বিরাট অঙ্কের ক্ষতির মুখে এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনীতি: এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদন

চলতি বছর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। গতকাল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে নানামুখী প্রভাব মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সরকার। ফলে ২০২০ সালে এশিয়া-প্যাসিফিকের অর্থনীতি মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়বে, এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে যেতে পারে সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। খবর এএফপি।

এ বছর অঞ্চলটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখে রয়েছে চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব প্রত্যক্ষ করছে। এ অবস্থায় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবার ৩ শতাংশেরও নিচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও হংকংয়ের অর্থনীতি। অন্যদিকে একে একে অন্তত ৮৫টি দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের আতঙ্কে দিন গুনছে পুরো বিশ্ব। বৈশ্বিক বাজার ও বিনিয়োগকারীদের সামলাতে হচ্ছে ‘স্মরণকালের’ তীব্রতম সংকট।

এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদন বলছে, সরবরাহ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এ বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের ক্রম বিস্তৃতি অর্থনৈতিক সংকট আরো তীব্র করে তুলছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাপান ও কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও চাহিদায়। একই সঙ্গে কমে যাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বহির্বিশ্বের চাহিদাও। ফলে সমগ্র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিতে ২০২০ সালে মোট ক্ষতি হতে পারে ২১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পর এত বড় সংকট আর কখনো দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতিগুলো ক্রেতা ও উৎপাদকের দিক থেকে উভয় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে ক্রেতারা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। অন্যদিকে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে পণ্য সরবরাহ।

এর মধ্যে চীনে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় ভাইরাস সংক্রমণের আগেই। এ বছর দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হলেও, তা হবে তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে আশঙ্কার কথা, শ্রমিকরা কারখানায় কাজে ফেরার পর পুনরায় সংক্রমণ দেখা দিলে এবং নতুন করে উৎপাদন কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপিত হলে প্রবৃদ্ধি কমে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

এদিকে ২০০৮ সালের পর গত বছর প্রথম অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হয় হংকং। কিন্তু এ বছর নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ফের মন্দার মুখে পড়েছে চীন নিয়ন্ত্রিত নগররাষ্ট্রটি। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের অর্থনীতিতেও নভেল করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ অঞ্চলের পর্যটন খাত। তবে এর মধ্যেও পরবর্তী সময়ে এসব দেশের অর্থনীতি ফের ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে করছে এসঅ্যান্ডপি।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দেয়া গেলে অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাছাড়া নভেল করোনাভাইরাস চিরকালের জন্য শ্রমশক্তি, মূলধন ও উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিশ্চল করে রাখবে না। ফলে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ যত বেশি সম্ভব কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি প্রচুর উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

এদিকে গতকাল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ১০ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়ে যাচ্ছে চীনের অর্থনীতি। একইভাবে এ অঞ্চলের উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর ক্ষতি হতে পারে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের।

আজকের বাজার/ এ.এ