রাজশাহীর বহরইল গ্রামে অজ্ঞাত রোগে পাঁচজনের মৃত্যু

রাজশাহীর তানোর উপজেলার বহরইল গ্রামে দুইদিনে অজ্ঞাত রোগে চারজনের মৃত্যুর পর শনিবার আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অজ্ঞাত রোগে সর্বশেষ মৃত্যুর শিকার রাহেলা বেগম (৪৮) ওই গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী।

এছাড়া গ্রামটিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কমপক্ষে আরও ৮/১০ জন। এতে সংশ্লিষ্ট গ্রাম ছাড়াও আশেপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে কারণ অনুসন্ধানে ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

মৃত রাহেলা বেগমের স্বামী আনোয়ার হোসেন জানান, তার স্ত্রী’র বড় কোনো অসুখ ছিল না। সে সুস্থই ছিল। শুক্রবার বিকালে পাশের মুণ্ডুমালা বাজারে গিয়ে পোশাকও কিনে এনেছেন। রাতে খাওয়ার জন্য মুরগি এনে রান্না করে খেয়েছি সবাই। ভোর রাতে তিনি হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠেন। তারপরে বলতে থাকেন তার বুক জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। আমরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যেই তিনি মারা যান।

স্থানীয়রা জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে হঠাৎ মারা যায় নুরি বিবি (৬৫) ও আলী (৪৫) নামের দুজন। তাদের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার পরই পরদিন সকালে রুবেল নামের এক ব্যক্তির চারদিনের শিশু সন্তান মারা যায়। একইদিন সকালে জমিতে কাজ করতে গিয়ে একই গ্রামের সমশের আলী (৬৫) মারা যায়।

এই চারজনের মৃত্যুর পাঁচ দিনের মাথায় অজ্ঞাত রোগে রাহেলা বেগমের মৃত্যুর খবরে ওই গ্রামসহ আসপাশের গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় ওই এলাকার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক কাটাতে এবং মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. রোজিয়ারা বেগম ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছেন। মেডিকেল টিম শনিবার বহরইল গ্রামে গিয়ে রাহেলা বেগমের মৃত্যুর কারণ ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া ইতিমধ্যে বাকি চারজনের মৃত্যুর বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন।

টিএইচও ডা: রোজিয়ারা বেগম গ্রামবাসীকে আতঙ্ক না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি কারণ অনুসন্ধান ও গ্রামবাসীর চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছেন।

ডা. রোজিয়ারা বেগম বলেন, রাহেলা বেগমের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এই বিশেজ্ঞ টিম বহরইল গ্রামে গিয়ে মৃত্যুর কারণ, ধরণসহ নানা বিষয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে এসেছেন। কি কারণে রাহেলাসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়েও বিশেজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে এসব মৃত্যুগুলো স্বাভাবিক মনে হলেও কোনো ভাইরাসজনিত কিনা বা সে গ্রামের মানুষ খেজুরের রস খেয়েছেন কিনা এসব মাথায় রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

উপজেলা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছি। তাছাড়া পাঁচদিন আগে শিশুসহ চারজনের মৃত্যু সংবাদে জেলা সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছেন।

বহরইল গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল লতিব বলেন, অজ্ঞাত রোগ নিয়ে বেশ আতঙ্কে আছে ওই গ্রামের মানুষ। সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না।

তিনি বলেন, শুধু বহরইল গ্রামই নয়, এর প্রভাবে আসপাশের গ্রামেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অজ্ঞাত রোগে মৃত্যুর অধিকতর কারণ অনুসন্ধানের জন্য আরও অভিজ্ঞ মেডিকেল টিম পাঠানোর জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান স্থানীয় এই ইউপি সদস্য। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ