মুশফিকের সেঞ্চুরিতে দুর্দান্ত সূচনা আবাহনীর

অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে দুর্দান্ত জয় দিয়ে বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) যাত্রা শুরু করলো আবাহনী লিমিটেড। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিন নিজেদের প্রথম ম্যাচে আবাহনী ৮১ রানে হারিয়েছে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে। ১২৪ বলে ১২৭ রানের ম্যাচজয়ী অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন মুশফিক। আজ থেকে শুরু হয় দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর ডিপিএল। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আবাহনী। সদ্য শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাইম। আজ আবাহনীর হয়েও ইনিংম শুরু করেন লিটন-নাইমই। কিন্তু দু’জনের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি। শুন্য হাতে বিদায় নেন তারা। প্রথম ওভারের শেষ বলে পারটেক্সের লেগ-স্পিনার রনি হোসেনের বলে বোল্ড হন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং সিরিজ সেরা খেলোয়াড় ইন ফর্ম লিটন। পরের ওভারের প্রথম বলে নাইমকে বিদায় দেন পেসার জয়নুল ইসলাম। তাই ৭ বলের মধ্যে ৬ রানে আবাহনী হারায় দুই ওপেনারকে। লিটন-নাইম খালি হাতে ফিরলেও, অতিরিক্তের কারনে দলের স্কোর ৬ হয়।

শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেয়া চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুশফিক। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। শান্তকে ১৫ রানে থামান জয়নুল। তৃতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে ২১ রান যোগ করেন মুশফিক। এরপর আমিনুল ইসলামকে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন মুশফিক। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয়েছেন আবাহনীর হয়ে প্রথমবার খেলতে নামা মুশি। ১৪ রান করে থামতে হয় আমিনুল ইসলামকে। এই জুটি দলকে দিতে পারে ২৮ রান। ৫৫ রানের মধ্যে চতুর্থ উইকেট পতনে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন আফিফ হোসেন। কিন্তু ৩ রানের বেশি করতে পারেননি আফিফ। তাই ২১ দশমিক ৪ ওভারে ৬৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় আবাহনী। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলো আকাশী-নীল জার্সিধারিরা। সেই স্বপ্ন পূরণ করেন মুশফিক ও মোসাদ্দেক হোসেন। উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে করুন পরিস্থিতে ভেঙ্গে পড়েননি মুশফিক-মোসাদ্দেক। পারটেক্স বোলারদের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমন করেন বড় জুটি গড়ে দলের স্কোর বাড়িয়ে তোলেন।

একশ, দেড়শ পেরিয়ে দলকে ২শ রানের কোটা অতিক্রম করান মুশফিক ও মোসাদ্দেক। সেই সাথে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১২তম সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে নেন মুশফিক। সেঞ্চুরির পরও নিজের ইনিংস বড় করতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে থামেন মুশফিক। ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১২৪ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেকের সাথে ১৩৯ বলে ১৬০ রান যোগ করেন মুশফিক। ২০১৭ সালের পর ডিপিএলে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুশফিক। ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ২২৭ রানে মুশফিককে বিদায় দেন পারটেক্সের সফল বোলার জয়নুল। মুশফিকের বিদায়ের পরের ওভারে থামতে হয় মোসাদ্দেককেও। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৪ বলে ৬১ রান করেন তিনি। মোসাদ্দেক যখন বিদায় নেন তখন দলের রান ছিলো ২৩২, ইনিংসের বল বাকী ছিলো ২৮টি। শেষ ২৮ বলে ঝড় তুলেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৫টি ছক্কায় ১৫ বলে অপরাজিত ৩৯ রান করেন তিনি। তার সঙ্গী তাইজুল ইসলাম ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ বলে অপরাজিত ১৭ রান করেন। ফলে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় আবাহনী। পারটেক্সের জয়নুল ১০ ওভারে ৫ মেডেনসহ ২৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন।

২৯০ রানের টার্গেটে খেলা পারটেক্সেকে ভালো শুরু করতে দেননি আবাহনীর দুই পেসার সাইফউদ্দিন ও মেহেদি হাসান রানা। ৩ ওভারে ২০ রানের মধ্যে পারটেক্সের দুই ওপেনার হাসানুজ্জামান ও আব্বাস মুসাকে বিদায় দেন আবাহনী দুই উদ্বোধনী বোলার। হাসানুজ্জামানকে ৮ রানে সাইফউদ্দিন ও মুসাকে ৪ রানে আউট করেন রানা। দুই ওপেনারকে হারানোর পর দলের হাল ধরেন সায়েম আলম ও অধিনায়ক তাসামুল হক। দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সায়েম ২৪ ও তাসামুল ৪৩ রান করেন। পাঁচ নম্বরে নামা মঈন খানও ৫ রানে আটকে যান। এমন অবস্থায় ১১০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে পারটেক্স। তবে ষষ্ঠ উইকেটে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন উইকেটরক্ষক ধীমান ঘোষ ও নাজমুল হোসেন মিলন। তবে দলের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হন ধীমান ও মিলন। ধীমান ৩৬ ও মিলন ৫৩ রান করেন। এরপর পারেটক্সের লেজ কেটে ফেলেন রানা। শেষ পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ৪ ওভারে ২০৮ রানেই অলআউট হয় পারটেক্স। আবাহনীর রানা ৫৫ রানে ৪টি, তাইজুল ৩০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন আবাহনীর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান