বিদেশীদের বিনিয়োগ আগ্রহ দেশের অর্থবাজারকে অনেক দূর নিয়ে যাবে

আমাদের বাজারে একদিকে আছে চ্যালেঞ্জ, আরেকদিকে আছে অপরচুনিটি। যেখানে চ্যালেঞ্জ আছে, সেখানেই কিন্তু গ্রো করার সুযোগ আছে। আমরা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে যখন কথা বলি, তারা আমাদের দেশকে ফ্রন্টিয়ার মার্কেট হিসেবে বিবেচনা করে। এই ক্যাটাগরিতে কী বলা হয়েছে, এখানকার কর্মীরা অদক্ষ, কিন্তু দক্ষ করার সুযোগ আছে। এবং এই অদক্ষ বা ইনএফিসিয়েন্ট বলেই কিন্তু একটা প্রিমিয়ামের সুযোগ আছে। সুতরাং আমাদের এই ফ্রন্টিয়ার মার্কেটের ইনএফিসিয়েন্সির সুযোগটা বিদেশীরা নিচ্ছে। আজকে আমরা যদি দেখি, আকিজের যে সিগারেট কোম্পাটিকে জাপানী যে কোম্পানি কিনলো, পৃথিবীর ফিফথ লার্জেস্ট টোবাকো কোম্পানি। তারা কী কিনলো। সম্পদ ছাড়াই দেড় বিলিয়ন ডলারের একটা ভ্যালুয়েশন করা হয়েছে। কেন? এখানে অনেক বিজনেস পোটেনশিয়ালিটি আইডেন্টিফাই করা হয়েছে, যেটা আকিজ ধরতে পারেনি যে তার এখানে কত ব্যবসা আছে। সারা বাংলাদেশে আকিজের যে পেনিট্রেশন, সেটাকেই জাপানীরা মূল্যায়ন করেছে। আজকে যদি আমাদের দেশের বিকাশের কথা বলি, বিকাশ ফিন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশনের সিস্টেমটাকেই বদলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে কি হবে? আলীবাবা আসার পরে বিকাশ আরো যে জায়গায় চেঞ্জ আনবে, হয়তো দেখা যাবে দেশের সব ফিন্যান্সিয়াল লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে, উইদাউট ক্রেডিট কার্ড। এগুলো খুব এক্সাইটিং গল্প। আমরা বলছি বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি পরিমান কর্মক্ষম ইয়াং জেনারেশন।

অনেকে হয়তো বলছে সস্তা শ্রমিক বা লেবার। কিন্তু তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। মার্কেটের ডেপ্থ বাড়ছে। কেন এত বড় বড় বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশকে নিয়ে কারা চিন্তা করছে। আমরা হয়তো আমাদের ক্যাপাসিটি দিয়ে বুঝতে পারছি না। এই যে ধরুন আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে চীনারা কেন এত আগ্রহী, জাপানীরা কেন এত উৎসুক, বা অন্য দেশের মানুষেরা কেন এত বেশি উদগ্রীব। আমাদের এখানে অনেক প্রডাক্ট, অনেক অবকাঠামোর অভাব, অনেক টেকনিক্যাল নো হাও নেই বলে আমরা অনেক ভাল ব্যবসা করতে পারছি না। আমরা স্টক মার্কেটে অনেকটা কেনাবেচার বাইরে আর কিছু করতে পারছি না। আসলে কিন্তু স্টক মার্কেট হচ্ছে ক্যাপিটাল ফরমেশনের জায়গা। এখানে ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করবে, ক্যাপিটাল ফরমেশন হবে। পলিসি সেই লেভেলে হবে। এবং এখানে ইনভেস্টরদের জন্য নানা রকমের প্রডাক্ট থাকবে। যেহেতু আমরা সঞ্চয়প্রবণ জাতী, এ জন্য আমরা যেন সঞ্চয় করতে পারি তেমন প্রডাক্ট দিতে হবে। সব দেশেই ইকুয়িটি মার্কেট এক রকমের, বন্ড মার্কেট আরেক রকমের। এগুলো একেকটা ইনভেস্টরের একেক রকমের অ্যাটিচিউড থাকে। এবং স্টক মার্কেটের ট্রেডিংয়ের সবচেয়ে বড় বিয়ষ হলো হেজিং করা। হেজিং হলো একজন ইনভেস্টর কোনো একটা স্টকে ইনভেস্ট করে যাতে সে রিটেস্ট করে তার রিস্কটা কমাতে পারে। কারণ স্টক মার্কেটের খেলাটা হলো রিস্ক রিটার্ন খেলা। আপনি কত পার্সেন্ট রিটার্নের জন্য কত পার্সেন্ট রিস্ক নিচ্ছেন। গেন বিষয়টাতো আমরা ক্যালকুলেশন করি না। আমরা শুনে শুনে কাজ করছি। এই বিষয়গুলোতে অবশ্যই বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। কেননা আমাদের মার্কেটে প্রতিদিন টার্নওভারের বেশিরভাগই আসে রিটেইল থেকে। যদিও ইকুইটি বেইজড মার্কেট, ইন্সটিটিউশন পর্টিসিপেন্ট বেশি, তবুও রিটেইল থেকেই বেশি আসছে টার্নওভার। এটাই কিন্তু বেশি আকর্ষণ করেছে চায়না বিনিয়োগকারীদেরকে। তা নাহলে এত টাকা দিয়ে তারা কেন কিনলো। এই মার্কেটে প্রতিদিন মোট লেনদেনের প্রায় সত্তর আশি ভাগ রিটেইল পার্টিসিপেন্ট। এটা কিন্তু খুবই আকর্ষণীয়, ভেরি এ্যাট্রাকটিভ এবং খুবই ইন্টারেস্টিং। এসব জায়গা থেকে আমরা দেখতে চাচ্ছি চায়নারা আসলে তারা কোন ক্যাপাসিটিতে কাজ করে। টেকনোলজি ক্যাপাসিটি, সার্ভিলেন্স সিস্টেম, নো-হাউ, ইনফরমেশন সব কিছু নিয়েই তারা কাজ করবে। সেই জন্য বলছি যে অপরচুনিটি অনেক বেশি। এবং অপরচুনিটি আছে বলেই কিন্তু তারা অনেক দুর থেকে পাগলের মত ছুটে আসছে। ওরা বাংলাদেশকে অন্যরকমভাবে দেখছে।

অলিম্পিক বিস্কিট নিয়ে বিদেশিরা যখন আগ্রহী হলো, কোন বিষয়টা তখন তাদের চোখে পড়লো? যে হরতালের দিন বিস্কিটটা বেশি চলে। আমরা দেখি একটা শেয়ারের দাম বাড়বে কেন, আর ওরা দেখে এর মধ্যে কোন বিজনেসটা আছে। ওরা বাংলাদেশের কী দেখে, এই যে ধরুন কিস্তিতে প্রথম প্রডাক্ট দেয়া শুরু করলো সিঙ্গার কোম্পানি। তাদের দেখাদেখি ওয়ালটন কোম্পানি এক হাজার টাকায় টিভি, এক হাজার টাকায় ফ্রিজ দেয়া শুরু করলো কিস্তিতে। এতে কী হলো, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে গাড়ির চালক সারা দেশের সকলের বাসা-বাড়িতে ঢুকে গেল টিভি ফ্রিজ। এই যে রেভুলেশন, পার্চেজ পাওয়ার অনুযায়ী মানুষকে প্রডাক্ট দেয়া, বিরাট রেভুলেশন। মাইক্রো ফাইন্যান্সে আমরা যে রেভুলেশন করেছি, বিশ্বে আর কোথাও তা হয়নি। এখন দেখবেন আমাদের মত দেশে মাইক্রো ফাইন্যান্স বন্ডগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। কাজেই আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো না, আমাদের উইকনেসগুলোই অপরচুনিটি হিসিবে কাজ করবে। এজাগাতেই ওরা কাজ করতে আসছে। নো-হাউগুলো ওরা নিয়ে আসবে, ইনভেস্টমেন্টগুলো নিয়ে আসবে। আমাদের বিকাশ ফিন্যান্সিয়াল ট্রানজাকশনের যে রেভুলেশন করেছে, সেটাকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাবে আলীবাবা, যেটা তারা চায়নাতে করেছে। এরকম রুরাল এবং আরবানের ট্রানজাকশনতো বিশে^র কোথাও নেই। এইসব কিছু বিষয় যদি আপনি বিবেচনায় নেন, তাহলে দেখবেন আগামী বিশ বছরে একট বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে।

আমরা যেহেতু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করি, আমরা তাদের সাথে মত বিনিময় করছি, তাদের ইনটারেস্ট বুঝতে পারছি আমরা। তারা আসতে চায় এখানে। বিনিয়োগ করতে চায়। চায়নারা আসছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা আশাবাদি, নির্বাচনের আগে না হলেও নির্বাচনের পরে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। স্টক মার্কেট নিয়ে আমরা খুব আশাবাদি।

আমরা দেখতে পাচ্ছি বসুন্ধরার মত বড় কোম্পানি বাজারে এসছে। পেপার মার্কেটের আশি ভাগই তাদের দখলে। দেখাদেখি দেখবেন আরো বড় বড় কোম্পানি দেখবেন বাজারে আসবে। এবং এক সময় দেখবেন সার্বিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমরা অপেক্ষা করছি, আশা করছি বড় ধরণের পরিবর্তন দেখার জন্য। হয়তো আমরা আগামী দশ বিশ বছরে এই পরিবর্তনটা দেখতে পাব।

শেরীফ এম এ রহমান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড