতে হবে।

এদিকে ব্র্যাক ব্যাংক ও বিকাশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ছয়-সাতটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান বিকাশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে যাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হবে, তাদের সঙ্গেই চূড়ান্ত চুক্তি করা হবে।

স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশনস জারা জেবিন মাহবুব বণিক বার্তাকে বলেন, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাছাই কিংবা চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সময়মতো বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের ব্র্যাক ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের মানি ইন মোশন এলএলসির যৌথ উদ্যোগে বিকাশের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও ২০১৪ সালের এপ্রিলে মার্কিন ধনকুবের বিল গেটসের দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিকাশের ইকুইটি পার্টনার হিসেবে যোগ দেয়। বিকাশের ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন বিকাশের নেটওয়ার্কে গড়ে ৩৬ লাখ লেনদেন সম্পন্ন হয়। আর বছর শেষে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বাজারের ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বিকাশের দখলে রয়েছে।

২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর দুই বছর লোকসান দিলেও ২০১৪ সাল থেকেই মুনাফায় রয়েছে বিকাশ। ২০১৪ সালে ১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার করপরবর্তী মুনাফা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির, যা ২০১৫ সালে বেড়ে ২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। আর সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকার নিট মুনাফা করে তারা।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে বিকাশ। ফরচুন ম্যাগাজিনের ‘চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ২০১৭ সালের তালিকা অনুসারে আর্থসামাজিক পরিবর্তন ঘটানো সেরা ৫০টি কোম্পানির মধ্যে বিশ্বে ২৩তম স্থানে রয়েছে বিকাশ। এ তালিকার শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে জেপি মরগান চেজ, ডিএসএম ও অ্যাপল।

মূল প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যালান্সশিটেও তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ এসেছে বিকাশের কাছ থেকে, যা ২০১৫ সালে ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ ও ২০১৪ সালে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এদিকে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নিচ্ছে এ খবরে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারদর ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ৯৫ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়। গত এক বছরে এ শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ৫৯ টাকা ৬০ পয়সা।