মাগুরার গ্রিন সিটি গুচ্ছ গ্রামে বাড়ি পেয়েছে ৪০টি ভূমিহীন পরিবার

মাগুরার সদর উপজেলার বাহারবাগ গ্রামে নবনির্মিত গ্রিন সিটি নামের গুচ্ছ গ্রামে ভূমিহীন ৪০টি হতদরিদ্র পরিবার বসবাসের জন্য বাড়ি পেয়ে নতুনভাবে শুরু করেছেন তাদের জীবনযাত্রা। স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া এসব পরিবার এখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। চারিদিকে সবুজ মাঠ, গাছাপালা দ্বারা বেষ্টিত থাকার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, সোলার, শিক্ষা কেন্দ্র, মন্দির, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র ও চিকিৎসা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকায় গুচ্ছ গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রিনসিটি।

সরেজমিন গ্রিন সিটি ঘুরে দেখার সময় বসতঘর পাওয়া ভূমিহীন মোশাররফ কাজী (৪৯) জানান, অন্যের বাড়িতে থেকে দিনমজুরী করে সংসার চালাতেন। তার নিজেস্ব কোন বাড়ি ছিল না। মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ গ্রামে গ্রিন সিটি নামের গুচ্ছগ্রামে বসত ঘর পেয়ে নতুন উদ্যোমে শুরু করেছেন তার জীবন যাত্রা।

তিনি জানান, আমি অসহায় ছিলাম। সরকার আমাকে ঘর দিয়েছেন। আমার একটি স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে। এখানে স্ত্রী আলেয়া বেগম ও মেয়ে ছিতারা পারভীন (১৪) কে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি। তার বাড়ি ছিলো সদর উপজেলার পানিঘাটা গ্রামে। প্রায় ১৫ বছর আগে বাহারবাগ গ্রামে বিয়ে করেন। ওই গ্রামে নবাব আলী নামে এক নিকট আত্মিয়ের বাড়িতে স্ত্রী আলেয়া বেগমকে নিয়ে একটি ছাপড়া ঘরে থেকে দিনমজুরীর কাজ করে সংসার চলছিল তার। নিজের জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ ছিল না। এ কারণে গ্রিনসিটিতে ঘর পেয়ে তিনি দারুন উচ্ছ্বোসিত। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মোশার্রফ কাজী।

বাহারবাগ গুচ্ছ গ্রামে বসতঘর পাওয়া ছকিনা খাতুন (৫০) জানান, বাহারবাগ গ্রিন সিটির পার্শ্ববর্তি শংকোচ খালি গ্রামে থাকতেন। তার স্বামীর নাম ধলণ বিশ্বাস ভূমিহীন ছিলেন। ৮ বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। এরপর একই গ্রামে বোন জাবেদার বাড়িতে থেকে মেয়ে রহিমাকে নিয়ে পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলাতেন। আমরা ভূমিহীন ছিলাম। আমাদের কোন ঘর বাড়ি ছিল না। বর্তমান সরকার আমাদের বসত ঘর দিয়েছেন। ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন এতে আমরা খুব খুশি হয়েছি। এখানে আমরা খুব শান্তিতে বসবাস করছি।

মাগুরা সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখানে মোশাররফ কাজী, সকিনা খাতুনের মত ভূমিহীন ৪০টি হতদরিদ্র পরিবার পেয়েছে বসতঘর। এখানে বসতঘর পাওয়া পরিবারের অধিকাংশই দিনমজুর। এছাড়া এখানে ঘর পেয়েছেন স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীরা।

সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গ্রিনসিটির মধ্য দিয়ে ৫ ফিট প্রস্থ ও ৩৭৫ ফিট লম্বা ইটের সলিং রাস্তা তৈরি হয়েছে। এখানে ৪০টি ঘরের পাশপাশি রয়েছে একটি মিলনায়তন। এছাড়া ব্র্যাকের আয়শা-আবেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে করে তারা নানা আয় বর্ধক কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেন। এছাড়া গ্রিন সিটিতে মাছ চাষের জন্য রয়েছে একটি পুকুর। রয়েছে হাঁস-মুরগী পালনের ব্যবস্থা। রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ওষধী গাছ। রয়েছে শিশুদের বিনোদন ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। দুই কক্ষের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে পাকা টয়লেট ও পরিবেশ বান্ধব চুলা।

জাতীয় পতাকার রঙের আদলে সুবজ ও লাল রঙের মিশ্রনে সেমি পাকা টিনসেডে প্রতিটি ঘরকে রঙ দিয়ে এ গ্রিন সিটিকে সাজানো হয়েছে। ঘরের চালার টিনগুলো সবুজ হওয়ায় দূর থেকে এ গ্রিনসিটিকে সবুজ আচ্ছাদিত মনে হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবাসন সুবিধার পাশাপাশি এখানে স্থান পাওয়া পরিবারগুলো আয়বর্ধক নানা কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হবেন। পাবেন সরকারি সব সুবিধা। এছাড়া এছাড়া বাহারবাগ থেকে আমুড়িয়া, ধর্মদাহ, শুত্রুজিৎপুর বাজার হয়ে বিভিন্ন পাঁকা রাস্তা দিয়ে মাগুরা শহরে প্রবেশের সুযোাগ থাকায় বিভিন্ন রুটে ভ্যান,ইজিবাইক ও রিক্সা চালিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এখানে থাকা পরিবারগুলো।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান, ভূমিন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায় (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় সরকারি অর্থায়নে সদরের বাহারবাগে গ্রিনসিটি নামের এ আবাসনটি ১ একর ২০ শতাংশ জমির উপর প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। চলতি বছর মূল রাস্তা থেকে ১১ ফুট নিচু জমি ভরাট করে এটি নির্মিত হয়েছে। তবে অন্যান্য গুচ্ছগ্রাম থেকে এটির নকশা, স্থাপনা ও কার্যক্রমে ভিন্নতা আনা হয়েছে। এ গ্রিনসিটি অনুকরণীয় একটি কাজ হিসাবে চিহিৃত হবে বলে মনে করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলম জানান, মাগুরা সদরের বাহারবাগে গ্রিনসিটি নামের গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি অংশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অজর্নের অংশ হিসেবে রাস্তার পাশে নিচু জমি ভরাট করে বাহারবাগে গ্রিনসিটি নামের গুচ্ছগ্রামটি নির্মিত হয়েছে। ভূমিন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায় (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় মাগুরায় এটি প্রথম করা হয়েছে। যা সারা বাংলাদেশে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বাহারবাগ গ্রিনসিটিতে ভূমিহীন হতদরিদ্র ৪০টি পরিবার তাদের ঠিকানা পেয়েছে। আমরা এ ৪০টি পরিবারের জন্য কর্মসংস্থান বিষয়ক উদ্যোগ গ্রহণ করছি। এর মাধ্যমে টেকসই গ্রিনসিটির লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে আশা করেন তিনি। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান