ভোলায় ১৩শ’ ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন

জেলায় ১৩শ’ ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের সুফল ভোগ করছে ৪১৭টি গ্রামের ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫০৫টি পরিবার। এর জন্য লাইন স্থাপন করা হয়েছে ৮ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। গত ৩১ আগষ্ট জেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। ফলে গ্রামে থেকেই মানুষ এখন শহরের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। কমে আসছে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য। বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুতের জেলা হিসাবে ভোলা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র আজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, মোট বিদ্যুতায়নের মধ্যে সদর উপজেলার ১২৩টি গ্রামে ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার লাইন দেয়া হয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে ৬৯ হাজার ৯৪২ টি পরিবার। দৌলতখান উপজেলায় ২৭টি গ্রামে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লাইন প্রদান করা হয়েছে ৮৪২ কিলোমিটার। এখানে উপকার পাচ্ছে ৪০ হাজার ৮৩৫ পরিবার। বোরহানউদ্দিনে ৫২টি গ্রামে ২২৫ কোটি টাকায় ১৪’শ ৬ কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাচ্ছে ৪৮ হাজার ৪৯২টি পরিবার।

একইভাবে তজুমদ্দিনে ৬২টি গ্রামে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৯০ কিলোমিটার লাইন দেয়া হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছে ২৬ হাজার ৬৫৫টি পরিবার। লালমোহনে ২৮৩ কোটি টাকায় ৭৮টি গ্রামে ১৭’শ ৭০ কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে ৭৪ হাজার ৯৭১টি পরিবার বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এছাড়া চরফ্যাসনে ৭৫টি গ্রামে ৮৪ হাজার ৬১০ টি সংযোগ দেয়া হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে।এ উপজেলায় লাইন স্থাপন করা হয়েছে ২৪ হাজার ৬৭ কিলোমিটার।

পল্লী বিদ্যূৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবুল বাশার আযাদ বলেন, জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিরলস পরিশ্রমে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সমাপ্ত হয়েছে। যা এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া জেলায় মোট ৯টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে সদরে ৪০ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি, বোরহানউদ্দিনে ১৫ এমভিএ ১টি, লালমোহনে ৩০ এমভিএ ২টি ও চরফ্যাসনে ৪৫ এমভিএ’র ৪টি উপকেন্দ্র রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রীড লাইনের বাইরে জেলায় জনবসতিপূর্ণ ১৬টি দুর্গম চর রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশের ৩ থেকে ৪ ফিট নিচ দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এসব চরে বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। এসব চরের মধ্যে ভোলা সদরের ভবানীপুর, মেদুয়া ও কাচিয়া চর।

তজুমোদ্দিনের মলংচরা, সোনাপুর, চর জহিরউদ্দিন, চর মোজাম্মেল ও চর আব্দুল্লা। চরফ্যাসনের চর কুকরী-মুকরী ও মুজিবনগর। এছাড়া পটুয়াখালীর চর মমতাজ, চর বোরহান, চর বিশ্বাস, চর কাজল, চর হাদি ও লক্ষীপুরের সোনার চরসহ মোট ১৬টি চরে ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে জেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আলোর পথে যাত্রায় মানুষের জীবন মানের উন্নয়নসহ জীবন যাত্রার সার্বিক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তারা।

স্থানীয় বাংলার কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম হাবিবুর রহমান মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই আজকে ভোলার প্রত্যন্ত জনপদ আলোকিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি তার একান্ত উদ্যোগ না নিতেন তাহলে আজো অন্ধকারে থাকতে হতো এ ভোলা। শতভাগ বিদ্যূতায়নের ফলে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ যাপিত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

দৌলখান উপজেলার চর-খলিফা ইউনিয়নের লুৎফর রহমান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: সেলিম বলেন, সরকারের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক বিদ্যুতায়নের ফলে লেখা-পড়ার মান পূর্বের চেয়ে অনেক বেড়েছে। একসময় কেরোসিন কিনে কুপি বা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা করতে হতো। যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতোনা। এখন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা থাকায় রাত জেগে শিক্ষার্থীরা লেখা পড়া করতে পারছে। পাশাপাশি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পাচ্ছে তারা।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের মজম বাজার এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিক আলী ও সাদেক সিকদার বলেন, বিদ্যুৎ থাকার ফলে অনেক রাত পর্যন্ত বাজারে লোকজন থাকে। তাই তাদের ব্যবসা ভালো হয়। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান