বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ফলে বিপদে পড়বে চাষীরা?

বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বুধবার থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করা শুরু করেছে সরকার। খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে সরকার পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

আমদানি অব্যাহত থাকলে সমস্যা কি?

পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলে আসন্ন পেঁয়াজ উৎপাদনের মৌসুমে পেঁয়াজ-চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী যোগানের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ার কারণেই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে পেঁয়াজের। এরকম অবস্থায় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকারের পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী ছিল। “কিন্তু দেশজ পেঁয়াজের উৎপাদন বাজারে আসার সময় পেঁয়াজ আমদানি করা অব্যাহত থাকলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।” “দেশজ উৎপাদন হওয়ার পরপরই যখন বাজারে পেঁয়াজ আসবে, তখন বাজারের সিংহভাগই হবে দেশী পেঁয়াজ।” “কিন্তু সেসময় যদি সরকার পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখে তাহলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাবে এবং দাম কমে যাবে,” বাজারমূল্য যদি কমে যায় তখন দেশীয়ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার সময় কম দাম পাবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সরকারের পরিকল্পনা কী?

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ নাসিরুজ্জামান বিবিসিকে বলেন, পেঁয়াজ-চাষীরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য পায়, তা নিশ্চিত করতে কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

তিনি বলেন, “সাধারণত আমরা দেখি, দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ যখন বাজারে আসে তখন আমদানিকৃত পেঁয়াজও বাজারে থাকে। ফলে দেশীয় পেঁয়াজের দাম পড়ে যায় এবং পেঁয়াজ চাষীরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না।”

এই পরিস্থিতি যেন এবার তৈরি না হয় সেলক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সচিব মোহাম্মদ নাসিরুজ্জামান।

“পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুমে যেন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি আমরা।”

সেক্ষেত্রে আমদানি করা পেঁয়াজের তুলনায় বাজারে দেশে উৎপাদন করা পেঁয়াজের পরিমাণ বেশি থাকবে এবং তার ফলে পেঁয়াজ-চাষীরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়া বাজারে দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা পেঁয়াজের পরিমাণ যেন বৃদ্ধি পায় তা নিশ্চিত করতে পেঁয়াজ-চাষীদের প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষকরা যেন তাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হয় সেজন্যই এই প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান মি. নাসিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “সরকার চায় পেঁয়াজের চাহিদার পুরোটা যেন দেশের পেঁয়াজ-চাষীরাই উৎপাদন করতে উৎসাহী হয়, সেবিষয়ে উৎসাহ দিতে আগামী রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষীদের প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”খবর বিবিসি।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান