যশোরে‘ড্রিপ ইরিগেশন’পদ্ধতিতে চাষে সফলতা, খুশী কৃষকরা

কৃষকদের বারোমাসি ফুল ও সবজি চাষের জন্য যশোরে তিন বছর মেয়াদি‘ড্রিপ ইরিগেশন’কর্মসূচি গ্রহণ করে ব্যাপক সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।‘ড্রিপ ইরিগেশন’একটি আধুনিক সেচ ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে কৃষকরা কূপ খননের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে এবং সারা বছর ধরে সেচের জন্য তা ব্যবহার করতে পারেন।

এই পদ্ধতির সফলতার প্রেক্ষিতে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের ২৬টি উপজেলায় নতুন করে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিএডিসি যশোরের সেচ বিভাগ। যার নাম দেয়া হয়েছে‘যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল ও সবজি উৎপাদন সম্প্রসারণে ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচি।’

ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচতি যশোরের গদখালিতে ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচির আওতায় ১৫টি ডাগওয়েল (পাতকুয়া) ও ৬টি শেড (পলি হাউস) নির্মাণ করা হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, মাটির গভীর থেকে পানি উত্তোলন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পানিতে আর্সেনিক থাকে না। তাছাড়া সৌরশক্তি ব্যবহার করায় বিদ্যুৎ বা ডিজেলের ব্যবহারও নেই এবং পলি হাউজে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও পানি সরবরাহের কারণে অপচয়ও নেই। পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় কীটনাশকের ব্যবহারও তেমন দরকার হয় না। সব মিলিয়ে এখানে ফুল, সবজি উৎপাদন খরচ কম এবং ফলন অনেক বেশি হয়।

ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান কবীর বলেন,‘এই প্রযুক্তি আসার পর চাষাবাদের জন্য ডাগওয়েল ও শেড দুটি পদ্ধতিই গ্রহণ করি। ডাগওয়েল বা পাতকুয়া থেকে সৌরচালিত পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হয়। আর বর্ষা মৌসুমে উপরে থাকা চোঙার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি কুয়ায় নেমে আসে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি চলে যায় ফুল ও সবজি ক্ষেতে।’

বিএডিসির এই কর্মসূচির প্রথম গ্রাহক ফুল ও সবজি চাষী ইসমাইল হোসেন বলেন,‘আমার ২৪ বিঘা জমির মধ্যে ১২ বিঘা ড্রিপ ইরিগেশনের আওতায়। প্রথমে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করলেও, পরে তা বিস্তৃত হয়।’

আসাদুল ইসলাম নামে এক চাষী জানান, এই সেচের আওতায় আসতে তাদের ২২ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়েছে। সিকিউরিটি মানি কম হওয়ায় কৃষকদের এই পদ্ধতি গ্রহণ বেশ লাভজনক। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে করতে হলে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে।

বিএডিসি (সেচ) যশোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল ও সবজি উৎপাদন সম্প্রসারণে তিন বছর মেয়াদি ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচি শুরু হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। এতে বরাদ্দ হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, ঢালা ও সেচে পানির অপচয় হয়। তবে ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে চাষি উপকৃত হচ্ছেন। ফুল ও সবজি চাষে খরচ এবং ঝুঁকিও কমছে। এটি কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল রশিদ বলেন,‘এই উদ্যোগ বিদ্যুৎ-জ্বালানি মুক্ত ও পানি সাশ্রয়ী। ঝিকরগাছা অঞ্চলের কৃষকরা এর সুফল পেয়েছেন, তারা সানন্দে এটি গ্রহণ করেছেন। এই কর্মসূচির সফলতায় দেশের ২৬টি উপজেলায় যেখানে বারোমাসি ফুল ও সবজিচাষ করা হয়, সেখানে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আথনূর রহমান