রাষ্ট্রায়ত্ত দুই ব্যাংকের খেলাপী ঋণ কমানোর নির্দেশ গভর্নরের

রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত দুইটি ব্যাংকের সুশাসন বাড়িয়ে খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ওই ব্যাংক দুইটি হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।

১ অক্টোবর বুধবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মিনি কনফারেন্স হলে ব্যাংক দুইটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীকে ডেকে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এসময় ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, নিয়মিত তদারকি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই দুই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংক দুইটির আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে তাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে ব্যাংক দুইটির শীর্ষ ব্যক্তিদের সর্তক করা হয়েছে। তাদেরকে ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সুশাসন প্রশ্নে কোনো ছাড় যেন না দেওয়া হয়- সেটি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।

এছাড়া ঋণ অনুমোদন করার আগে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ব্যাংকিং নিয়ম-নীতি পরিপালন করা হয় সেটিও কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ঋণ অনুমোদনে যাতে কোনো ধরনের প্রভাবকে প্রশ্রয় না দেওয়া হয়। কারণ এতে ঋণ খেলাপী হয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সাধারণ মানুষের আমানত নিয়ে কোনো ধরনের হেয়ালিপনায় না যেতেও স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে বিকেবি ও রাকাব চেয়ারম্যান ও এমডিকে।

জানা গেছে, খেলাপী ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি, লোকসানী শাখাসহ ব্যাংকের আর্থিক সূচকে দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে ব্যাংক দুইটির। পরিস্থিতি বিবেচনায় এর আগেও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সময় বৈঠক করা হয়েছে। তবে কার্যত তাতে কোনো উন্নতি হয়নি। অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহল থেকে বার বার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা নিয়ে সমালোচনা সামনে আসে নিয়মিত। অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মতো কৃষি ব্যাংক ও রাকাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক সই করা থাকলেও তা পরিপালন করেনা ব্যাংকগুলো।

গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও লোকসানি শাখা বেড়ে গেছে উদ্বেগজনক হারে। হালনাগাদ হিসাব মতে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। একই সময়ে মূলধন ঘাটতি ৭ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা; আর প্রভিশন ঘাটতি ৯৩ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, রাকাবের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, মূলধন ঘাটতি ৭১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্যমতে, বিকেবির ১ হাজার ৩১ শাখার মধ্যে ১৪৮ টি এবং রাকাবের ৩৭৯ টির মধ্যে ১১৮ টি লোকসানি শাখা রয়েছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৮ অক্টোবর ২০১৭