ব্যবসায়ীদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত সভায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ, চাল, ডাল, লবন, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পেঁয়াজ মজুদ করে যারা সংকট তৈরি করেছে সেসব মজুদধারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হবে। সারাবছর বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে একযোগে কাজ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। রোববার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য,শিল্প, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকশেষে ব্রিফিংয়ে সরকারের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, শিল্প সচিব মো. আব্দুল হালিম, কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলামসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ব্রিফিংয়ে বলেন,বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বছরব্যাপী যে চাহিদা আছে,যে পরিমাণ উৎপাদন হয় এবং আমদানির পরিমাণ কেমন বা আমদানি মূল্য কেমন। বাজারে এর যৌক্তিক দাম কেমন হওয়া উচিত এসব বিষয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি-ভবিষ্যতে আর কোনো নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি যাতে না হয়, সে বিষয়ে আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবে আরো সতর্ক থাকবো। পণ্যের সঠিক মুল্যায়ন,উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক রেখে বাজারে মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো অবস্থাতে বাজারে পেঁয়াজের মত কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি না দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, এজন্য ভোক্তা পর্যায়ে সুলভ দামে পণ্য পৌঁছাতে সরকার ও ব্যবসায়ীরা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। কোনো ব্যবসায়ী বা সংগঠন অহেতুক কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে সংকট সৃষ্টি করলে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এফবিসিসিআই। নিত্যপয়োজনয়ি পণ্য সামগ্রীর বছরব্যাপী চাহিদা,উৎপাদন,আমদানি-মজুদ ব্যবস্থা,সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মুল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা বৈঠকে উঠে আসে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন,ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিমানে ও জাহাজে করে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এ সংকট কেটে উঠবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার বেশি চাপ দিলে বাজারে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মানুষ মোটা চালের পরিবর্তে এখন সরু চাল বেশি খাচ্ছে। এ কারণে সরু চালে বেশি চাপ পড়ায় দাম কিছুটা বাড়লেও এখন চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে পাইকারি বাজারে যে দাম তার তুলনায় খুচরা বাজারে কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা দামের পার্থক্য থাকার বিষয়ে তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এ বিষয়ে কঠোর তদারকির পরামর্শ দেন।

পেঁয়াজের মজুদধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই বাংলাদেশী। কেউ সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষ দেখছিনা। যদি কেউ পণ্যের মজুদধারী করে বাজারে পণ্যের অহেতুক চাপ সৃষ্টি করে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হবে।

তিনি বলেন, বাজারে কোনো নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি নেই। পেঁয়াজ নিয়ে সংকট হয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ বাজারে আছে। এজন্য কাদের কাছে পেঁয়াজের মজুদ ছিল,তারা কখন আমদানি করেছে, কখন ও কত টাকায় বিক্রি করেছে তা এনবিআর খতিয়ে দেখছে। এসব পণ্যে কোনো ট্যাক্স বা শুল্ক নেই। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। চালের উপর শুল্ক আছে। কারণ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার সুরক্ষাতেই সেটা করা হয়েছে। তাই ভোক্তাদের জানাতে চাই লবন তেল, চিনি, ডাল এজাতীয় নিত্যপণ্যে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না।

পেঁয়াজের চাহিদা, উৎপাদন ও মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি মো.নুর উর রহমান বলেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা আছে ২৪ লাখ মেট্রিক টন। রমজানে তা আরো ২ লাখ টন বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে দেশে যে পরিমাণ উৎপাদন হয় তার ২২ থেকে ২৮ শতাংশ,পেঁয়াজ পঁচে যায়। ফলে প্রতিবছর ৯ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। যার ৯৮ শতাংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। তবে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার শুল্ক নেই। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান