মিয়ানমারকে অন্যায় প্রচারণা বন্ধ করতে হবে: বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সকল ভিত্তিহীন অভিযোগ, মিথ্যাচার ও অসত্য বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে এ ধরনের বানোয়াট প্রচারণা বন্ধ করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান পুনরায় স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে জানায়, ‘মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই এ ধরনের বানোয়াট ও সাজানো প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। এর পরিবর্তে তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা কিভাবে নিরাপদে, সম্মানের সাথে ও স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাদের এই বানোয়াট তথ্য, প্রকৃত ঘটনার অপলাপ, অযাচিত অভিযোগের এই অব্যহত প্রচারণা এবং রোহিঙ্গা সংকটকে অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে,তা এড়াতে চাইছে। মিয়ানমার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যেন তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে একটি টেকসই প্রত্যাবাসন ও পুনরেকত্রীকরণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকা আবারও তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ‘মিয়ানমারই এই সংকট দীর্ঘায়িত করার জন্য দায়ী। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার কোন ইচ্ছে বাংলাদেশের নেই।’

রোহিঙ্গাদের সহজ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের আন্তরিকতা প্রশ্নাতিত। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তার যৌক্তিক আচরণ ও কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছে। মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব স্টেট কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, এমনকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিষ্ঠুর অপরাধের জন্য অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের হুমকি প্রদান ও কঠোর সমালোচনা করেছে।

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে আরো জানিয়েছে, কক্সবাজারে মিয়ানমার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কিছু রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চালানো হয়। সে সময় রোহিঙ্গারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, যদি রাখাইন রাজ্যে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও টেকসই জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়, তবেই কেবল তারা স্বেচ্ছায় সেখানে ফিরে যাবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাখাইনে অনিশ্চিত পরিবেশ বজায় রেখে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সহযোগিতার আশা করা উচিত নয়। মিয়ানমার যদি সত্যিকার অর্থেই প্রত্যাবাসনে আন্তরিক হতো, তবে তারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ‘নো ম্যান’স ল্যান্ডে’ থাকা প্রায় ৪ হাজার ২শ’ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা ও রাখাইনের আইডিপি শিবির থেকে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার লোককে পুনর্বাসিত করত।

এতে আরও বলা হয়, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওই লোকগুলোকে তাদের সমাজে পুনর্বাসিত করতে বাংলাদেশের কোন ধরনের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।’ তথ্য:বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান