মানসম্পন্ন খাদ্যের জন্য শক্তিশালী পলিসি দরকার

শামসুল হুদা : এনিমেল হেলথ এর সাথে হিউম্যান হেলথের অনেক সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এনিমেল হেলথ থেকে আসে আমাদের প্রোটিনের সাপ্লাই সোর্স। যেখানে এনিমেল হেলথ এগ্রিকালচারের ক্রপ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের মাংস আমরা খাই, মুরগির ডিম খাই, এগুলোই আমাদের প্রোটিন ভিটামিনের সোর্স। আমরা যখন মানসম্মত খাদ্য নিয়ে কথা বলছি তখন কিন্তু এ বিষয়গুলো অপরিহার্য। এনিমেল হেলথ আমাদের এগ্রি সেক্টরে পড়ে।
ধান চাল রবিশস্য শাকসবজি এগুলোতে যথেচ্ছা হারে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। কীটনাশক শুধু ফসলের ক্ষতি করছে না, এগুলো পানির সাথে মিশে মাটিতে, এরপর মাটির নীচে ভূ গর্ভে গিয়ে ভূগর্ভস্ত পানির ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাই এই কীটনাশক ব্যবহারের উপর জুডিশিয়ালি ইউসডটা কনফার্ম করতে হবে। কারণ মাটি থেকেই এনিমেলের জন্য ঘাস, শস্য আসছে। ওগুলো যদি কোয়ালিটি সম্পন্ন না হয় তাহলে গরু ছাগল বা হাঁস মুরগি কোয়ালিটি ফিড পাবে না।

খাবারের মাধ্যমে বিষ গ্রহণের ফলে প্রানীদের শরীরে থাকা টক্সিনে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আর তাদের শরীরের সেই টক্সিনগুলো মানব শরীরে সঞ্চারিত হচ্ছে। এতে করে মানুষের শরীরে নানা ধরণের অসুখ হচ্ছে। এ জন্য একটা শক্তিশালী পলিসি গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু শক্তিশালী পলিসি তো দূরের কথা আমাদের দেশে এখন অবধি ওয়ার্কেবল পলিসি নেই যা আমাদের আইন প্রয়োগে সহায়তা করবে।

কিছু ব্যথানাশক ঔষধ আছে, যা সারা পৃথিবীতে বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলো এখনও আমাদের দেশে ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে আমাদের দেশের মানুষ ক্যান্সার ডায়াবেটিকের মতো দূরারোগ্য ব্যাধির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোকে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাতিল করে দিতে হবে।

দেশে দুইটা অথরিটি আছে। একটি হলো ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন। তারা বর্তমানে অতীতের তুলনায় মাঠে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকায় আছে, তারা ডেভেলপ করছে। কিন্তু তারা মানুষের জন্য সচেতন হলেও প্রাণীর ঔষধের বিষয়ে তারা অতটা সচেতন নয়। এনিমেল সেক্টরে তাদের এক্সপার্টাইজ এখনও কম আছে। সেখানে তাদের জুডিশিয়াল এনটিবায়োটিক ইউজ করানোর জন্য তাদের যেসব নীতিমালা দরকার তা এখনও তারা করে উঠে নাই।

পশু সম্পদ অধিদপ্তর এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করি। রেগুলেট করার জন্য কিছু বিষয় দরকার। জুডিশিয়াল এপ্লাই মানে হলো যে সমস্ত পণ্য বাজারে সরবরাহ ব্যান বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মানুষের উপকারের জন্য সে সব ক্ষতিকর পণ্যকে আইনগত ভাবে দমন করা বা শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আনা। এক্ষেত্রে আমদানি পলিসি এর সাথে ভীষণ ভাবে ডিফেক্টেবল। এ পলিসি ২৭ বছরের পুরোনো যা সময়োপযোগীও নয়। ২৭ বছর আগে ওই পলিসি নির্ধারণের সময় আমি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। এখন যে আমদানি নীতি বিদ্যমান সেগুলো আমার দেওয়া এখন কিছু কিছু পয়েন্ট বাদ গেছে।

এনিমেল ড্রাগ আমদানির ক্ষেত্রে দুইটি পার্ট রয়েছে। একটা এন্টিবায়োটিক আরেকটি হলো নন এন্টিবায়োটিক বা ফিড আইটেম। ফিড আইটেম আমদানিতে স্পেসিফিকেশন দেওয়ার কথা ছিলো। ফিড আমদানির ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন কোনো নজরদারি করে না, সেটা তাদের কাজও নয়। ফিড আমদানির অনুমোদন দেয় পশু সম্পদ অধিদপ্তর। কিন্তু তাদের সেই পারমিশন দেয়ার মধ্যে ডিফেক্ট রয়ে গেছে। সেখানে মানদন্ড স্পেসিফিক করা নেই। এ কারণে চতুর ব্যবসায়ীরা আমদানি শুল্ক ফাঁকি দিতে পারেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- অনেকে লেকটোজেন (শিশুখাদ্য) দুধ আমদানির অনুমতি নিয়ে দেশে গুড়ো দুধ নিয়ে আসছেন। আমদানিতে শুল্ক বিহীন পণ্যেও নাম উঠিয়ে অনুমোদন নেওয়া ব্যবসায়ীদের একটি কৌশল মাত্র। তাই যে কোনো পন্য আমদানির অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে রেগুলেটরদের সতর্ক থাকতে হবে। আমদানিকারককে পণ্য স্পেসিফিক করে দিতে হবে।

একজন কৃষক যখন একটি গরু বা মুরগি পোষে তখন সে কোয়ালিটি ফিডের সাথে পরিচিত হয়। প্রাণীর গ্রোথ ভালো আসা, ডিম পাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সে বেনিফিট দেখছে এবং কোয়ালিটি ফিডের প্রতি তার আরো বেশি আগ্রহ বাড়ছে। সিপির ফিড গুলো দামি বলে কৃষককে সেটা বেশি দামে নিতে হয়। তারপরও সে সেটাই কিনছে কারণ এতে তার লাভ আছে। বর্তমানে এ শিল্পে বাংলাদেশে যেসব কোম্পানি আছে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটা লাইসেন্স নিয়েছে। সেই লাইসেন্সের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো বালাই নেই।

ফিডে কি কি থাকতে হবে সেটা নিয়ে স্পেসিফিকেশন থাকতে হবে। সেটা সরকারই নির্ধারণ করে দিবে। পলিসির ভেতরে ম্যানুফ্যাকচারিং একটি গাইডলাইন রাখতে হবে। স্লোটারিং গাইডলাইন থাকতে হবে।

ইউরোপের কোনো পোল্ট্রি খামারে গেলে দেখতে পাবেন তাদের খামরগুলো একটা শেডের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা হয়। সেখানকার পলিসিতে উল্লেখ করে দেওয়া থাকে যে তাদের খামারগুলোর পরিবেশ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন রাখতে হবে। সেখানকার তাপমাত্রা উঠানামা করলে অনুমোদন বাতিল হবে। সে কারণেই ইউরোপে ছোট খামার হয় না, ম্যাস প্রোডাকশন হয়।

সে সব দিক থেকে না ভাবলেও এ শিল্পে বাংলাদেশে যেসব প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোকে প্রথমে মানসম্মত করার বিষয়ে ভাবতে হবে। যেগুলো আমদানি হচ্ছে আর লোকাল মার্কেটে যেসব প্রোডাক্ট উৎপাদন করা হচ্ছে সে গুলোর ওপর রেগুলেটরদের নজরদারি বাড়ানো উচিত। লোকাল ইন্ডাস্ট্রিগুলো যে সব প্রোডাক্ট বানাচ্ছে তাদের কি আসলে ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন আছে কিনা? সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। দেখা গেলো কোনো কোম্পানির ঔষধ বাজারে ভালো নাম করেছে, সে ঔষধের প্যাকেটের ভেতরে আটার গোলা ভরে বাজারে ছেড়ে দিলো।

সেটাও কিন্তু চলছে। যদি তেমন অসাধু কারবারী পাওয়া যায় তাদের আইনের আওতায় আনার মতো আইন তো থাকতে হবে। তাই এনিমেল হেলথের ক্ষেত্রে ওভারঅল একটা শক্তিশালী পলিসি তৈরি করা ভীষণ দরকার। এবং সে পলিসিতে সবগুলো আউটলাইন থাকতে হবে।

শামসুল হুদা
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
উইল্টস্ মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড।

আরএম/