বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে

আজকের বাজার প্রতিবেদন: কয়েক মাস ধরে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচকে ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় থাকার পর আগস্টে সূচকে নিম্নমুখিতা দেখা যায়। তবে এক মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বরে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময় বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যের গড় সূচক মান ছিল ১৭৮ দশমিক ৪ পয়েন্ট। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সূচকমান ৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ফুড প্রাইস ইনডেক্স (এফএফপিআই) অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের বাড়তি দাম। চিনি ও আমিষপণ্যের দাম সামান্য বাড়লেও খাদ্যশস্যের দাম কমেছে।

এফএফপিআই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই মাস নিম্নমুখী থাকার পর আগস্টে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক দাম বেড়েছিল। সেপ্টেম্বরেও এ প্রবণতা অব্যাহত ছিল। এ সময় এফএওর ভোজ্যতেলের গড় মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৭১ দশমিক ৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে এ মূল্যসূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১৬৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট হয়েছিল, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। এর আগে জুলাইয়ে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ১৬০ দশমিক ৪ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৮ পয়েন্ট কম। গত সাত মাসের মধ্যে এটাই ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। মূলত ভারত ও চীনসহ এশিয়ার দেশগুলোয় উত্সবের মৌসুমকে কেন্দ্র করে ভোজ্যতেলের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। এর বিপরীতে পণ্যটির সরবরাহ সীমিত রয়েছে। এ কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে।

অন্যদিকে গত মাসে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য মূল্যের গড় সূচকমান ১ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫২ দশমিক ২ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ১ শতাংশ কম। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ মাস ৮ শতাংশ বেশি। আগস্টে বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক ছিল ১৫৩ দশমিক ৪ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম। এর আগে জুলাইয়ে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য মূল্যের গড় সূচকমান ৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৬২ দশমিক ২ পয়েন্টে। গত মাসে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে গম ও ভুট্টার। চলতি বছর ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের গম ও ভুট্টা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় বিদ্যমান অনাবৃষ্টি ও খরা পরিস্থিতির জের ধরে উৎপাদন ও সরবরাহ হ্রাসের আশঙ্কায় জুন ও জুলাই মাসে এসব খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। আগস্টে আবহাওয়া পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় খাদ্যপণ্যের সরবরাহ তুলনামূলক বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। ফলে সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের দাম অনেকাংশে কমে এসেছে।

চলতি বছরের আগস্টের ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরেও দাম বেড়েছে দুগ্ধপণ্যের। এ সময় দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক মান ৪ দশমিক ৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৪ দশমিক ৫ পয়েন্টে, যা আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দুগ্ধপণ্যের দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। গত আগস্টে পণ্যটির গড় মূল্যসূচক ৩ দশমিক ১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২১৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে। আর জুলাইয়ে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক মান ৭ দশমিক ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২১৬ দশমিক ৬ পয়েন্টে। সেপ্টেম্বরে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চের কাছাকাছি। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ কমায় এ সময় পণ্যটির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোয় দুগ্ধপণ্যের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষত এশিয়ার দেশগুলোয় মাখন ও পনিরের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এর জেরে দাম বেড়েছে।

এফএফপিআই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগের মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে চিনির গড় মূল্যসূচক সামান্য বেড়েছে। এ সময় পণ্যটির মূল্যসূচক ছিল ২০৪ দশমিক ২ পয়েন্ট, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৩ পয়েন্ট। গত আগস্টে চিনির গড় মূল্যসূচক ৩ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২০৩ দশমিক ৯ পয়েন্টে। এর আগে জুলাইয়ে চিনির গড় মূল্যসূচক ছিল ২০৭ দশমিক ৫ পয়েন্ট।

অন্যদিকে এ সময় আমিষপণ্যের মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭২ দশমিক ৮ পয়েন্টে। আগস্টে আমিষপণ্যের গড় মূল্যসূচক ২ দশমিক ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছিল ১৭২ দশমিক ৪ পয়েন্টে, যা গত জুলাইয়ের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কম।