বিশ্বের সেরা ধনী দেশ কাতার:১৪৩শে বাংলাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশ কাতার। আর সবচেয়ে গরিব দেশ হওয়ার ভাগ্য বরণ করেছে আফ্রিকার মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। মাথাপিছু জিডিপি ও ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও গরিব দেশ হিসেবে এই দেশ দুটিকে নির্বাচিত করেছে।

বিশ্বের ১৮৯টি দেশের এ তালিকায় বাংলাদেশ আছে ১৪৩ নম্বরে। অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে ৪৬ ধাপ সামনে আর সবচেয়ে ধনী দেশ কাতার থেকে ১৪২ ধাপ পেছনে আছে বাংলাদেশ। নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান এই তালিকায় ধরে রেখেছে।

সবচেয়ে ধনী ও গরিব দেশের তালিকা তৈরিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) হিসাব করা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারকে। তালিকা অনুযায়ী, পিপিপির ভিত্তিতে হিসাব করা মাথাপিছু জিডিপির আকার যে দেশের যত বেশি সে দেশ তত ধনী। ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদন থেকে প্রতিটি দেশের পিপিপি ডলারে মাথাপিছু জিডিপি হিসাব করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে তুলনার জন্য পিপিপির ভিত্তিতে জিডিপির আকার হিসাব করা হয়। পিপিপি হলো কোনো দেশের মুদ্রামানের এমন একটি বিনিময় হার যা চলতি বাজারমূল্য থেকে আলাদা। ধরা যাক, বাংলাদেশে ১০০ টাকা দিয়ে একগুচ্ছ পণ্য ও সেবা ক্রয় করা যায়, যা কিনতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় হয় ২ ডলার। এই হিসাবে মার্কিন ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় মূল্য দাঁড়াবে ৫০ টাকা। অর্থাৎ পিপিপিতে ১ ডলার সমান ৫০ টাকা।

ধনী দেশ নির্বাচনের ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি দেশের নাগরিকেরা আসলেই কতটুকু সম্পদশালী সেটা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা কতটুকু। মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেশি হলে ধরে নেওয়া হয় একটি দেশের নাগরিকেরা তাঁদের জীবন চালানোর প্রয়োজনীয় সব চাহিদা নিজেরাই পূরণ করতে সক্ষম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ১ লাখ ২৯ হাজার ডলার। ধনী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারলেও জ্বালানি তেলের দরপতনে গত এক বছরে কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার ডলার কমেছে। যদিও তা তালিকার দ্বিতীয় ধনী দেশ লুক্সেমবার্গের মাথাপিছু আয়ের প্রায় ২৮ হাজার ডলার বেশি।

মধ্যপ্রাচ্যের উপদ্বীপখ্যাত কাতারের অর্থনীতি জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। মাত্র ২৬ লাখ জনসংখ্যার দেশটির জিডিপির আকার ৩৩ হাজার ৩৯৩ কোটি ডলার। দেশটির রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে পেট্রোলিয়াম রপ্তানি থেকে। এ ছাড়া কাতারের বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের পাশাপাশি কাতারের অর্থনৈতিক উন্নতিতে বড় অবদান আছে বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া প্রবাসী নাগরিকদের।

কাতার কয়েক বছর ধরেই সবচেয়ে ধনী দেশ। ভবিষ্যতে তা ধরে রাখতে পারবে কি না, এটি নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশ কাতারের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এ সব দেশের অভিযোগ, কাতার মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যার সমাধান না হলে কাতারের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়বে। ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতারে এখন যে উন্নয়নকাজ হচ্ছে সে সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে এ ঘটনায়। এতে দেশটিতে কর্মরত তিন লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে।

কাতার ছাড়াও শীর্ষ দশে এশিয়া মহাদেশের আরও পাঁচটি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে ম্যাকাউ আছে তৃতীয় স্থানে, সিঙ্গাপুর চতুর্থ, ব্রুনাই দারুসসালাম পঞ্চম, কুয়েত ষষ্ঠ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নবম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া আয়ারল্যান্ড সপ্তম, নরওয়ে অষ্টম ও সান ম্যারিনো দশম স্থানে রয়েছে।

তালিকা বিশ্লেষণ করে শীর্ষ ১০ ধনী দেশের মধ্যে একটি সাধারণ মিল পাওয়া যায়। মিলটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া প্রতিটি দেশই আয়তনে খুব ছোট। জনসংখ্যাও তুলনামূলকভাবে এ সব দেশের কম। যেমন সান ম্যারিনোর আয়তন মাত্র ৬১ বর্গকিলোমিটার। দেশটির জনসংখ্যা ৩৩ হাজারের কিছু বেশি।

গরিব দেশের শীর্ষ দশের সব কটিই আফ্রিকা মহাদেশের। এক নম্বরে থাকা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের মাথাপিছু আয় মাত্র ৬৫৬ ডলার। শীর্ষ দশে থাকা বাকি দেশগুলো যথাক্রমে কঙ্গো, বুরুন্ডি, লাইবেরিয়া, নাইজার, মালাউই, মোজাম্বিক, গিনি, ইরিত্রিয়া ও মাদাগাস্কার। এর মধ্যে কঙ্গোর মাথাপিছু আয় ৭৮৪ ডলার; বুরুন্ডির ৮১৮, লাইবেরিয়ার ৮৮২, নাইজারের ১ হাজার ১১৩, মালাউইর ১ হাজার ১৩৯, মোজাম্বিকের ১ হাজার ২২৮, গিনির ১ হাজার ২৭১, ইরিত্রিয়ার ১ হাজার ৩২১ ও মাদাগাস্কারের ১ হাজার ৫০৪ ডলার।

শীর্ষ দশে থাকা লুক্সেমবার্গ, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াও আয়ের আরেকটি বড় উৎস হলো আর্থিক খাতের ব্যবসা। বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার হয়ে আসা অর্থ এই তিন দেশে সহজেই রাখা যায়।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১০ জুন ২০১৭