মধুরও বসন্ত এসেছে নাটোরে

জেলায় প্রকৃতি জুড়ে বসন্তের হিরন্ময় উপস্থিতি। গাছে গাছে রঙ ছড়াচ্ছে শিমুল আর পলাশ। কোকিলের কুহু কুজন আর মাতাল সমীরণ জানান দিচ্ছে ‘মধুরও বসন্ত এসেছে’। বসন্ত যে এসে গেছে তা প্রথম জানান দেয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে পুরনো স্টেডিয়াম সংলগ্ন জেলা আনসার অফিসের পলাশ গাছটি। সম্ভবত শত বছরের পুরনো এ গাছটিই প্রতিবছর বসন্ত আগমণের আগাম জানান দেয়। শীতের শেষার্ধ থেকেই কমলা রঙের ফুল ফুটতে শুরু করে। এখন গাছটি ফুলে ফুলে পূর্ণ যৌবনা। ফুল শুধু গাছেই নয়, গাছের নীচে ফুল ঝরে যেন কমলা কার্পেট বিছিয়ে রয়েছে। নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা তাঁর বোনকে সাথে নিয়ে বাবার সাথে পলাশ ফুল দেখতে এসেছে। সে জানায়, প্রতিবছর স্টেডিয়ামে একুশের বই মেলায় এসে পলাশ ফুল দেখতে আসি, হাত ভরে ফুল কুড়াই। দশম শ্রেণীর ছাত্রী আসমাউল হুসনার ধারণা, প্রকৃতি থেকে পলাশ ফুল হারিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে, নতুন করে পরিকল্পনা করে গাছ না লাগালে নতুন প্রজন্ম এ ফুল আর চিনবে না।

শহর খুঁজে পলাশ গাছের উপস্থিতি চোখে পড়ে রাণী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরে। এ চত্বরের এসি ল্যান্ড অফিসের পেছনে আর সরকারী কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের সামনে শোভা পাচ্ছে পলাশ ফুলের গাছ। তবে এসি ল্যান্ড অফিসের পেছনের গাছটি হেলে হ্রদের পানিতে হারিয়ে যাওয়ার অভিযাত্রী হয়ে আছে। এভাবে এ চত্বরের গোপীনাথ পুকুরে সম্প্রতি হারিয়ে গেছে আরো দু’টি পলাশ গাছ। প্রকৃতি থেকে পলাশ ফুল হারিয়ে যাওয়া বিষয়ে শিক্ষার্থীর শংকা নিয়ে কথা হয় নাটোর দিঘাপতিয়া এমকে অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ ও নাটোর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে। এ শংকার সাথে একমত পোষণ করে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের কলেজ প্রাঙ্গনে পরিকল্পনা করে কয়েকটি পলাশ গাছ লাগানো হবে-যাতে করে গাছের ফুলগুলো বসন্তের রঙ ছড়ায়।

শহর কিংবা গ্রামের রাস্তায় চলতে চলতে চোখে পড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল ফুলগুলো যেন ভাষা শহীদদের রঙে লাল হয়ে আছে। শিমুল আর পলাশ ছাড়া বসন্ত পূর্ণ নয়। তবে গন্ধে অতুলনীয় কামিনী আর রাস্তার ধারে কিংবা বনে-বাঁদাড়ে ফুটে থাকা ভেটিসহ অন্যান্য ফুলের কারণে বসন্ত সমৃদ্ধ।
বসন্তের রুপ রস গন্ধ বলতে গেলে বলতে হবে সজিনা ফুলের কথা, বলতে হবে আম আর লিচুর মুকুলের কথা। এসব ফুলের মধু নিতে মৌমাছির গুঞ্জন বসন্তকে করেছে অপরুপ। আর এসব ফুলের গন্ধে প্রকৃতিতে বাতাস হয়ে উঠেছে মাতাল করা। তবে সবচেয়ে মাতাল করা গন্ধ বাতাবি লেবুর ফুলে বলে ধারণা অনেকের। আর এ বাতাসের গন্ধে আর ছন্দে কোকিলের কুহুতান যেন প্রাণ পাগল করা বসন্তের গানের সুর।

আকাশ জুড়ে চাঁদের শুক্লা পক্ষ শুরু হয়ে গেছে। সঙ্গীত শিল্পী ও কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা রুপার মতে, বসন্তের সৌন্দর্যকে বুঝতে হলে শুক্লা নবমীর দিনগুলো থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত প্রকৃতির মাঝে অবগাহন করতে হবে। এসব রাতে লোকালয়ে রাস্তার বাতি বন্ধ রেখে জোছনা উপভোগের সুযোগ করে দেওয়া যায় কি না তা বিবেচনার জন্যে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এ ব্যাপারে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্বজন সমাবেশ’ শহরে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য কর্মে বিশেষ করে সঙ্গীতে বসন্তের উপস্থিতি অসাধারণ বলে জানান রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক এম মতিউর রহমান মামুন। তাঁর গানে চেতনা আসে, বসন্ত হয়ে ওঠে অপরুপ, মধুময়। এবারের বসন্তে ফাগুনের পয়লা দিনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে বসন্ত বরণ শোভাযাত্রা শেষে রাণী ভবানী রাজবাড়ীর মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নাটোরের জেলা প্রশাসক ও রাণী ভবানী উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, এ চত্বরে হ্রদে হেলে পড়া পলাশ গাছটি সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নতুন করে কিছু পলাশ গাছও রোপণ করা যেতে পারে। আমরা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ শহরকে কবিতা গান আর ফুল পাখির শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ সমৃদ্ধি আনতে বসন্ত ঋতু আমাদের বিবেচনায় অগ্রগণ্য। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান