বেগুনে আগুন!

আসছে পবিত্র মাহে রমজান। আর মাত্র ১৭ দিন পরেই শুরু হচ্ছে রমজান মাস। আর এর আগেই ইফতারের অন্যতম কাঁচা পণ্য বেগুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম এখন ৬০-৭০ টাকা।

এ ছাড়া অন্য বেশিরভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পিয়াজ, কাঁচামরিচ, আলু ও ডিমের। তবে, মাছ ও মাংসের দাম বেড়েছে। লাগাতার ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাজারে শাক-সবজির দাম বাড়ছে বলে দাবি বিক্রেতার। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

বাজারে সবজির মধ্যে বেগুন ও পেঁপের দর বেড়েছে বেশি। বাজারে প্রতিকেজি লম্বা ও গোল বেগুন ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচা পেঁপে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাকরল। তবে, গত সপ্তাহের তুলনায় কাকরলের দাম কেজিতে ৩০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে কাকরল বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা কেজিতে।

বেগুনের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আতিক বলেন, গত সপ্তাহে এক কেজি বেগুন ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। রমজান কাছাকাছি চলে আসায় বেগুনের দাম বেড়ে গেছে। এখন এই সবজিটির দাম কমার তেমন সম্ভাবনা নেই।

পেঁপের বিষয়ে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পেঁপে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।

সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে টমেটো, লাউ, করলা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটিসহ অন্যান্য সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। যে কারণে এখনো সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে কাকরল বিক্রি করা ব্যবসায়ী মো. রবিউল বলেন, ১০০ টাকা থেকে কাকরল ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। সামনে দাম আরো কমবে। কয়েক সপ্তাহ পর দেখবেন এ সবজি ৩০-৪০ টাকা কিজি বিক্রি হচ্ছে।

পেঁপে, বেগুন ও কাকরলের দাম বাড়তি থাকলেও অন্য বেশিরভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ৩০ টাকা কেজির উপরে থাকা সবজির মধ্যে পটল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি ও ঢেঁড়স। আগের সপ্তাহেও এই সবজিগুলোর দাম এমনই ছিল।

কিছুটা কম দামের সবজির মধ্যে লাউ আগের সপ্তাহের মতোই ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। সবজিটি ২০-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙা।

এ ছাড়া আগের সপ্তাহের মতো শসা ২০-২৫ টাকা, ছোট আকারের কাঁচা মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, দাম বেড়েছে গাজরের। গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গাজরের দাম বেড়ে এখন ৫০-৫৫ টাকায়। লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাক আগের সপ্তাহের মতো ৫-১০ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ শাক। আর নতুন আসা মূলা শাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা আঁটি।

বাজারে দেশি পিয়াজ আগের সপ্তাহের মতোই ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। আর কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

এদিকে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এখন মাছ ও ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম। এটাই দাম বাড়ার কারণ। বাজারে রুই-কাতলা আকারভেদে কেজিপ্রতি ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৬০ টাকা, কই ১৬০-১৮০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৩০-১৫০ টাকা, পাবদা ৫০০-৫৫০ টাকা, মাঝারি শিং ও মাগুর ৫৫০-৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব মাছের দর কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি বলে দাবি বিক্রেতাদের।

চিংড়ির দর কেজিতে ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। প্রতিকেজি ছোট ও মাঝারি চিংড়ি বিক্রেতারা ৫৫০-৭০০ টাকা চাইছেন। ইলিশের সরবরাহ কম। ছোট ইলিশ প্রতিকেজি ৬৫০-৭৫০ টাকা, মাঝারি ইলিশ প্রতিটি ৭০০-৮০০ টাকা ও এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিটি ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বৈশাখ মাস থেকে ভরা বর্ষার আগ পর্যন্ত নদী-নালা ও খাল-বিলের মাছের সরবরাহ কম থাকে। এতে দর বেড়ে যায়। এরপর ইলিশ এলে মাছের বাজারে দর কিছুটা কমে।

বাজারে কয়েক মাস ব্রয়লার মুরগির দর কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ছিল। এখন সেটা বেড়ে ১৪৫-১৫০ টাকা হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বর্ষার শুরুর দিকে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় বলে মুরগি পালন কমে যায়। এতে সরবরাহ কমে। এ বছরও একই ঘটনা ঘটেছে।

বাজারে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। মুদি দোকানে ভালো মানের মোটা চাল এখন ৪০-৪২ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। সরু মিনিকেট চাল ৬২-৬৩ টাকা, নাজিরশাইল ৬৬-৭০ টাকা ও মাঝারি চাল ৫২-৫৪ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

এস/