রাষ্ট্রপতির মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ অসাধু ব্যবসায়ী, লুটেরা, মুনাফাখোর ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এরা গুজব ছড়িয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। রাষ্ট্রপতি আজ শনিবার বিকালে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর, লুটেরা ও মজুতদারদের মধ্যেও ঐক্য রয়েছে। এখন এই সব দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ সম্প্রতি পেঁয়াজ, লবন ও চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি এই পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, এতে সাধারণ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পেঁয়াজ, লবন ও চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদের ব্যাপারে গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘গণমাধ্যম কর্মীদেরও এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।’

পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হ্রাস পায়। এমনকি রমজান মাসে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষও পণ্যের মূল্যহ্রাস করে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। এদেশে রমজান মাস এলেই ইফতারি তৈরিতে ব্যবহৃত বেগুন, শশা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘জনগণকে অবশ্যই এই দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি উচ্চশিক্ষা যাতে কোনক্রমেই সনদসর্বস্ব না হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন মানসম্মত না হলে শিক্ষা মূল্যহীন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ আরো বলেন, জাতির উন্নয়ন, উন্নত সমাজ গঠন ও বিশ্বমানের গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পাঠ্যবিষয়ের সাথে সাথে বহির্জগতের জ্ঞানভার থেকেও জ্ঞান আহরণ করতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কেও জানতে হবে। নিজেদের কর্মী ও জ্ঞানী করে তোলাই শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্য।’

শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর।

তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহ্বান জানান। গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শিক্ষিত হয়ে তোমরা কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। মনে রেখ, জ্ঞান, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের কোন শেষ নেই।’

তিনি দেশের কল্যাণে নিজেদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে গ্রাজুয়েটদের পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তোমাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। তোমরা তোমাদের প্রতিভা ও কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে। মোট ৩ হাজার ২৫০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাজুয়েট লাভ করেছে। এদের মধ্যে চারজনকে চমৎকার ফলাফলের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণ পদক প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন উপস্থিত ছিলেন।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপুমনি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ভিনসেন্ট চ্যাং ও কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী অরিত্র রায় আর্চ। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান