বেগম রোকেয়া দিবসে গুগলের ডুডল

গুগলের হোমপেজে ঢুকতেই দেখা যাচ্ছে একটি ছবি। যেখানে সাদা পোশাকে চশমা পরা এক মহীয়সী নারী বই হাতে হেঁটে যাচ্ছেন। আর তার পেছনে পেতে রাখা এক সোফায় একটি বই খোলা অবস্থায় পড়ে আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৭তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল ডুডলে আজকের দিনটি উৎসর্গ করা হয়েছে। ওই ডুডলে বেগম রোকেয়ার পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ডে ইংরেজিতে গুগল লেখাটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্দরমহলের বাইরে বেগম রোকেয়া ফুল ফুটিয়েছেন, সে দৃশ্যটিও গুগল সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গুগলে (www.google.com) গেলে কিংবা সরাসরি (www.google.com.bd) ঠিকানায় ঢুকলেই চোখে পড়ছে বিশেষ ডুডলটি। ওই ডুডলে ক্লিক করলে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূতের বেগম রোকেয়াকে নিয়ে গুগলে নানা অনুসন্ধান ফলাফল দেখাচ্ছে।

৯ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন। ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৩২ সালের এই দিন মারা যান তিনি। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

তার প্রকৃত নাম `রোকেয়া খাতুন` এবং বৈবাহিক সূত্রে নাম `রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন`। তার বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত জমিদার ছিলেন। তার মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।

রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। উনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক তিনি। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

যে সময় এ উপমহাদেশে নারীদের শিক্ষা অর্জনের কথা ভাবাই যেত না, সে সময় বেগম রোকেয়া পরিবার ও সমাজের সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে শিক্ষার্জনে ব্রতী হন। তার সেই সাধনার পথ ধরেই রচিত হয় নারী শিক্ষার পথ। তারপর দিনে দিনে প্রশস্ত হয় সেই পথ। তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশেও আজ শিক্ষা ও সব ধরনের কর্মক্ষেত্রে নারীদের সদম্ভ পদচারণা আমাদের দেশের উন্নয়নকে তরান্বিত করছে।

তৎকালীন মুসলিম সমাজব্যবস্থা অনুসারে বেগম রোকেয়া ও তার বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি। তাদের ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি তার দুই বোন রোকেয়া ও করিমুন্নেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।

১৮৯৮ সালে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় খান বাহাদূর সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তিনি ছিলেন উর্দুভাষী। তা সত্ত্বেও তিনি রোকেয়াকে শিক্ষা এবং সাহিত্য সাধনায় অনুপ্রেরণা দিতেন। ১৯০২ সালে রোকেয়া লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘পিপাসা’ রচনার মধ্য দিয়ে।

১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ মাসের মাথায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিন’ নামে একটি ইসলামি নারী সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা।

বেগম রোকেয়ার উল্লেখিত রচনাসমূহ হলো ‘পিপাসা (১৯০২)’, ‘মতিচূর (১৯০৪)’, ‘সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৮)’, ‘সওগাত (১৯১৮)’, ‘পদ্মরাগ (১৯২৪)’ ও ‘অবরোধবাসিনী (১৯৩১)’।

বেগম রোকেয়ার জন্মলগ্নে মুসলমান সমাজ ছিল নানাবিধ কুসংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা বাণী দিয়েছেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক-২০১৭ প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি রোববার বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক পারভীন হাসান।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকায় ও শাখাগুলোতে আলোচনা সভা, সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।

এছাড়া বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের পায়রাবন্দে দিবসটি পালন উপলক্ষে বেগম রোকেয়া ফোরাম দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ ডিসেম্বর ২০১৭