বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জরুরি

বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (বেপজা) মতো সরকারি সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জরুরি। একইসঙ্গে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। তা না হলে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাচিায় রাজস্ব ভবনের সভাকক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিনিয়োগসংক্রান্ত সরকারি দফতরগুলোর প্রধানরা এসব কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম অংশ নেন।

বিডার কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, এনবিআর শুধু রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটি দেশের উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।তাই আগামীতে এমন বাজেট প্রণয়ন করা দরকার যাতে বিনিয়োগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ করহার বেশি, কিন্তু আদায় কম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত কম।তাহলে এতো উচ্চহার দিয়ে লাভ কী? বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে কোন দেশে কর্পোরেট হার কতো সেটি বিবেচনা করেন। এক্ষেত্রে প্রতিযোগী অথবা উন্নয়নশীল দেশের চাইতে বাংলাদেশে করহার বেশি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নির্দেশে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশ কোন কোন দিক থেকে পিছিয়ে আছে, সেটি খতিয়ে দেখা হয়।এতে দেখা গেছে, ব্যবসা উন্নয়ন সূচক, অবকাঠামো ও দক্ষতার ঘাটতিÑ এই ৩ দিকে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের তুলনায় পিছিয়ে আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সরকারি সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে।পাশাপাশি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বেজার পবন চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ বিনিয়োগ আকর্ষণে বিডা, বেপজা,বেজা, হাইটেক কর্তৃপক্ষ, পিপিপির মতো অসংখ্য দফতর আছে। এগুলোর আলাদা আলাদা আইন ও বিধি আছে। কিন্তু ভিয়েতনামে কোন সংস্থাই নেই। শুধু একটি ডিক্রির মাধ্যমে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। তাই বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এ জন্য যে সমস্যাগুলো আছে চিহ্নিত করে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

হাইটেক পার্ক অথরিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, এনবিআর হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের জন্য অনেক করসুবিধা দিয়েছে। এক বছরে ১১টি এসআরও করেছে। কিন্তু এসব এসআরওতে কিছু সমস্যা আছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এসেও আবার ফিরে যাচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিল্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম বলেন, কর নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। যাতে বেশি পরিমাণে ব্যক্তি ও উদ্যোক্তাকে করের আওতায় আনা যায়। এতে সার্বিকভাবে কর আপাতন সাধারণ জনগোষ্ঠীর ওপর থেকে হ্রাস পাবে।সভায় বিল্ডের পক্ষ থেকে আয়কর সম্পর্কিত ৪১টি, কাস্টমস সম্পর্কিত ৪৯টি এবং ভ্যাট সম্পর্কিত ২০টি প্রস্তাব দেন তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন,বরাবরের মতোই আগামী বাজেট বড় হবে। সে অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যও বাড়বে। কিন্তু জনগণকে ক্ষতি না করে সাংগঠনিকভাবে রাজস্ব আদায় করা হবে। এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সঠিকভাবে কর আদায় করা। জনগণ ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে। কিন্তু সরকারকের ব্যবসায়ীদের যেটা দেয়ার কথা সেটা ঠিক মতো দিচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের জন্য সামগ্রিকভাবে কর্পোরেট করহার কমানোর প্রয়োজনীয় থাকলেও এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

আরএম/