ভ্যাট আইন ব্যবসায়ীবান্ধব করতে কাজ করবো

আবু মোতালেব। দেশের  প্লাস্টিক শিল্পের  ব্যবসায় অন্যতম পরিচিত নাম। দীর্ঘদিন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। সম্ভাবনাময় প্লাস্টিক শিল্পের সম্ভাবনা, সমস্যা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে আজকের বাজারের প্রতিবেদক শেখ রিয়েলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন এই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার এই আলাপচারিতা তার ভাষায় পাঠকদের জন্য ছাপা হলো।

ব্যবসা বাণিজ্যের সার্বিক পরিবেশ সম্পর্কে  বলতে গেলে  আমি অবস্থাকে ভালোও বলবো না, খারাপও বলবো না। কিছুদিন আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমদের ভুগতে হয়েছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাদের ব্যবসা করতে হয়। আমরা চাইছি ব্যাংক লোনের  ইন্টারেস্টটা  যেন সিঙ্গেল ডিজিটে করা হয়। এ ব্যাপারে আমরা এখনো  চূড়ান্ত লক্ষ্যে যেতে পারিনি। যারা বড় অংকের লোন নেয় তারা সিঙ্গেল ডিজিটে পেলেও আমরা যারা ছোট ও মধ্যম এন্টারপ্রাইজ তারা কিন্তু ১৪ পার্সেন্টের কম নিতে পারি না। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয় আমাদের।
দ্বিতীয়ত, ২০১২ সালের ভ্যাট আইন আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এই আইনে বেশ কিছু ত্রুটি আছে। এ ব্যাপারে এফবিসিসিআই এবং এনবিআর মিলে কমিটির মাধ্যমে ৭টি সুপারিশ করেছিলাম।  সেই সুপারিশে আমরা বলেছিলাম প্যাকেজ ভ্যাট যেটা ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য এবং খুচরা পর্যায়ে এটি প্যাকেজ ভ্যাট নামে পরিচিত। আমরা  থোক ভ্যাট দিতাম।  যার পরিমাণ ৪০০০  থেকে শুরু করে ১৪০০০ হাজার পর্যন্ত।   এটাকে আরো একটু বাড়ানো যেতে পারে। প্রায়  ৫০ পার্সেন্ট।পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে স্ল্যাব ভিত্তিতে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। শুরুতে ৭ পার্সেন্ট থেকে আস্তে আস্তে ১৫ পার্সেন্টে বাড়ানো  যেতে পারে।  তবে সে দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।

টার্নওভার ট্যক্স
টার্নওভার ট্যক্সের কথা বলি।  আগে  স্পেশ্যাল আইনে  আমরা  ছোট ও মাঝারি শিল্প একসময় কিছুটা ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা  পেতাম কখনো কুটির শিল্প বলে বিবেচনা করা হতো। নতুন আইনে আমরা এই সুবিধাগুলো পাবো না। ফলে আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে পড়ে যাবো, যেহেতু বড় ব্যবসায়ীরা বন্ড ফ্যাসিলিটি পাচ্ছে, বন্ড ফ্যাসিলিটি আপনারা জানেন, এর মাধ্যমে ট্যাক্স ফ্রি মালামাল আনতে পারেন ব্যবসায়ীরা। তার পর বিদ্যুতের বিল বেড়ে  গেছে।  ২০১২ সালের আইন কার্যকর হলে বিদ্যুৎ, পানি আর গ্যাসের বিলে ট্যাক্স ১২ পার্সেন্ট  থেকে ১৫ পার্সেন্টে বাড়বে।  ফলে আমাদের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে।

আরো একটা ব্যাপার,  দেখেন আমাদের চারদিকে ভারত আর চীন।  সুঁই থেকে  প্লেনের ইঞ্জিন সবকিছুই কিন্তু আমদানি করতে হয়। এখন চীন থেকে কিছু এনে ট্যাক্স বাদ দিয়েও আমরা দামে পোষাতে পারি না। প্লাস্টিক, সুতা যাই বলেন ভারত আর চায়না মালে বাজার সয়লাব, বিভিন্ন ওয়েতে আমাদের বর্ডার দুর্বল। ফাই করেও আমাদের দেশে অনেক কিছু ঢুকছে। যানজটও ব্যবসার  জন্য কঠিন পরিস্থিতি  তৈরি করেছে। তার পরও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আমরা টিকতে পারছি। প্রাইভেট  সেক্টরই কিন্তু আমাদের বাজেটের ৬০ পার্সেন্ট  যোগান দিচ্ছে, ভ্যাট ট্যাক্স ইত্যাদি আমরা কম দিচ্ছি না। আমাদের দিকে তাকিয়ে বাজেটে যদি আইনগুলো কিছুটা নমনীয় করা হয় , আমাদের যদি অনুকুল সহযোগিতা করা হয় তবে আগামিতে আমরা আরো বেশি সার্পোট সরকারকে দিতে পারবো।

বর্তমানে ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

ব্যাংক সাপোর্ট আর বাজেটে আসন্ন  আইনগুলোকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে এবং এফবিসিসিআই ও এনবিআরের মধ্যে কাজের সমন্বয় করতে হবে। তা না হলে ছোট ব্যবসায়ীরা কঠিন সময়ের মধ্যে পড়বে, তারা আবার রাস্তায় নামবে। এ দিকে যদি সরকার নজরে নেয় তবে ভালো হয়। এই কঠিন অবস্থার মধ্যেও আমরা বসে  নেই। আমাদের গার্মেন্টস এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের প্লাস্টিক এগোচ্ছে- এক্সপোর্ট হচ্ছে, ফার্নিচার রপ্তানি হচ্ছে।  আমরা মাল্টি পারপাস ব্যবসা করতে পারছি।  আমাদের যদি নীতি সহায়তা  দেওয়া হয় আমরা আরো এগিয়ে যাবো।  দেশকে কন্ট্রিবিউট করতে পারবো।

অ্যাসোসিয়েশনের সমস্যা

আমরা প্লাস্টিক নিয়ে ব্যবসা করছি।  আমাদের কিছু পরিবেশবিদ অকারণে প্লাস্টিককে পরিবেশ বিরূপ বলছেন।  তারা প্যাট  বোতল বন্ধ করতে বলছেন ইত্যাদি। আপনি যদি ইউরোপ আমেরিকার মত উন্নত দেশ দেখেন তারা কিন্তু প্লাস্টিক ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে অচল।  তারা অনেক বেশি প্লাস্টিকমুখী হচ্ছে। অথচ আমাদের  দেশের পরিবেশবিদরা না বুঝেই এর পিছনে  লেগেছেন। আমরা কাজ করছি,  সরকারকে বলছি প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব। আমাদের ওয়েস্টেজ  নেই, আমরা রিসাইকেল করছি। যেমন, আমাদের পলিব্যাগ; এটাকে আমরাই  কালেক্ট  করে দানাদার করে এটা থেকে  খেলনা, ফার্নিচার এমনকি স্যান্ডেল, চপ্পল তৈরি করছি। ফলে আমরা বলছি আমাদের প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব, এতে ক্ষতি নেই। আমার বিশ্বাস আমরা যদি সহযোগিতা পাই, তাহলে প্লাস্টিক শিল্প আরো শক্তিশালী হবে, আরো বেশি বেশি রপ্তানি করতে পারবেন উৎপাদকরা।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অ্যাসোসিয়েশনের করণীয়

আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি। আমাদের প্লাস্টিক শিল্পের জন্য একটা ইনস্টিটিউট করতে যাচ্ছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা ভাবছি যেখানে নতুন  ছেলেমেয়েরা প্লাস্টিক বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারবে।  এ ছাড়া স্কিল ম্যান পাওয়ার  তৈরি  ও তাদের হাতেকলমে  শেখানোর জন্য  আমরা একটি  ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করবো। সবমিলিয়ে আগামিতে প্লাস্টিক ফোরাম অনেক শক্তিশালী অবস্থানে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

এফবিসিসিআই আমাদের জন্য কী করতে পারে : এফবিসিসিআই আসলে  ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ ভালো করতে পারে। বড় হয়ে গেলে  যেমন বিজিএমইএ তাদের জন্য করণীয় তেমন নেই। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই। প্রয়োজনে লবিং কিংবা সরকারের সঙ্গে লিঁয়াজো এসব করতে পারে এফবিসিসিআই।

প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলে কী করতে পারবো

আমি ভ্যাট আইন নিয়ে কাজ করেছি, করছি ,আগামিতেও করতে চাই। ২০১২ সালের ভ্যাট আইনের ত্রুটি বিচ্যুতি কমাতে আমি কাজ করবো। লবিং করতে হলে করবো।

আজকের বাজারের মাধ্যমে আমি বলতে চাই মিডিয়া আমাদের অনেক সাহায্য করেছে আশা করি আগামিতেও তারা আমাদের পাশে থাকবে। আমাদের ভ্যাট আন্দোলনে তারা অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।
 
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য

নতুনদের  ব্যবসা শুরুতেই ট্রেড লাইসেন্স  পাওয়া একটি বড় বাধা। এটি সহজ করার জন্য আমি কাজ করবো। নতুনরা যাতে সহজেই  ট্রেড লাইসেন্স পায় তার জন্য  এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করবো। নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকেই অনেক ভালো করছে। নতুনরা আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই তাদের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের  সাহায্য করবো।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৪ মে ২০১৭