মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার: চাহিদা সহস্রাধিক সরকারের ভর্তুকি ১২৫টিতে

উত্তরবঙ্গের জেলা দিনাজপুরে কৃষিকাজে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা। স্বল্প সময়ে একই সঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার করা ও প্যাকেটজাতকরণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার। চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০টি যন্ত্রের চাহিদা জমা দিয়েছেন কৃষকরা। অথচ সরকারের ভর্তুকি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় এ জেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র পাঁচটির।

একই অবস্থা টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জেও। জেলা দুটিতে এরই মধ্যে যথাক্রমে ৪৫টি ও ৪২টি মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টারের চাহিদা জমা পড়েছে। কিন্তু জেলা দুটিতে সরকার বরাদ্দ রেখেছে মাত্র তিনটি করে। চলতি বছর ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে মাত্র ১২৫টি মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টারের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও চাহিদা রয়েছে এক হাজারের বেশি। সরকারের ভর্তুকি সহায়তা পর্যাপ্ত না থাকায় কৃষকরা যন্ত্রটি কিনতে পারছেন না।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম জানান, কৃষকদের কৃষিযন্ত্র কিনতে আগ্রহী করে তোলা ও তাদের এসব যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্যই সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। ধান ও গম কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার করা ও বস্তাজাত করার জন্য মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টারসহ আরো কিছু যন্ত্রের ওপর সরকারি পর্যায়ে ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কেননা এসব যন্ত্রপাতি উৎপাদন খরচ কমাতে ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে কৃষকদের চাহিদা থাকলে আগামীতে ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
কৃষক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারের মাধ্যমে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমানো যায়। সময় বাঁচায় ৭০-৮২ শতাংশ। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে ৭৫ শতাংশ কম শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এটির মাধ্যমে ঘণ্টায় এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমির ধান বা গম কাটা, মাড়াই ও বস্তাজাত করা সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক একর জমির ধান বা গম কাটতে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। সেখানে মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারে লাগে ৬ লিটার ডিজেল, বর্তমান বাজারদরে যার খরচ দাঁড়ায় মাত্র ৩৯০ টাকা। এটি অল্প কাদার মধ্যেও ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে এ যন্ত্র দিয়ে কাটার পর খড় আস্ত থাকে। যন্ত্রটির মাধ্যমে ধান কাটা হলে ফসল বেশি পাওয়া সম্ভব।

দেশের কৃষি খাতে শ্রমিক সংকটের কারণে উন্নত প্রযুক্তির মিনি কম্বাইন হার্ভেস্টারের দিকে ঝুঁকছেন মাঝারি ও বৃহৎ পর্যায়ের কৃষকরা। যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে ফসলের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি শ্রমিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ প্রয়োজনীয়তার দিকটি মাথায় রেখে কৃষকদের মাঝে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, বর্তমানে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের অভাব প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় কৃষিকে লাভজনক করার একমাত্র পথ কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। কয়েক দশকের ব্যবধানে কৃষিতে একদিকে বেড়েছে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে কমেছে জমির পরিমাণ। এ অবস্থায় শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষি যন্ত্রপাতি। তবে কৃষিতে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হলে সেগুলোকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সরকারের ভর্তুকি সহায়তা কার্যকর করার পাশাপাশি এর পরিমাণও বাড়াতে হবে।