মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর যৌথ উদ্যোগে ১৫ জুন, ২০১৯ তারিখে ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্মেলন-২০১৯’ ঢাকার একটি স্থানীয় হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব ফজলে কবীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর বলেন, বাজেট বক্তৃতায় যখন বীমা খাতকে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে, ঠিক তখনই বীমা খাতের জন্য এ জাতীয় একটি সম্মেলন আয়োজন করায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাই। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে আমদানি নির্ভর অর্থনীতি থেকে রপ্তানিমুখী অর্থনীতির দেশে উন্নীত করতে বীমা খাতের যথেষ্ট ভ‚মিকা রয়েছে। তিনি এ খাতের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে অপরাধলব্ধ অর্থের প্রবাহ রোধে কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য জনাব গকুল চাঁদ দাস। সকল বীমা প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ আসাদুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বীমা খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নের ঝুঁকি কম হলেও কোনো ধরনের অঘটন ঘটলে তা বিদেশী কোম্পানীগুলোকে নেতিবাচক বার্তা দেবে মর্মে অভিমত প্রকাশ করেন। তাই মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মানদÐের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে কর্পোরেট কাঠামোতে উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান করার ব্যাপারে তিনি জোর দেন।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ কবির হোসেন তাঁর বক্তব্যে বীমা খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি কম থাকলেও তা প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানসমূহের বোর্ডের সদস্যদের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে কমিশন প্রথাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি অধিকতর স্বচ্ছ ও সুষ্টুরূপে পরিচালনার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহকে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ফোরাম এর প্রেসিডেন্ট জনাব বি এম ইউসুফ আলী তার বক্তব্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।

বিশেষ অতিথি বিএফআইইউ প্রধান জনাব আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, সন্ত্রাসী বা অপরাধীদের লক্ষ্য থাকে দুর্বল খাতগুলো; কাজেই বীমা খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন ঝুঁকি কম হলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার না হলে অপরাধীদের প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের আর্থিক খাতে কর্পোরেট গর্ভনেন্স নিশ্চিতকল্পে সর্বোচ্চ তিনটি ব্যাংকে একটি করে হিসাব খোলার বিষয়টিকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধের দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি বড় পদক্ষেপ মর্মে উল্লেখ করেন। তিনি ‘অগখ/ঈঋঞ-অ ঞড়ড়ষ ভড়ৎ ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃব এড়াবৎহধহপব’-শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি তাঁর উপস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের গুরুত্ব ও পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি তাঁর বক্তব্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন ইস্যুতে বাংলাদেশ বিশ্বের কমপ্লায়েন্ট দেশগুলোর একটি হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। বীমা খাতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নের পরিধি তুলে ধরে বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তাদের রূপকল্প ২০২০, ২০৪১ এবং এসডিজি-এর লক্ষ্যসমূহের সাথে সঙ্গতি রেখে বীমা খাতের তথা দেশের উন্নয়নকে অগ্রগামী করার পরামর্শ প্রদান করেন।
সমাপনী বক্তব্যে বিএফআইইউ-এর মহাব্যবস্থাপক ও অপারেশনাল হেড জনাব মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ ঝুঁকিভিত্তিক সুপারভিশন এ্যাপ্রোচ অবলম্বন করতে যাচ্ছে। এতে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য জনাব বোরহান উদ্দিন আহমেদ বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধান নির্বাহীদেরকে তাঁদের অধীনস্তদের মাঝে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টি ও এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে এ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।