ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ এনপিএল

ঋণখেলাপী (এনপিএল) এবং দক্ষ লোকবল ও কর্পোরেট গভরনেন্সের অভাব,ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে অনেকগুলো ব্যাংক। প্রায় ৫৭টি ব্যাংক যেখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে। একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য হিউম্যান রিসোর্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ লোকবলের অভাবের ফলে ব্যাংকিং খাতে অনেক ধরনের সমস্যা বেড়িয়ে আসছে। আগের তুলনায় এখন অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট বেড়েছে যা আগে ছিল না। তাই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। সম্প্রতি আজকের বাজারের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আজকের বাজার প্রতিবেদক এস এম জাকির হোসাইন।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, তবে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কোর গাইডলাইনের ফলে ব্যাংক ইন্ডাস্ট্রিতে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের জন্য আলাদা লোকবল এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়ছে তাই দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে। আমাদের প্রতিটা ফিল্ডের জন্য সক্ষমতা সম্পন্ন লোকবলের অভাব রয়েছে। ব্যাংকের কাজ শুধু ঋণ দেওয়া নয়, ইনভেস্টমেন্ট করে সেই টাকা তুলে এনে ডিপজিটরকে ফেরত দেয়া। অর্থাৎ ব্যাংক একটা প্রতিষ্ঠান যে বিনিয়োগ করে ঋণগ্রহণকারী এবং ডিপজিটরের মাঝখানে ভুমিকা পালন করে। সুতরাং এই সেক্টরে ব্যাপক দক্ষ জনবলের প্রয়োজন রয়েছে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আজকের বাজারকে বলেন আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে আরেকটা বড় সমস্যা ননপারফর্মেন্স লোন বা ঋণ খেলাপী (এনপিএল) ।আমাদের দেশে এনপিএল ১০ শতাংশ বা তার চেয়েও কিছুটা বেশি। হয়তো আমরা বছর শেষে ব্যালেন্স সিট ঠিক রাখার জন্য রিসিডিউল এবং রিইনভেস্টমেন্ট করছি এবং সময় বাড়াচ্ছি ।

ঋণ খেলাপি বা এনপিএল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু আমদের দেশেই এই সমস্যা আছে বিষয়টা আসলে তেমন নয়। বিশ্বের ভিবিন্ন দেশে এনপিএল সমস্যা আছে, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সমস্যা সমাধানে ভিবিন্ন সময় সার্কুলার দিয়ে নতুন ফর্মুলা নিয়ে আসছে যা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো । কিন্তু সমস্যা হলো তার ভিতর দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু খারাপ কিছু জিনিস ডুকে যায়। প্রতিটা জিনিসেরই দুই টা দিক থাকে নির্ভর করে ব্যবহার কারির উপর। তাই ব্যাংকিং খাতের পরিচালনার জন্য ভালো লোক দরকার ।

এসময় তিনি আরও বলেন, ভালো ভাবে পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল এবং কর্পোরেট গভরনেন্স দরকার। কর্পোরেট গভরনেন্স হলো যার যার রোল সঠিকভাবে পালন করা নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।, এবং অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার না করে, ডিরেক্টর, রেগুলেটরি যার যার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করা।

সবার রোল সঠিক ভাবে পালন করতে পারলে এনপিএল সমস্যা সহজেই সমাধান হবে । অনেক সময় লিগ্যাল সিস্টেমের কারনে এনপিএল বা ঋণ খেলাপি রিকভারি করা সম্ভব হচ্ছেনা তিনি মনে করেন । লিগ্যাল সিস্টেম সবসময় ব্যাংকে সাপোর্ট করেনা । যখন চেক ডিসঅনার হয় তখন আদালতের মাধ্যমে ওয়ারেন্ট নিয়ে আসলে অন্য দিকে দেখা যায় কাস্টমার উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে ।তখন দেখা যায় এতে করে ঋণ খেলাপীরা উৎসাহিত হচ্ছে। অনেক সময় এই সমস্যা সমাধানে নিয়ম ফলো করতে করতে অনেক সময় লেগে যায়। কর্পোরেট গভরনেন্স ও লিগ্যাল সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে জবাবে তিনি এসব বলেন।

অনেক সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে বা কোন সেক্টরের ব্যাবসায় ডাউন থাকার কারনেও ঋণ খেলাপি (এনপিএল) বেড়ে যায়। অনেক সময় কোন খাতের পলিসির পরিবর্তনের কারনেও ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়ে বলে তিনি মনে করেন।
বর্তমানে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট সবচেয়ে কম তাই ব্যাংকিং ব্যাবসা কিভাবে এবং কোন খাতে বেশি উন্নয়ন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার প্রচুর ইনফ্রাস্টাকসার ডেভেলপমেন্টের কাজ করার ফলে রড, সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিগুলো বড় হচ্ছে। এই খাতে এখন বিনিয়োগ বাড়ছে। ব্যাংকের ইন্টারেস্ট কম হওয়ার কারনে ব্যাংকে টাকা না রেখে পুজিবাজারে বিনিয়োগ করছে । বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও একটা এক্সপোজার দিতে চাচ্ছে যার ফলে ব্যাংকগুলো প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিপোর্ট দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকও রিপোরটিং সিস্টেমে পরিবর্তন এনেছে, প্রতিদিন পুজিবাজারে আমাদের এক্সপোজার সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট দিতে হয়। ফলে পুজিবারের টার্নওভার বেড়েছে । পুজিবাজারে এবং সঞ্চয়পত্রের দিকে মানুষের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বাড়ছে।মিউচুয়াল ফান্ডের দিকেও নজর দেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে গত দুই বছরে ইনভেস্টমেন্ট একটু ধীরগতিতে ছিল কিন্তু এখন সেটা অনেকটাই এগোচ্ছে, প্রশ্ন হলও ইনভেস্টমেন্ট কোন সেক্টরে হচ্ছে? আমাদের দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে কিনা ? এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে সবাই চায় কিভাবে কম লোকবল দিয়ে অধিক কাজ করা যায়। একটা ইন্ডাস্ট্রির মূল হলও এসএমই।

ঢাকা ব্যাংকের বিশেষত্ব জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, আমরাই দেশি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম নিয়ে আসছি “ট্রেড ক্লাউড” কাস্টমার এলসির জন্য ডকুমেন্টে নিয়ে আমাদের অফিসে না এসে স্কেন করে পাঠিয়ে দিলেই আমরা সব রেডি করে কাজ সহজ করে রাখি। ফলে কাস্টমার নিজেই দেখতে পান তার এলসি কোন ধাপে আছে।

তিনি জানান, ঢাকা ব্যাংকের প্রসেস সার্ভিস সহজ, আমরা এপ্স নিয়ে এসছি, যেমন “ঢাকা ব্যাংক গো”, “ক্যাশমেনেজমেন্ট সার্ভিস”, ইএফটিএনের মাধ্যমে প্যামেন্ট সিস্টেম, “ঢাকা ব্যাংক সি সল্যুশন”, “বিল টু ক্যাশ” এসএমই কাস্টমারের জন্য। ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড সহ অনেক সার্ভিস রয়েছে যার ফলে আমরা বলতে পারি উদ্যোক্তাবান্ধব এবং আধুনিক ব্যাংক ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড।
শাখা এবং প্রধান শাখার রিলেশনশিপ ব্যালেন্স করার জন্য সেন্ট্রালাইজেসন করার চেষ্টা করছি । আমাদের প্রোডাক্ট গুলো ইলেক্ট্রনিক এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছি যাতে কাস্টমারের সেবায় দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় ।