ভার্মি কম্পোস্ট সার বেশি ব্যবহার করছে সৈয়দপুরের কৃষকরা

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে মাশরুম বর্জ্য দিয়ে তৈরী হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার। ওই সার বাজারজাত হচ্ছে মৃত্তিকা ভার্মি কম্পোস্ট সার নামে। পরিবেশ সম্মত এ সার বাজারজাত হওয়ায় বাড়ছে ব্যবহার। জমিতে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় পরিবেশ সম্মত কৃষির দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা।

এক সময়ে খামার থেকে মাশরুম তুলে নেয়ার পর মাশরুম বর্জ্য ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হতো। বর্তমানে খামারে নষ্ট মাশরুম স্পন, কচুরিপানা ও গোবর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার। ওই সার তৈরী করছেন সৈয়দপুর উপজেলা শহরের টেকনিক্যাল কলেজপাড়া গ্রামের মো. আজিজুল হক। তার রয়েছে মাশরুম চাষের খামার। সেই খামারের পাশেই গড়ে তুলেছেন সার তৈরী ও বিপণনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ। উৎপাদন করে মৃত্তিকা ভার্মি কম্পোস্ট সার নামে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছেন তিনি।

২০১৩ সাল থেকে আজিজুল হক তাঁর মাশরুম খামারে ওষুধি মাশরুম উৎপাদন করে তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করে আসছিলেন। এ অবস্থায় তিনি মাশরুম বর্জ্যকে কাজে লাগানোর চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কারিগরী সহযোগিতার ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে থেকে মাশরুম বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করেন। ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির জন্য উৎপাদন হিসেবে বেছে নেন মাশরুম বর্জ্য, কচুরিপানা ও গোবর। ২০১৫ সাল থেকে নিজের তৈরি ভার্র্মি কম্পোস্ট সার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করেন। আর ২০১৬ সাল থেকে পুরোদমে তা বাজারে সরবরাহ করছেন।

তার ওই সার তৈরীতে নিয়মিত কাজ করছেন ১৫ জন নারী শ্রমিক। প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ মেট্রিকটন সার উৎপাদন করছেন তিনি। তা বাজারে বিক্রি করছেন প্রতিটন ১০ হাজার টাকা দরে। সুফল পাওয়ায় সৈয়দপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সার নিয়ে যাচ্ছেন তার কাছ থেকে।

আজিজুল হক বলেন, উৎপাদন খরচ আর শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেও প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় আসে ওই ভার্মি কম্পোস্ট সার থেকে। শুধু কৃষি জমিতে নয় বিভিন্ন জাতের বৃক্ষে ও মাছের উৎপাদন বাড়াতে কৃষক ব্যবহার করছেন ভার্মি কম্পোস্ট। পরিবেশ সম্মত হওয়ায় ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি জানান, প্রতি শতক জমিতে দেড় থেকে দুই কেজি সার ব্যবহার করতে হয়। এ সার জমিতে নিয়মিত ব্যবহার করা হলে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে না। ফসলের ক্ষেতে কীটপতঙ্গদের আক্রমণও হয় না, উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়, ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি পরিবেশ সম্মত চাষাবাদে ভোক্তারা পাচ্ছেন বিষমুুক্ত খাবার।

মৃত্তিকা ভার্মি কম্পোস্ট সারের পাইকারী ক্রেতা দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার সার ব্যবসায়ী লুৎফর কবির ও চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুর রশিদ। তারা জানান, গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সকল ধরণের ফসলে এ সার ব্যবহারে সফলতা আসছে। ফলে দিন দিন কৃষকদের চাহিদা বাড়ছে।
সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সব্জি চাষী আব্বাস আলী বলেন, মৃত্তিকা ভার্মি কম্পোস্ট সার দুই বছর ধরে সবজি চাষে ব্যবহার করছি আমি। তাতে সবজির ফলন যেমন বেড়েছে মুনাফা বেশী হচ্ছে।

আজিজুল হকের মাশরুম খামার ও সার তৈরী সম্প্রতি পরিদর্শন করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-সচিব নুরুল হক, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাউদুদুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (তথ্য) নুরুল হক।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. হোমায়রা ম-ল বলেন, এ সার ব্যবহারে ক্ষেতের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কম হওয়ায় কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আর অর্গানিক পদ্ধতির কৃষি বৃদ্ধি পাশে, পাশাপাশি ভোক্তারা বিষমুক্ত শাক সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য পাচ্ছেন।

সূত্র: বাসস