রাজশাহীতে মা-ছেলে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন

রাজশাহীর বাগমারার দেউলা গ্রামে মা-ছেলে হত্যা মামলায় তিনজনকে ফাঁসি এবং ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার সকালে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এ রায় দেন।

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, নিহত আকলিমা বেগমের দেবর দেউলা রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন, দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব ও দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে আবদুর রাজ্জাক।

আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, দুর্গাপুরের শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি, একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন, দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম মনির। এরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে এ হত্যাকান্ডে অংশ নেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলেই মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটিতে মোট ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। এরপর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে বাগমারার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় এই জোড়া খুনের তদন্ত নানা মোড় নেয়। তিন দফায় বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা।

সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত শুরু করে। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। দিনে দিনে তারা বড় হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে তার ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর তার ভাই জাহিদ ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চায়। এ নিয়েই চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিলো।

দুলাল আরো জানান, তিনি আলাদা বাড়ি করে থাকেন। আর তার মা ও ভাই এক বাড়িতে থাকতেন। এই বাড়িতে জাহিদ না থাকলে আবুল হোসেন বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে ওই নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করা হতো। এসবের প্রতিবাদ করতেন তার মা। এ নিয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে যায়।

২০১৩ সালে জাহিদের পড়াশোনার জন্য তার মা আকলিমা বেগম রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হাবিবুর মাদক ব্যবসা করতেন। এই কাজে তিনি আকলিমাকে ব্যবহারের চেষ্টা করতেন। কিন্তু আকলিমা এতে রাজি হননি। আর আবুল হোসেনের সঙ্গে হাবিবুরের পরিচয় ছিল। এসব দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে তার মা ও ভাইয়ের গলাকেটে হত্যা করেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, মা-ছেলেকে অত্যন্ত নির্মমভাবে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, আদালতে এ ঘটনার সঙ্গে আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পেরেছি।

আজকের বাজার/এমএইচ