মূত্রনালির সংক্রমণ, কারণ ও প্রতিকার

মূত্রপথের সংক্রমণ নারী ও পুরুষের মাঝে একটি বহুল পরিলক্ষিত ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ জনিত রোগ। মূত্রনালি সংক্রমণের সব ক্ষেত্রেই এর লক্ষণ দেখা যায়। আবার কোনো প্রকার লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে। এটি জটিল সংক্রমণে রূপ নিতে পারে আবার নাও পারে। একবার সংক্রমণ হলে পরবর্তিতে এই সংক্রমণ পরবর্তিতে কিডনি সংক্রমণ বা পাইলোনেফ্রাইটিস, মুত্রনালির সংক্রমণ অথবা মূত্রথলির সংক্রমণ বা সিস্টাইটিসে রূপ নিতে পারে। তাই এই সমস্যা হয়েছে জানলে কোনোভাবেই হেলা করা ঠিক হবে না। তাহলে জেনে নিন কেনো মূত্রনালি সংক্রমণ হয়ে থাকে। আর এর লক্ষণগুলো কি কি।

কেনো হয়:
বহির্বিশ্বে পুরুষ এবং নারীর মূত্রনালীতে বিভিন্ন অস্ত্রপচারের সময় অস্ত্রপচারের সরঞ্জামাদি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরা একটা সাধারণ ঝুঁকিপুর্ণ কারণ, যদিও আমাদের দেশে এটি তেমন ঘটেনা।

সাধারণত তরুণী মেয়েদের ক্ষেত্রে যেসব কারণে এই সংক্রমণ হয়ে থাকে তা হল, জিনগত কারণে, মায়ের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটলে, দীর্ঘ সময় মূত্র চেপে রাখলে, অস্বাস্থ্যকর বা নোংরা পরিবেশে যৌনমিলন করলে, ডায়াফ্রাম (মেয়েদের কনডম) ও শুক্রাণু নাশক এর ব্যবহার করলে, সাধারণত ১৫ বছরের কম হলে এবং মূত্রনালী সরু বা বেশি সংকীর্ণ হলে।

বয়স্কা নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত বয়সে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে, যাদের অ-কোষ বা প্রোস্টেটে বিভিন্ন রোগ হয় এবং মূত্রনালিতে বাঁধার সৃষ্টি হয়, তাদের মূত্রপথের সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

তরুণদের ক্ষেত্রে তাদেরই এ রোগ হয়, যাদের যৌনসঙ্গী এ রোগে আক্রান্ত, যারা পায়ুকাম করে এবং যাদের খতনা বা মুসলমানি করানো হয়নি। শিশুদের এ রোগ সাধারণত আশপাশের অংশ থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে।

যেসব অণুজীব এই ইউটিআই-এর জন্য দ্বায়ী, তারা হল ঊংযবৎরপযরধ পড়ষর, ঝঃধঢ়যুষড়পড়পপঁং ংধঢ়ৎড়ঢ়যুঃরপঁং, চৎড়ঃবঁং সরৎধনরষরং এবং কষবনংরবষষধ ঢ়হবঁসড়হরধ ।

উপসর্গ ও রোগ নির্ণয়:
মূত্রপথের সংক্রমণের অনেকের ক্ষেত্রেই কোনরূপ লক্ষণ প্রকাশ পায় না, আবার অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত যে লক্ষণটি দেখা যায় তা হল ঘনঘন এবং সেইসাথে যন্ত্রণাময় প্রস্রাব। এর সাথে তলপেটে ব্যথাও হতে পারে।

এই লক্ষণ হঠাৎ করেই একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির বেলায় দেখা দিতে পারে যিনি অন্য সব দিক থেকে সম্পুর্ণ সুস্থ। নবজাতকদের ক্ষেত্রে সাধারণত, জ্বর, অস্বস্তি, বমি বা বদহজম এবং জন্ডিস, এসমস্ত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

অনেকে বিভিন্ন কারণে ক্যাথেটার (সিরিঞ্জ ও পাইপের মাধ্যমে সরাসরি মূত্রথলি হতে মূত্র অপসারণ প্রক্রিয়া, ঈধঃযবঃবৎরুধঃরড়হ) ব্যাবহার করতে হয়, তাদের এ প্রক্রিয়াধীন থাকার কযয়েকদিন বাদে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

রোগের উপসর্গ দেখা দিলে মূত্র ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ সনাক্ত করা যায়, তবে উপসর্গ দেখা না দিলে ধারাবাহিকভাবে মূত্রপরীক্ষা করা ছাড়া এ রোগ নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। বর্তমানে বৃক্কের এক্স-রে এবং আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমেও এ রোগ সনাক্ত করা হয়।

চিকিৎসা:
ইউটিআই আক্রান্ত হলে তার কোন উপসর্গ দেখা না দিলে চিকিৎসার তেমন প্রযয়োজন হয় না, কারণ দেহ তার নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যাবস্থার মাধ্যমে কিছুদিন বাদে এ রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় নারীদের যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন।

যৌনসঙ্গীরও চিকিৎসার প্রযয়োজন যদি সেও এই রোগের আক্রান্ত হন। ইউটিআই আপাতদৃষ্টে বেশ ছোটখাট রোগ মনে হলেও, দীর্ঘকাল ধরে এ রোগ বয়ে চললে একপর্যায়ে সেপ্টিক শক এবং কিডনির সংক্রমণ দেখা দিতে পারে, যা আমাদের কারোই কাম্য নয়।

আমাদের দেশে বিশেষত নারীরা লজ্জার বশে এ রোগ বয়ে চলেন দিনের পর দিন। অথচ এর চিকিৎসা অত্যন্ত সহজলভ্য। আবার কিছু সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলেই নারীদের জন্য এ রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব, যৌনাঙ্গ সবসময় পরিষ্কার ও শুকনা রাখা, শুক্রাণু নাশক জেল বা ক্রিম ব্যবহার না করা এবং ক্যাথেটার ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়মিত ক্যাথেটার পরিবর্তন করা।
আজকের বাজার: সালি / ৩১ জানুয়ারি ২০১৮