বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার সংরক্ষণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: রাষ্ট্রদূত

বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার সংরক্ষণে বাংলাদেশ অবিচলভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

শুক্রবার নিউইয়র্কে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর আন্তর্জাতিক বর্ষের বৈশ্বিক উদযাপন’ উপলক্ষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের প্ল্যানারি সভায় রাষ্ট্রদূত মোমেন এসব কথা বলেন বলে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। মাতৃভাষার প্রতি বিশ্বব্যাপী মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র সংরক্ষণে বাংলাদেশের যে অটল প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা ভাষা শহীদদের মহান আত্মত্যাগ থেকে উৎসারিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের উদ্যোগের কারণেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এটা আনন্দের বিষয় যে এ বছর ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার আন্তর্জাতিক বর্ষ’ একসাথে উযাপন করা হচ্ছে। উভয় উদযাপনই ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট। ভাষা ও সংস্কৃতি ‘শান্তির সংস্কৃতিকে’ সমুন্নত রাখার নির্ণায়ক। আর এ বছর বাংলাদেশ আনীত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজুলেশন গ্রহণের ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে। সব মিলিয়ে আমরা যেন ভাষা, সংস্কৃতি ও শান্তির মেলবন্ধনে অর্জিত আমাদের ‘একতা’ মহাসমারোহে উদযাপন করতে যাচ্ছি, বলেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

বাংলাদেশে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমি ও সম্পদ সংরক্ষণে কাজ করছি। আমাদের সব জাতীয় নীতি, কর্মসূচি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের অধিকার সংরক্ষণ করেছি। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘কালচালার ডাইভারসিটি’ পুরস্কার দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা পাহাড়ি জেলাগুলোতে তিনটিসহ মোট সাতটি বিশেষায়িত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছি। যা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সব আদিবাসীর সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ঐতিহ্য ও ভাষার প্রসার ও সংরক্ষণে কাজ করছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষার সংরক্ষণ ও গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত মেধাভিত্তিক কাজ বাস্তবায়ন করে চলেছে। আমরা বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীকে নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে পাঁচটি নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রায় ১৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাতৃভাষায় শিক্ষা দিচ্ছে।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনের সভাপতি মারিয়া ফার্নান্দা এসপিনোসা গার্সেজ অনুষ্ঠানের সূচনা করেন এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস।

এছাড়া জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লিউ জেনমিন, ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আর্নেস্টো অটোনি রামিরেজ ও ‘স্থানীয় ভাষার আন্তর্জাতিক বর্ষ’ উদযাপন স্টিয়ারিং কমিটির চারজন কো-চেয়ার বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে কানাডার নর্দান ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ডের কোকোয়াকা ভাষাভাষী জনগণ তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করেন। কানাডা ও ইকুয়েডরের দুজন মন্ত্রীও সভায় বক্তব্য রাখেন। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ