ব্যবসায়ীরা এখন ওয়ান স্টপ বিজনেস সার্ভিস চায়

রানার গ্রুপ। বাংলাদেশের অন্যতম মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুবই পরিচিত। মোটরসাইকেল ছাড়াও তারা ট্রাক ও থ্রি-হুইলার আমদানি করে দেশে বাজারজাত করছে। এই গ্রুপের উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান এম হাফিজুর রহমান খান। তিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ-আইবিএফবিরও প্রেসিডেন্ট। দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সমস্যা, করণীয় এবং অটোমোবাইল খাতের নানা দিক নিয়ে আজকের বাজারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। তাঁর কথোপকথন, তাঁরই জবানিতে অনুলিখন করে ছাপা হলো আজকের বাজারের পাঠকদের জন্য।

ব্যবসায়ীরা এখন ওয়ান স্টপ বিজনেস সার্ভিস চায়
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ-আইবিএফবি। আমি প্রথমে আইবিএফবি সম্পর্কে বলি। এটি ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন, ব্যবসা করতে গেলে যেসব অসুবিধা তৈরি হয়, সেগুলো দূর করার জন্য এই সংগঠন মূলত প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয় সরকারকে। এটাই হচ্ছে আইবিএফবির মূল কাজ। এই আইবিএফবিতে কিন্তু ভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেন যাঁরা, তাঁরাও এই সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। এ ছাড়া সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা, বিভিন্ন বিশবিদ্যালয়ের প্রফেসর, তাঁরাও যুক্ত আছেন এই সংগঠনে। আমাদের মূল কাজ হলো রিসার্চ করা। বের করা, সরকারের যে নিয়মকানুন, নীতিমালাগুলো আছে, সেগুলোর আপডেট করা। পুনরায় নীতিমালা তৈরি করা।

সরকারের বহু নীতি, কোনোটা ৪০ বছর আগে, কোনোটা ২০ বছর আগে, এখনকার যুগের সাথে সেটা আর খাপ খাচ্ছে না। এগুলোকে আইডেন্টিফাই করা এবং কী কী পরিবর্তন আনা উচিত, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া। এই মূল কাজটা আমরা করে যাচ্ছি। এ-জাতীয় অর্গানাইজেশন কিন্তু বাংলাদেশে নেই। যেসব ব্যবসায়ী অর্গানাইজেশন আছে যেমন বিজিএমইএ, বিটিএমইএ; তারা কিন্তু তাদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের সমস্যা আইডেন্টিফাই করছে, ওরা কিন্তু লেবার নিয়ে কোনো কাজ করছে না। আবার লেবার নিয়ে যারা আছে, তারা কিন্তু প্লাস্টিক নিয়ে কাজ করছে না। আর আমরা করছি সবকিছু নিয়ে। তো যখন একটা অর্গানাইজেশন বাইরে থেকে লেবার নিয়ে তাদের কথা বলে, তখন ওরা মনে করে যে নিঃস্বার্থে কথা বলেছে। একটা অর্গানাইজেশন যখন লেবারের সমস্যার কথা বলে, তখন কিন্তু অনেক রিলায়েবল হয় সরকারে কাছে।

যে কারণে অতীতে সরকার আমাদের অনেক সুপারিশের মূল্য দিয়ে তাদের নীতিতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। এ কারণে আমরা খুব খুশি এবং আমাদের এই সাকসেস আমাদের উদ্বুদ্ধ করছে আরও বড় আকারে কাজ করার। আমরা বিভিন্ন রকমের কাজ করে যাচ্ছি। যেমন রিসেন্টলি কাজ করছি যে এখন বাংলাদেশের ইনভেস্টরদের বিদেশে ইনভেস্ট করার ক্যাপাবিলিটি আছে, আমরা কেন বিদেশে ইনভেস্ট করব না? বিদেশ থেকে আয় করে আমরা দেশে আনব, দেশের অর্থনীতি তখন আরও বেশি সচল হবে। এখন আমরা এক্সপোর্ট এবং আমাদের রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করছি। অথচ কোনো কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে এসে আয় করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ওই জায়গায় যাওয়ার সময় এসে গেছে, এটাকে তুলে ধরা। আর একটু নীতিমালার পরিবর্তন আনা। বাংলাদেশ ব্যাংককে আমরা রিকোয়েস্ট করেছি, তোমরা আর একটু লিবারেল হও। বাইরে ইনভেস্ট করতে দাও। সরকারও করছে, আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে এগিয়ে আসছে। তো এখন সময় এসেছে আমাদের শুধু দেশেই ইনভেস্ট না, বাইরেও ইনভেস্ট করার মতো ক্যাপাবিলিটি তৈরি হয়েছে।

আমরা যেরকম আমন্ত্রণ জানাচ্ছি বিদেশি ইনভেস্টরদের এ দেশে আনার, সেই রকম এ দেশের ইনভেস্টরদের মধ্যে যাদের ক্যাপাবিলিটি হয়েছে, তারাও বাইরে যাবে। এগুলো নিয়ে বেশ কিছু সেমিনারও কিন্তু হয়ে গেছে। এ-জাতীয় কাজ আমরা করছি এখন। তো এটাই হচ্ছে আইবিএফবির মূল কথা। আমরা ১১ বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছি। এটা খুব বেশি ভিজিবল না, তবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি দেশের ব্যবসায়ী সমাজের উন্নয়নের জন্য।

ওয়ান স্টপ বিজনেস সার্ভিস
আমরা রিসেন্টলি কাজ করছি ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে। মার্চের ৮ তারিখে একটা সেমিনার আছে। আমরা বলছি ওয়ান স্টপ সার্ভিস। ব্যবসায়ীরা কিন্তু বিভিন্ন প্রকার প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারি লেভেলে হচ্ছে। আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসটা কী এবং কী দেওয়া উচিত এখান থেকে, কোন কোন মন্ত্রণালয়ে কী অ্যাড করতে হবে এটাও ঠিক আমরা জানি না, বুঝি না। আবেগের বশে বলছি, রূপ দিতে পারছি না। আমরা এটা নিয়ে কিন্তু আলোচনার দুয়ার খুলেছি। ওয়ান স্টপ সার্ভিস কী এটা বোঝা। অন্য দেশ কেমন ওয়ান স্টপ সার্ভিস দিচ্ছে, কীভাবে দিচ্ছে এবং এটি ইমপ্লিমেন্ট করার জন্য কী করা দরকার, তা নিয়ে কিন্তু আমরা অলরেডি কাজ শুরু করেছি।

ওয়ান স্টপ সার্ভিস বলতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে আমি যখন ব্যবসা করতে যাব, তার ট্রেড সাইসেন্স লাগে, ইলেক্ট্রিসিটি লাগে, আমার গ্যাসের লাইন লাগে, আমার পরিবেশ সার্টিফিকেট কিংবা আমার ল্যান্ডের বিভিন্ন রকম অনুমোদন নিতে হয়। সেগুলোর জন্য আমি একটা অপশন রাখব। আমি এক জায়গায় যাব। আমার যা যা প্রয়োজনীয় চাহিদা তা আমার একটা অফিসই করে দেবে। আমাকে বিভিন্ন অফিসে যেন ঘুরতে না হয়। এটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের চাহিদা।

আমার এ-জাতীয় সমস্যাগুলো আছে। তো ইলেক্ট্রিসিটি কানেকশন কে দেবে, গ্যাসের কানেকশন কে দেবে, পানির কানেকশন কে দেবে, আমি ট্রেড লাইসেন্সটা কীভাবে পাব। আমাকে এখানে ইন্ডাস্ট্রি করতে পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন দেবে কি দেবে না এই জিনিসগুলো যদি এক জায়গা থেকে, এক অফিসে গিয়ে সব সমাধান পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের চাওয়া এটা যে আমি এত দুয়ারে দুয়ারে ঘুরব না। কিন্তু এই চাওয়াটা কীভাবে পূরণ হবে? সরকারও খুবই আগ্রহী ইয়েস, যে এ রকম কিছু একটা হওয়া উচিত, কিন্তু বাস্তব অর্থে হচ্ছে না। কেন, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কিন্তু এই ঢাকা সিটির মেয়র। মেয়রের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। মেয়র বললেন, বিদ্যুৎলাইন দাও, তারপরও পাবে না। তাঁর অফিস কানেকশন দিতে পারে না। মেয়র রাস্তা রিপেয়ার করে দিয়ে গেলেন, ওয়াসা পরদিন এসে রাস্তা কেটে দেবে। এ রকম সমন্বয়হীনভাবে চলছে প্রায় সবকিছু। মেয়রের হাতে ট্রাফিক কন্ট্রোল নাই, যানজট নিয়ে কিছু করতে পারে না, অলমোস্ট একই সমস্যায় ব্যবসায়ীরা ভুগছেন। সমস্যাটা কিন্তু দূর করা প্রয়োজন।

মডেল কী হবে
আমরা মডেলটা তৈরি করার জন্য প্রথম আলোচনা শুরু করেছি। আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মতামত নিচ্ছি। নেওয়ার প্রথম ধাপে, ৮ তারিখে আমরা মোটামুটি ব্যবসায়ীদের বলতে চাই, তোমরা বলো, হোয়াট ইজ ইওর প্রবলেম? হোয়াট ইজ ইউর নিড? সেখানে কিন্তু আমরা বিশবিদ্যালয়ের প্রফেসরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি, তাঁদের মতামতের জন্য। এটা হচ্ছে আমার চাওয়া। আপনার তরফ থেকে বাধা থাকবে না। এটা দেওয়া যাবে না, এই এই কারণে দেওয়া যাবে না, তখন না আলোচনাটা শুরু হবে। তবে এটা যদি একটা সরকারি লেভেলে আলোচনা হয়, অনেক সময় বাস্তবভিত্তিক হয় না। আমরা ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের এক জায়গায় বসাতে চাই। বলব, প্রথমে আপনারা শোনেন এবং আপনারাও মতামত দেন; তারপর আমরাও একটা সমাধানের পথ বের করি, এই বের করার প্রক্রিয়াটা নিয়ে কাজ করছি।

আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস কী
আসলে এ রকম ওয়ান স্টপ সার্ভিস মাত্র কয়েকটা দেশ করেছে। আমরা দেশগুলো ভিজিট করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে মালয়েশিয়া আছে। আমরা নিজেরা আলোচনা করার পরে বুঝতে পারব, এই দেশগুলো কীভাবে করেছে। তাহলে আমাদেরটা আমাদের মতো হবে না কেন? আমার প্রথম চাওয়াটা কী, সেটাকে লিস্টেড করতে চাচ্ছি। তারপর অন্যরা কীভাবে এটাকে ইমপ্লিমেন্ট করেছে, সেটা দেখব। তারপর আমরা পরামর্শ দেব যে এইভাবে এই করা উচিত এবং এটা সাকসেসফুলি করেছি।

তাহলে আমরা একরকম বলতেই পারি যে আইবিএফবি রিসেন্টলি দুটি বড় কাজে হাত দিয়েছে, একটা হলো বিদেশে বাংলাদেশিরা কী করে বিনিয়োগ করে ফরেন কারেন্সি আনতে পারে। আরেকটা হলো, এই যে ব্যবসায়ীরা সব রকমের ঝামেলা কমিয়ে আনার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চাচ্ছে, সেটা নিয়ে ব্যাপক কাজ হচ্ছে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব
আসলে যেকোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধিই কিন্তু নেতিবাচক। এতে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট পড়ার কোনো কারণ নেই। যেকোনো জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি, তা গ্যাস হোক, বিদুৎ হোক, ম্যাটেরিয়াল হোক প্রতিটির মূল্য বৃদ্ধির একটি নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট আছে। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধিটা হলো কেন? সরকার যেটা বলছে, সরকারের সাথে আমি একমত। সরকার এ ব্যাপারে ভর্তুকি দিতে চায় না। ভর্তুকি কেন সরকার দেবে? তবে সরকারের এটি নিয়ে বিজনেস করাও উচিত না। ভর্তুকি দেওয়া উচিত না। কিন্তু বৃদ্ধি করতে হচ্ছে ভর্তুকি কমানোর জন্য। এখানে আসলে প্রশ্ন এসে যাচ্ছে যে এই ভর্তুকি কমানোর যে প্রক্রিয়া, সেখানে ইনএফিসিয়েন্সির কস্ট আসলে বড় কথা। সেটা শুধু সরকারের নয়, কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কিন্তু এই জিনিসগুলো আছে।

আমাদের ইনএফেসিয়েন্সির কস্ট আমাদের গ্রাহকেরা বহন করছে। এটা দূর করার জন্য যে নলেজ লেভেল দরকার, যে ট্রেনিং দরকার, সেই জায়গায় এখনো আমরা যেতে পারিনি। চেষ্টা করছি, গ্র্যাজুয়েলি যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের প্রসেসটা খুব স্লো। এই নলেজ লেভেল ডেভেলপ করার জন্য যে ইনস্টিটিউশন ডেভেলপ করা দরকার, সেখানেও কিন্তু আমাদের আগ্রগতি খুব কম। সরকারি বলেন আর বেসরকারি বলেন, অদক্ষতার ক্ষতি কিন্তু জনগণকেই বহন করতে হবে। নো ওয়ে। এখন এই ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এর জন্য চেষ্টা করতে হবে। আমার এক কিলোমিটার রাস্তা করতে যদি এক লক্ষ টাকা লাগে, অথচ আর কেউ ওই এক কিলোমিটার রাস্তা ৭৫ হাজার টাকায় পারে, তাহলে আমার এই ২৫ হাজার টাকা যে লস হচ্ছে, সেটা কিন্তু আমার ইনএফিসিয়েন্সির জন্যই লস হচ্ছে। আমার জ্ঞানের অভাবে লস হচ্ছে। এটা কিন্তু জনগণই বহন করছে। গ্যাসের দাম, সেটাও জনগণকে বহন করতে হবে, কিন্তু আলরেডি এটা আলোচনার মধ্যে এসেছে যে আমরা যদি এফেসিয়েন্ট হতাম, তাহলে মূল্যটা বাড়াতে হতো না।

আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে সরকারের প্র্যাকটিসটা হওয়া উচিত ছিল, তারা যেকোনো জিনিসের, এ ধরনের যা আমাদের অর্থনীতিতে সরাসরি ইমপ্যাক্ট ফেলে, বিজনেস বডিগুলোর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে ভালো হতো। আলোচনা যে হয়নি, সেটাও আমি বিশাস করি না। এটার যে সিস্টেম আছে, যেভাবে মূল্য বাড়ানো হয়, সেখানে এ বিষয়ে কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা করে ফলটা কী? সরকার যে জিনিসটা চাচ্ছে যে আমি ভর্তুকি থেকে নিজেকে উইথড্র করব। আমি এটা সাপোর্ট করি। সরকার কেন ভর্তুকি দিতে যাবে? এটাকে নীতিগত দিক থেকে আমিও সাপোর্ট করি। কিন্তু আমি ভর্তুকির যে ইনএফিসিয়েন্সির কস্ট লুকিয়েছি, তার মূল্যটা বের করতে হবে। এই জায়গার ভেতর আমার কিছু অবজারভেশন আছে, আপত্তি বলব না। যদি ভালো ও দক্ষ ম্যানেজমেন্ট দিয়ে করা যেত, তাহলে ভালো হতো। দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। ওই জায়গাটাতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত যে শুধু আমি যদি এটাই করি যে ভর্তুকি আমি দেব না, কিন্তু আমি আমার কস্টিংটার দিকে তাকাব না, তা-ও কিন্তু হয় না। ভর্তুকি আমি নীতিগতভাবে সাপোর্ট করি না, সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত নয়। সরকার কেন এখানে ভর্তুকি দেবে? তার সাথে সাথে এটাও বলি, ইনএফিসিয়েন্সির যে কস্ট, সেটাও যেন জনগণকে বহন না করতে হয়। আমার টোটাল ম্যানেজমেন্টে কোথায় কোথায় ফল্ট আছে, আমার ম্যানেজমেন্ট আরও কী করলে আমি আরও বেশি এফিসিয়েন্ট হতে পারব। কম মূল্যে আমি এটা উৎপাদন করতে পারব।

শিল্পনীতি ভাবনা
শিল্পনীতি বলতে কয়েকটা শিল্পের আলাদা করে কিছু নীতিমালা নিয়ে আমরা কাজ করছি। টোটাল শিল্প নিয়ে বলতে একটা হিউজ ব্যাপার সমুদ্রের মতন। আমরা অটোমোবাইল শিল্প নিয়েও কিছুটা কাজ করেছি। কিন্তু এই যে রিকমেন্ডশনগুলো আমরা তৈরি করেছি, সেই রিকমেন্ডশনগুলো সরকারি পর্যায়ে খুব একটা আলোর মুখ দেখেনি। এই জায়গায় আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারকদের মধ্যে যে বিরোধ আছে, ওই দ্বন্দ্বগুলো কিন্তু দূর হয়নি। আমদানিকারকদের এখন পর্যন্ত মোটিভেট করতে পারিনি, সম্ভব হয়নি যে তারা ইনভেস্টমেন্টে আসুক।

আমদানিকারকেরা বারবার আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যারা প্রস্তুতকারক, তারা বলছে যে না এই দেশে উৎপাদনের মাধ্যমে মূল্য কমানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে এখানে সুযোগ আরও বেশি তৈরি হতে পারে এবং এ দেশে যেন ব্র্যান্ড তৈরি হয়। কিন্তু আমদানিকারকেরা বলছে, না এটা ডিফিকাল্ট পথ, এখনো আমাদের বাজারটি ওই পর্যায়ে যায়নি। আমরা আমদানি করতে চাই এবং আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজার বৃদ্ধি করুন। এই কনফ্লিক্টের কারণে এখনো পর্যন্ত সরকারও ওই পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্বে তারা আছে। তারাও কোনো রকম শক্ত ডিসিশন দিতে পারেনি। সে কারণে অটোমোবাইল শিল্পটা এখন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে নতুন ইনভেস্টমেন্ট আসছে না।

যদি এটা মোটরসাইকেলে সুরাহা হয়ে যেত, তাহলে থ্রি-হুইলার আসত, তারপর ফোর-হুইলার। কার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে চলে যাওয়া যেত। এই প্রক্রিয়াগুলো খুব স্লো হওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এর সুরাহা হবে। সরকার নীতিগতভাবে চাচ্ছে এ দেশে ইন্ডাস্ট্রি হোক। এটাতে নীতিগত সমর্থন আছে। তবে নীতিটাকে বাস্তব রূপ দিতে কোনো পেপার তৈরি হয়নি। কোনো দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সরকার এখনো সাকসেসফুল হয়নি। প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। যেহেতু আমি অটোমোবাইল ব্যবসার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত, আমি বহু মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করেছি, আস্তে আস্তে এই ক্লাউডটা দূর হচ্ছে।

আইবিএফবির দৃষ্টিতে চ্যালেঞ্জ
আমাদের যদি এখন ইনভেস্টমেন্টগুলো দেখেন, সব সেকশনে কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি। এই এগিয়ে যাওয়ার যে গ্রোথ রেট, এটাতে আমি সেটিসফায়েড না। এখন প্রশ্ন আসবে যে হ্যাঁ আমার গ্রোথ হয়েছে এক ভাগ এবং আমার ওয়ান অ্যান্ড হাফ হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু গ্রোথ আছে, সেহেতু এটা অ্যাপ্রিসিয়েট করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে, অন্য সবার পক্ষ থেকে, সবার সহযোগিতার মাধ্যমে কিন্তু এই গ্রোথটা সম্ভব হয়েছে। কৃষিতে যারা উৎপাদন করছে, সেই কৃষকের পার্টিসিপেশন আসে। সবাই কিন্তু এগিয়ে এসেছে এই দেশটাকে গড়ার জন্য।

এখন আমাদের গ্রোথটা যেভাবে চলছে, ফারদার কী হওয়া উচিৎ, আমাদের কতটুকু গোছানো উচিত এবং আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব এটাই মূল ভাবনা আমাদের সবার। এটা আইডেন্টিফইডও বটে। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সব সময়। প্রথমে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখব। চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতু সরকার করছে, তা-ও তারা এই সেতু করতে গিয়ে সমস্যা ফেস করেছে। এ রকম আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সরকার চাইলে ইচ্ছামতো সব করতে পারে না। কিন্তু যেভাবেই হোক, আমাদের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।

এখন পর্যন্ত যে ফোর লেনের রাস্তাগুলো হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে যে ফোর লেন ইজ নট সাফিসিয়েন্ট এবং এই হাইওয়েগুলো ঠিক হাইওয়ে হয়নি। এর সঙ্গে বাজার আছে, রাস্তার মধ্যেই গাড়ি পার্ক করে। হাইওয়ে থেকে বাসগুলো যাত্রী ওঠানো-নামানো করছে। মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে। হাইওয়ের গুণগুলো হাইওয়ের মধ্য নেই। আমাদের রিয়েল হাইওয়ে বানাতে হবে। ঢাকা-চিটাগাং আসতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগার প্রশ্নই আসে না। আপনি বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গেলে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা না।

বিদ্যুতের অনেক কাজ হচ্ছে। এখন কিন্তু অনেক কোম্পানি চলে আসছে। যেহেতু বিদ্যুৎ অ্যাভেইলেবল হয়েছে। রিকোয়ারমেন্ট আরও বেড়ে গেছে, এটা আরও বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। দেশে অর্থনৈতিক জোন তৈরি হচ্ছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। যত্রতত্র কোম্পানি হবে কেন? কৃষিজমি নষ্ট করে কেন কোম্পানি হবে? কৃষিজমি নষ্ট করে কেন বাসস্থান হবে? এই প্রক্রিয়াগুলো কিন্তু শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। এখানে অর্থনৈতিক জোন যদি হয়, গ্যাস-বিদ্যুতের লাইন যদি নিতে পারি। গ্যাসের জন্য এলএনজি আসছে। এলএনজির মাধ্যমে গ্যাস আসবে। এলএনজি তো কস্টলি হবে। এই কস্টটা আমাকে নিতে হবে। এখান থেকে গাসের দাম বাড়ানো। সরকার যেটা বলেছে। তো এই অবকাঠামোগুলো হচ্ছে। এটা যত দ্রুত হবে, জিডিপিতে আপনার গ্রোথ তত বেশি হবে। তো এগুলোতে এক্সপার্টাইট করার জন্য সরকারে যে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা-ভাবনা আছে, এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েই সরকারকে কাজ করতে হবে।

সরকারের কাছে আইবিএফবির প্রত্যাশা
আইবিএফবির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ চাওয়া নেই। আইবিএফবি সরকারের কাছে চায় তা নয়। আইবিএফবি ব্যবসায়িক পরিবেশটাকে ইম্প্রুভ করার জন্য কাজ করছে। যেমন ব্যবসায়ীরা ট্যাক্স, ভ্যাট এগুলো সঠিকভাবে দিলে তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে নৈতিকতার মূল্য বাড়বে। ব্যবসায়ীরা দেশের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করবে। ব্যবসায়ীদের সিএসআর অ্যাকটিভিটিসগুলো ভালো হবে, যা দেশের উন্নয়নে, সমাজের উন্নয়নের কাজে লাগবে। এগুলোই সরকারের কাছে চাইব।

আর একটা পার্ট আমি সরকারের কাছে চাইব। সরকার দাও, সরকার দাও; আর আমি আমার উন্নয়ন করব না তা তো না, সেগুলো নিয়ে কিন্তু আমরা কাজ করি। আমরা ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়ে কাজ করি। এ নিয়েও সেমিনার করেছি। কীভাবে ব্যবসায়ীরা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, তার ব্যবসার মধ্যে নৈতিকতা আনবে; সেটা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করি প্রতিনিয়ত। যাতে করে তারা দক্ষ হয়।

আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে এন্টারপ্রেনার ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট আমরা তৈরি করব। এ দেশকে ব্যবসার ক্ষেত্রে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের তা করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি, জায়গা দিন, যাতে ইনস্টিটিউটটা করতে পারি। এটার জন্য অন্য আরও চেম্বার বা ইনস্টিটিউট আছে, তার সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।

এফবিআইবি-এফবিসিসিআই সম্পর্ক
এফবিসিসিআইয়ের সাথে আমরা সব সময় কাজ করি বা করছি। এফবিসিসিআইতে যেহেতু কোনো গবেষণা পরিষদ নাই। গবেষণাকেন্দ্র আছে, তা-ও খুব একটা অ্যাক্টিভ না। আমরা এফবিসিসিআইয়ের সাথে কথা বলেছি যে তাদের রিসার্চ ইনস্টিটিউট হিসেবে কাজ করতে চাই। আমরা এ ব্যাপারে আগ্রহী। তবে এফবিসিসিআই যদি আগ্রহী হয়, তাহলে আমরা চুক্তিবদ্ধ হতে পারি।
রানার মোটরসাইকেল

রানার গ্রুপকে মানুষ বেশি চেনে মোটরসাইকেলের জন্য। রানার অটোমোবাইল লিমিটেড দিয়েই রানার গ্রুপের যাত্রা শুরু। রানার অটোমোবাইল লিমিটেড মোটরসাইকেল আমদানির মাধ্যমে তাদের ব্যবসা শুরু করে। পরে আমরা মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বল শুরু করি। তারপর আমরা মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের দিকে যাই। তো এই প্রক্রিয়াটায় যখন গেছি, আমার মনে হয়েছে যে মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচার ছাড়া বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের মূল্য কমানো সম্ভব না।

যেসব দেশ আমদানি করে, তাদের দুটি কারণে মূল্য বেশি হয়। এক. ওই দেশের সরকার তাদের ওপর ডিউটি আরোপ করে, তাদের আয়ের জন্য। আর দ্বিতীয়ত, যারা আমদানি করে, তারা কিন্তু সুযোগ বুঝে, দেশের বাজার বুঝে তাদের জিনিসের মূল্য বেশি নেয়। তারা যে দামে আমদানি করে, তার থেকে বেশি দামে বিক্রি করে। তারা ভাবে যে সুযোগ আছে বিজনেস করার, আয় করার, তাহলে কেন করব না? এ কারণে মোটরসাইকেল যখন দেশে তৈরি হবে, তখন কম্পিটিশন আসবে মূল্য কমানোর। তখন সবাই চেষ্টা করবে কত কম মূলে জনগণের কাছে আমরা আমাদের পণ্যটা দিতে পারব।

দেশে যদি কোনো প্রোডাকশন ইউনিট হয়, তাহলে লাভের দু-তিনটা দিক তৈরি হয়ে যায়। এক. জনগণ কম দামে মোটরসাইকেল পেতে পারে। দুই. অনেক শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পায় এই পণ্যটার কারণে। যখন কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মদক্ষ হয়, তখন ফরেন কারেন্সি অত বেশি লাগে না। শুরু করার জন্য কিছুটা ফরেন কারেন্সি লাগে। এবং রপ্তানি যদি করতে পারে, তাহলে বিদেশি অর্থ আসার একটি সুযোগ চলে আসে। অনেক ধরনের সুযোগ আছে, এটা দেশকে জিডিপি আর্নিংয়ের দিকে নিয়ে যাবে। তো সবাই জানেন, বোঝেন এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তো ইমপ্লিমেন্ট যারা করবে, তাদের মধ্যে সব সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে।

বিজনেস যারা করে, তারা একটু স্বার্থপর হয় সব সময়। তারা সব সময় নিজের লাভ এনসিওর করে। তারা ভাবে যে পুঁজি বিনিয়োগ করবে,পুঁজিটা কত দিনে রিটার্ন নিতে পারে তার গ্যারান্টি চায় সব সময়। এই গ্যারান্টিটাই অনেক সময় রক্ষণশীল স্টেপগুলো নিয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশে আমি যেটা অবজারভ করেছি, তারা বাধ্য করছে বিজনেসম্যানদের এসব জায়গায় আসতে। ভারত এর খুব ভালো একটা উদাহরণ। তারা বিদেশি বড় বড় ব্র্যান্ডকে বলছে, আমার দেশে এসে তৈরি করো। তুমি ইমপোর্ট করে আমার দেশে বিক্রি করবে সেটা হতে দেব না। তোমাদের আমার দেশে এসে তৈরি করতে হবে। তুমি ইমপোর্ট করে বিক্রি করবে, এর ডিউটি আসবে হাই। আর তুমি যদি আমার দেশে তৈরি করো, তাহলে আমি তোমাকে সুযোগগুলো দেব। তো তারা আসছে, পণ্য তৈরি করছে। যারা নির্মাণ করছে, তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। আর এ কারণে কিন্তু ভারতে খুব কম দামে মোটরসাইকেল পাওয়া যাচ্ছে। সেই তুলনায় দেশে দাম বেশি। এই নীতিমালাটা আমাদের দেশে এখনো প্রণয়ন হয়নি।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান
মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা কিন্তু সারা দুনিয়ায় অল্পই কটা টিকে আছে। যারা মোটরসাইকেল বানায়, তাদের মধ্যে জাপানের চারটা প্রতিষ্ঠান আছে। তারা টেকনোলজি নিয়ে ভারতে এসেছিল। ভারতে কিন্তু আরও চারটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশে যদি দেখি, তাহলে এখানে চার থেকে পাঁচটা প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। এখন সারা দুনিয়ায় ১২-১৪টি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল বিজনেসের পেছনে আছে। এরাই মেজর প্লেয়ার, আর কিছু স্মল প্রতিষ্ঠান থাকবে, এটা সব দেশেরই নিয়ম। কিছু ছোট-বড় তো থাকবেই।

দেশে মোটরসাইকেলের চাহিদা
গত বছরের কথা যদি বলি, আড়াই লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। সব প্রতিষ্ঠান মিলে। আমাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ লাখে পৌঁছে গিয়েছিল। তারপর বাজার একটু নেমে গেছে। এটা একটা স্বাভাবিক ট্রেন্ড। মার্কেট ওঠানামা করবেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন কারণে মার্কেট কমে গিয়েছিল। তবে বাজার আবার ফিরে এসেছে।

আমাদের মোটরসাইকেল প্রজেক্টে ১১% মার্কেট শেয়ার আছে। আমরা গ্র্যাজুয়েলি মার্কেট শেয়ার বাড়ানোর জন্য কাজ করছি এবং ইনশাল্লাহ সফল হব। আমার গবেষণায় আছে কারা মার্কেট শেয়ার কতটুকু করছে। বেশি এখন বাজাজ। আমদানি করা বাজাজ মোটরসাইকেল সবচেয়ে বেশি মার্কেট করছে। তারা এখানে অ্যাসেম্বল করে, আমদানির পরও। আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারকদের মধ্যে মূলত ট্যারিফ বা ডিউটিতে ডিফরেন্টশিয়েটের জায়গাটা কোথায়? ডিফারেন্স আছে, আমদানি করা জিনিসের জন্য ডিউটি, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি এই জিনিসগুলো আছে।

যারা তৈরি করে তাদের ‘র’ ম্যাটারিয়ালসের ডিউটি কম্পারেটিভলি কম, কিন্তু ডিফারেন্সটা এক বছর আগে ছিল অনেক বড়। ডিউটি ছিল ৪৫% আমদানিকারকদের জন্য। সেটাকে কমিয়ে গত বাজেট করা হয়েছে ২০%, কিন্তু প্রস্তুতকারকদের ক্ষেত্রে যে ভ্যাট ছিল, সেটাকে রহিত করে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাটের অব্যাহতি ছিল প্রস্তুতকারকদের জন্য। এ জন্যই তো ভ্যাট দিতে হচ্ছে, এটা বেড়েছে। গত বছরের সাথে আমি তুলনা করছি, তার আগে ভ্যাটটা প্লাস হয়েছে ২৫% প্রস্তুতকারকদের জন্য। আর আমদানিকারকদের জন্য ডিউটি কমে গেছে। এ জন্য চ্যালেঞ্জটা আরও বড় হয়ে গেছে। তো প্রস্তুতকারীরা কিন্তু আরও বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে। তারা এখন ব্যাকফুটে চলে এসেছে। এখন প্রস্তুতকারক বা তাদের গ্রোথ ধরে রাখতে পারবে কি না, এটাও কিন্তু একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রস্তুতকারক হিসেবে রানার অটোমোবাইল এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ফেস করছে। আমরা এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি, কীভাবে আরও বেশি কাস্টমারের কাছে যেতে পারব কম মূল্যে।

বাজেটে প্রত্যাশা
বাজেট আলোচনার আগে কিন্তু মোটরসাইকেল নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা হচ্ছে। এনবিআরের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে মিটিং হয়েছে। এনবিআরের অন্যান্য সদস্যের সাথে আলোচনা হয়েছে। তো তারা আমাদের এই অসুবিধাটা উপলব্ধি করেছেন। আমার বিশ্বাস, এই সরকার খুব আন্তরিক। দ্রুত সরকারের মতামত আমরা পাব। একটা পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি। আমরা চাচ্ছি, যারা আমদানিকারক তারাও তৈরিতে আসুক। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়ে যাক, সবাই একই ধরনের সুবিধা ভোগ করব। তাহলে এই অসুবিধাটা আর থাকবে না।

অটোমোবাইল শিল্পে কর্মসংস্থান এবং সামনের দিনের অবস্থা
সেক্টরটার কর্মসংস্থান শুধু তৈরির সাথে জড়িত না। সংখ্যাটা হবে তৈরির সাথে যারা যুক্ত আছে তারা, এর সার্ভিসে যারা যুক্ত আছে তারা, এর বিক্রির সাথে যারা যুক্ত তারা, এর পার্টস নিয়ে যারা ব্যবসা করছে তারা। এটা একটা বড় জনগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত। আপনি রাস্তার পাশে ছোট ছোট অনেক ওয়ার্কশপ দেখবেন, যারা মোটরসাইকেল মেরামত করছে। সব জায়গায় তিনজন-চারজন কাজ করছে এবং তাদের রুটিরুজি কিন্তু এখান থেকেই হচ্ছে। তো এ রকম হাজার হাজার মোটরসাইকেল মেরামতের ওয়ার্কশপ আছে সারা বাংলাদেশে। ছড়ানো-ছিটানো। একবার লিস্ট করেছিলাম, যার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।

আর যদি পার্টসের দোকানের কথা বলেন, তাহলে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার দোকান আছে। ডিলার নেটওয়ার্ক যদি বলেন, সারা বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বিক্রি করে এ রকম দোকান আছে ২ হাজারের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে কিন্তু বিপুল জনগোষ্ঠী যুক্ত আছে। এটাতে যত বেশি গ্রোথ আসবে, তত বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তো আমি বারবার বলি, আমরা তৈরির মাধ্যমে যদি স্বল্পমূল্যে জনগণের হাতে মোটরসাইকেল দিতে পারি, এর সংখ্যাটা আরও বাড়বে। আমাদের দেশের ইকোনমি যেভাবে গ্রোথ করছে, গ্রামের ইকোনমি যেভাবে বাড়ছে, গ্রামের আর এমন কোনো ভেহিক্যাল নেই, যা এত সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারে। গ্রামে এখনো মোটরসাইকেল খুবই পপুলার।

রানার মোটরসাইকেল অন্যদের থেকে আলাদা। আমাদের প্রথম চাওয়া যে আমরা স্বল্প মূল্যে, অ্যাফোর্ডেবল মূল্যে কাস্টমারদের কাছে মোটরসাইকেল পৌঁছে দেব। এই চাওয়া নিয়ে কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি প্রথম থেকেই। দুই নম্বর হলো, আমরা বলছি যে এই সেবাটাকে তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। একটা অটোমোবাইলে কোনো সমস্যা হতেই পারে, সমস্যাটা দ্রুত সমাধান করা, সার্ভিসটা তাদের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া, তাদের খুশি করা এটাই কিন্তু মূল কাজ। আমাদের দায়িত্ব জনগণের কাছে তাদের সাধ্যের মূল্যে একটা বাহন দেওয়া।

সে মনে করছে, আমি এই মূল্যে পেলে ভালো হতো, আমরা তার চাওয়ার মূল্যে তাকে সেটা দিতে চাচ্ছি। এটাই হচ্ছে আমাদের কাজ। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু অন্যদের সাথে আমাদের পার্থক্য এটাই যে তারা এখন পর্যন্ত বেশি করে পণ্য তৈরিতে আসছে না। তারা বলছে, আমদানি করে আমরা এই চাহিদাটা পূরণ করব। আমরা বলছি, না, আমরা তৈরি করে এই চাহিদা পূরণ করব। এই ডিফারেন্সটা আমরা তৈরি করেছি। আমরা সফল হয়েছি। অন্যরা এখন বুঝতে পেরেছে। তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে তারাও কিন্তু তৈরিতে আসছে। বাংলাদেশে রানারের মোটরসাইকেল সবচেয়ে কম দামে আর কেউ দিতে পারছে না। আমাদের থেকে স্বল্প মূল্যে মোটরসাইকেল আর কারোর নাই। এটা একেবারে নিশ্চিত করে বলা যায়। এবং আমরা মাত্র ৪০ হাজার টাকায় মোটরসাইকেল দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আমরা নানা কারণে মনে করি যে ওই মোটরসাইকেলগুলোর রিসেল ভ্যালু ভালো, ওটা বেশি দিন টেকে। এই জায়গাটায় রানার মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের খুশিটা কী? ক্রেতা বা জনগণকে দোষারোপ করে কোনো লাভ হবে না। এই জিনিসটা তৈরি করতে হবে আমাদের। এটা আমাদের দায়িত্ব। যারা আমাদের থেকে বেশি বয়স্ক, তাদের মুখে শুনেছি যে তারা বলত জাপান ঠুনকো জিনিস বানায়। তখন জার্মানি, ইংল্যান্ডের জিনিসের কদর ছিল। জাপানের জিনিসকে কেউ গ্রহণ করত না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে, তার পরে চায়না। আসলে তখন বলত চায়নার জিনিস ঠুনকো। তাদের কোয়ালিটি ভালো না। এই হচ্ছে শুরু। কিন্তু চায়না এখন সারা বিশ্বে সর্বাধিক এক্সপোর্ট করে। বাস্তবতা হলো, চায়নার জিনিস যত খারাপ হোক, কিন্তু সত্যি ভালো জিনিস বানাচ্ছে। অনেক পণ্য শুধু চায়নিজই, যেমন টয়স শুধু চাইনিজ, আপনি সারা দুনিয়ায় খুঁজে পাবেন না।

যেসব স্যুভেনির পাওয়া যায়, সেগুলো শুধু চায়নিজ। ওরা মূল্য দিয়ে, কোয়ালিটি দিয়ে বাজার দখল করে নিয়েছে। এটা করতে হবে আমাদেরও। জনগণের মন জয় আমাদেরই করতে হবে। এটা অন্য কেউ করে দেবে না। জনগণ মনে করতেই পারে যে জাপানের মতো হয়নি। এবং জাপানের মতো আমরা বানাচ্ছি না সেটাও তো বাস্তবতা। তো আমরা এই জনগণের মন জয় করার কাজ করছি কোয়ালিটি দিয়ে। আমরা ১১% জনগণের মন জয় করেছি। আমরা ১১% তো মার্কেটে বিক্রি করছি। এরা আমাদের আরও বলবে যে আরে, এটা তো সুন্দর। আমরা সেটা পেরেছি, এটা আমাদের সার্ভ করছে। এখানে তো আমি ক্ষতিকারক কিছু দেখছি না। আমি তো কোনো প্রবলেম ফেস করছি না। আমি যদি এই সুবিধা দিতে পারি, তাহলে জনগণই আমাদের দেশের পণ্য গ্রহণ করবে।

প্রসঙ্গ ডিউটি
রানার অটোমোবাইলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি ডিউটি? মানে অসম প্রতিযোগিতা এটাই বলব। সরকার ভ্যাটটা ইমপোজ করল আর আমদানি ডিউটি কিছু কমিয়ে দিল এটা একসাথে আসার কারণে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কিন্তু একটা কোম্পানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এটি শুধু রানারের জন্য না, অন্যান্য মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্যও চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সরকারকে আরও নমনীয় করে দেখতে হবে এবং কম্পিটিশনটা আরও অনেক সহজ করতে হবে। এটা আমাদের কঠিন কম্পিটিশনে ফেলে দিয়েছে।

আমরা কিন্তু এক্সপোর্টে চলে গেছি। এক্সপোর্ট করছি নেপালে, গত বাণিজ্য মেলা থেকে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাহেব গিয়েছিলেন। আমাদের এই এক্সপোর্ট মার্কেট ধরাটাও কিন্তু বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই জায়গায় আমরা কাজ করছি। আমাদের ব্র্যান্ড দেশের বাইরে যাচ্ছে, ওখানে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা চলছে এটা বাংলাদেশকে অনেক হাইটে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আগে মানুষ জানত যে গরিব ফকির একটা দেশ, তলাবিহীন ঝুড়ি, ওরা মানুষের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকে। সেই দেশ পণ্য তৈরি করে গার্মেন্ট দিয়ে সারা বিশে ছড়িয়ে দিয়েছে। এগুলো দিয়ে ওরা কিন্তু একটা এচিভ করেছে যে ইয়েস, আমরা কোয়ালিটি গার্মেন্ট করতে পারি। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। আমাদের লেদার বাইরে যাচ্ছে। আর একটা যুক্ত হলো মোটরসাইকেল।

অটোমোবাইল এমন একটা জিনিস, রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াবে। সবাই বলবে, আরে ওই দেশ তো মোটরসাইকেলও বানাতে পারে। আমাদের প্রথমবার লট নেপালে গেছে। নেপালে ১৫১টা মোটরসাইকেল পাঠাতে পেরেছি। আমরা ওদের সাথে চুক্তি করেছি, আশা করছি ২ হাজার মোটরসাইকেল এ বছর বিক্রি করতে পারব। আফ্রিকার বাজার ধরারও চেষ্টা করছি। আমরা মনে করছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের বাজারের চাইতে বিদেশে এক্সপোর্ট অনেক বেশি হবে। আমরা দেশে যা বিক্রি করতে পারব, তা বাইরেও পারব। এই সুযোগগুলো যখন দেশে তৈরি হবে, তখনই কিন্তু এ দেশে ইন্ডাস্ট্রি গ্রোথ করবে। কিন্তু যদি আঁতুড়ঘরেই এটা ধ্বংস হয়ে যায়, চারা গাছটাকে পানি দেওয়া না হয়, এটার যদি মৃত্যু হয়, তাহলে কিন্তু এ দেশে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রোথ করবে না। যে আবেদনটা আমরা সরকারের কাছে করছি, তা হলো চারা গাছটাকে পানি দিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেন। তারপর একসময় আর পানি দেওয়া লাগবে না। ওর শিকড় তখন নিচে নেমে যাবে।