ভ্রমণ পিপাসুদের অনন্য আকর্ষণ সাজেক ভ্যালী

পাহাড়ের পিঠ বেয়ে চলা প্র্রশস্ত ঢাল মিলিয়ে গেছে সমতল ভূমি হয়ে। বিস্তৃত উঁচু পাহাড় জুড়ে বসেছে সবুজ প্রান্তর। সবুজে ঘেরা প্রকৃতির। এখানে আকাশ মাটিকে ছুঁয়েছে, মেঘ ছুঁয়েছে পাহাড় আর ঝর্ণা মিলেছে নদীতে। পৃথিবীর এ যেন এক মনোরম ভূ-স্বগ। বলছি সাজেক ভ্যালীর কথা।

সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়বেষ্টিত এই সাজেকভ্যালির অবস্থান বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে। উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার আর সমভূমি থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত সাজেক। সাজেক পাহাড় চুড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নৈসর্গীক দৃশ্য বিমোহিত করে ফেলে প্রকৃতি প্রেমীদের।

সাজেকে রয়েছে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালং নামে ছোট দুটি নদী। নদী দুটির রূপ যেন সত্যিই পাহাড়ি কন্যার। দুটি নদীর বুকে প্রায় সব সময় ভাসতে দেখা যায় বাঁশের চালি। যা দৃষ্টি কাড়ে সবার চোখে।চালিতে বাঁধা বাঁশ সরাসরি চলে যায় কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলি পেপার মিলে। আর পাহাড়ি পথ বেয়ে চলা রাস্তার দু’ধারে গড়ে উঠেছে স্থানীয় আদিবাসীদের গ্রাম

থাকা খাওয়ার জন্য এখানে রয়েছে সুব্যবস্থা। পাহাড়িদের এবং পর্যটকদের জন্য রয়েছে রঙ্গিন সব কটেজ। রয়েছে রুইলুই ও কংলাক নামে দুটি পাড়া । পর্যটকরা অবস্থান করেন রুইলুই পাড়ায়। সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক ও রুনময় নামে দুটি রিসোর্টও রয়েছে। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে পাহাড়ের ঢালে। পর্যটকরা বেছে নিতে পারেন পছন্দমত যেকোন রসোর্ট। এসব রিসোটের বারান্দায় বসেই মেঘ-পাহাড়ের মিতালী দেখার সুযোগ মিলবে।
কংলাক পাড়ায় গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এজন্য পায়ে হেঁটে পাহাড় বয়ে উঠতে হয়। সাজেকে এটাই সবচেয়ে উঁচুস্থান। কংলাক পাড়া থেকে এক নজরে সাজেক দেখার সুযোগ মেলে। তবে সাজেকে হ্যালিপ্যাডে পর্যটকরা গোধূলী বরণ করেন। অন্ধকারটা ঘনিভূত হবার সাথে সাথেই সবাই ফিরে আসেন রুইলুই পাড়ায়। এখানে সড়কের পাশে পাহাড়িরা কমলা, আনারস, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করেন। পাহাড়ের এসব ফল খুব সুস্বাদু।

তবে এক সময় সাজেক যাওয়া ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। কয়েক বছর আগে সড়ক নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এতে দ্রুতই বদলে যেতে শুরু করে এখানকার জীবনচিত্র। গড়ে ওঠেছে পর্যটকদের থাকার জন্য কটেজ, রিসোর্ট। রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা।

আর এখানের অপরূপ সৌন্দয, নীবিড় প্রকৃতি যে কারও মনকে আচ্ছাদিত করে রাখে পরম প্রশান্তিতে।তাই প্রকৃতিপ্রেমীরা এখন সুযোগ পেলেই ছুটছেন সাজেকের অপার রূপে বিমোহিত হতে।

আর বিপুল সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সম্ভাবনাময় সাজেক ভ্যালিকে কাজে লাগালে বাংলাদেশের দার্জিলিংয়ে পরিণত করা সম্ভব।
আর পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল।আর পর্যটকদের কাছে এখন এক অনন্য আকর্ষন সাজেক ভ্যালী। তবে সাজেকে যেতে হলে অবশ্যই বাঘইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে।

 

 

আজকের বাজার/মিথিলা