মুদ্রানীতিতে আগের ভঙ্গি বজায় রয়েছে : ড. সালেহউদ্দীন

এবারের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে মোটামুটি আগের যে ভঙ্গিটা ছিল সেটাই বজায় রাখা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনের বছরেও এর চেয়ে ভাল মুদ্রানীতি ঘোষণা করার সুযোগ কম। সবমিলে এটা মোটামুটি বিনিয়োগ বান্ধব মুদ্রানীতি। সোমবার ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর আজকের বাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সালেহউদ্দীন আহমেদ বলেন, এখানে তেমন কিছু পরিবর্তন হয়নি। কারণ বেসরকারি খাতের ঋন প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬.৮ শতাংশ করা হয়েছে। এতে কোন আপত্তি নেই। আমার মনে হয় এটা ১৮ বা সাড়ে ১৮ করলেও সমস্যা ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা করেনি। কারণ বেসরকারি খাতের ঋনকে সংকোচন করা ঠিক হবে না। দ্বিতীয়ত সরকারের ঋনের বিষয়ে তারা মন্তব্য করেছে এ যায়গায় তারা কিছু করবে না। কিন্তু এখানে আমার প্রশ্ন হলো-সরকার বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট (বড় প্রকল্প) করছে, নির্বাচনের আগে অনেকগুলো ইম্পিলিমেন্ট (বাস্তবায়ন) করবে। যদি এসব প্রকল্পে বাইরের সাহায্য না পায় তাহলে সরকার দেশীয় টাকায় করতে চেষ্টা করবে। সেখানে যদি নেগেটিভ ঋন হয় তাহলে সরকার হয়তো সঞ্চয়পত্র থেকে চাহিদা মেটাতে পারে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র থেকেও যদি এই চাহিদা না মেটে তাহলে তো ব্যাংক খাত থেকে ঋন নিতে হবে। এ বিষয়টা পরিস্কার করার দরকার ছিল। ইনফেশন রেট (মুদ্রাস্ফীতি) যে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলেছে, এটা সম্ভব হতে পারে। এর বেশি করাও ঠিক হবে না। সুতরাং এই টার্গেটটা ঠিক আছে।

‘এখানে আরেকটা বিষয় তারা বলেছে-ঋনটা যেন দীর্ঘমেয়াদি বা মধ্যমেয়াদি না হলে ‘প্রডাক্টিভ ওয়েতে’ হয়, সেটা তারা নিশ্চিত করবে, মনিটরিং করবে। এটা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবে সেটাই দেখার বিষয়। তবে কাজটা করতে পারলে খুবই ভাল হবে। তারা আরেকটা ম্যাজেস দিয়েছে-ঋনগুলো যেন প্রোডাক্টিভ জায়গায় দেওয়া হয়। সেটা ছোট বা মাঝারি হতে পারে। এটি ভাল একটা ম্যাসেজ।’-যোগ করেন সালেহউদ্দীন।

তিনি বলেন, টাকার যে অবমূল্যায়ন হচ্ছে সেটা এরকম থাকায় উচিত বলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে মন্তুব্য করেছে তা সঠিক। কারণ টাকার অবমূল্যায়ন হলে এক্সপোর্ট বাড়বে। রেমিটেন্স (বৈদেশিক আয়) বাড়তে পারে। এটা দেশের জন্য ভাল। তবে এক্ষেত্রে কিছু উল্টো বিষয়ও ঘটবে। যেমন পন্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, মূল্য স্ফীতি হতে পারে। সুতরাং এ বিষয়টাও মাথায় রাখা উচিত।
এর চেয়ে ভাল করার কী সুযোগ ছিল?

জবাবে সালেহউদ্দীন বলেন, আসলে নির্বাচনের আগে এটা এক অর্থে ঠিক আছে। কারণ বেশি সংকোচনশীল করলে ইনভেস্টমেন্ট গ্রোথটা কমে যেত। আবার ছেড়ে দিলে টাকার প্রবাহ বাড়তো, টাকার ছড়াছড়ি দেখা যেত, টাকা দেশে বাইরে চলে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকত।

আজকের বাজার: এনএল/ ওএফ/ ২৯ জানুয়ারি ২০১৮