বিদেশীদের কর সংগ্রহে নজরদারির বাড়াচ্ছে এনবিআর

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায়ে নজরদারী বাড়াচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অভিয়োগ আছে, অনেক বিদেশী আছেন, যারা উচ্চ বেতনে চাকরি করলেও রিটার্ন জমা দেন না বা কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রকৃত বেতন-ভাতা রিটার্নে গোপন করে থাকেন। বিদেশীদের এ ধরনের কর অনিয়ম প্রতিরোধেই বিশেষ সর্তকতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী রাজস্ব আহরণ করতে হবে সংস্থাটিকে। সেজন্য সম্ভাবনাময় সব খাতেই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এছাড়া অর্থপচারকারীদের ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে সিআইসি, শুল্ক গোয়েন্দা এবং ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করেন। এরপর বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। আবার বিভিন্ন কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসা, বিশেষ করে এনজিও, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্ট, মার্চেন্ডাইজিং, পরামর্শকসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত বিদেশীদের প্রকৃত বেতন-ভাতা গোপন রাখা হচ্ছে। মূলত কর ফাঁকি দিতেই এই কৌশল অবলম্বন করছেন একশ্রেণীর দেশীয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি গোপন চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে মানি লন্ডারিংয়ের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাচার হচ্ছে। প্রতি বছরই মুদ্রা পাচারের পরিমাণ আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এছাড়া অবৈধভাবে আসা বিদেশীরা মাদক চোরাচালান ও জাল মুদ্রা ব্যবসার মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। আবার অনেক বিদেশী নাগরিক অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে দেশে প্রবেশের পর ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলছেন। ফলে তাদের খুঁজে বের করা যায় না। এসব প্রতিরোধেই দেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তাদের।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীদের কাছ থেকে সঠিকভাবে আয়কর আদায় করতে গত বছর একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এনবিআর। এর সদস্য হিসেবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পুলিশের এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। পরে কাজের সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলভিত্তিক টাস্কফোর্সকে ভাগ করা হয়। ঢাকা অঞ্চলের টাস্কফোর্স ১২ সদস্য নিয়ে গঠিত। এই টাস্কফোর্স বিদেশীদের ডাটাবেজ তৈরির কাজও করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে টাস্কফোর্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীদের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। যেখানে বিদেশী কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কর্মস্থলের ঠিকানা, বাংলাদেশে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা, কাজের ধরন, বেতন-ভাতাদির তথ্য ও আয়কর পরিশোধের তথ্য উল্লেখ থাকছে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের জুলাই থেকে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও একটি স্থলবন্দরে আয়কর বুথ খুলেছে এনবিআর। ঢাকার হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে আয়কর বুথে দায়িত্বে সহকারী কর কমিশনার পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এসব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগের আগে বিদেশীদের আয়কর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হচ্ছে।

আজকের বাজার : এসএস / এলকে ১৭ জানুয়ারি ২০১৮।