রূপগঞ্জকে হারিয়ে আবাহনীর শিরোপা পুনরুদ্ধার

চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত ছিল যেন আবাহনীর। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যে মানের দল তারা গড়েছে, শুধু কাগজে-কলমেই নয়, আক্ষরিক অর্থেই শক্তিশালী দল ছিল তারা। তবুও, শিরোপা নিষ্পত্তি হয়েছে একেবারে শেষ ম্যাচে এসে।

এক বছর পর ফেলা শিরোপা পুনরুদ্ধার করলো আবাহনী। লিগের শেষ ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন, এমন সমীকরণ সামনে রেখে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নেমেছিল ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। জয় দিয়েই রঙিন করলো শিরোপা উৎসব। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৯৪ রানে হারিয়ে এক বছর বিরতি দিয়ে ঘরে তুলেছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা।

বৃহস্পতিবার শিরোপার ত্রিমুখী লড়াইয়ে নেমেছিল রূপগঞ্জ, শেখ জামাল ও আবাহনী। তবে শেখ জামাল বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় আগেভাগেই শিরোপার সুবাস পেতে থাকে আবাহনী। কেননা তখন রূপগঞ্জের বিপক্ষে হারলেও শিরোপা হারানোর শঙ্কা ছিল না তাদের।

চলতি মৌসুমে শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নিয়েই দল গঠন করে আবাহনী। মাশরাফিকে নিয়ে আসে শাইনপুকুর থেকে। পুরো টুর্নামেন্টে বল হাতে দারুণ পারফর্ম করেছেন এই পেসার। এমনকি ব্যাট হাতেও দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবারই যেমন ৮ বলে ৪ ছক্কায় খেলেন ২৮ রানের ইনিংস, আর ম্যাচ শেষে মাতেন শিরোপা পুনরুদ্ধারের আনন্দে।

আগে ব্যাটিং করা আবাহনী ৬ উইকেটে ৩৭৪ রানের পাহাড় গড়ে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন নাসির হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। সত্যিকার অধিনায়কের মতো ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাসির। ৯১ বলে খেলেন ১২৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছিলেন ১৫ চার ও ৪ ছক্কায়। তার সঙ্গে ওপেনিংয়ে শান্ত ১০৭ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় করেন ১১৩ রান।

আবাহনীর রান পাহাড়ে ডিঙাতে ব্যর্থ হওয়া রূপগঞ্জ ৮.২ ওভার আগেই অলআউট হয় ২৮০ রানে। এই জয়ের কৃতিত্ব দলের সব বোলারই পাবেন। তবে বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দুর্দান্ত বোলিং করে শুরুতেই চেপে ধরেন মাশরাফি ও মেহেদী হাসান। ৪১ রানে ২ উইকেট হারানো রূপগঞ্জের স্বপ্নটা কিছুক্ষণ বাঁচিয়ে রাখেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ নাঈম। তৃতীয় উইকেটে তারা ৯১ রানের জুটি গড়েন। নাসিরের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে মোহাম্মদ নাঈম খেলেছেন ৭০ রানের দারুণ এক ইনিংস। এরপর মুশফিকও ফিরে যান ৬৭ রান করে। বাকি সময়টুকু অধিনায়ক নাঈম ইসলাম একা লড়াই করলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। নাঈম ৬৮ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন ৭৬ রান।

আবাহনীর হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন নাসির হোসেন, সানজামুল ইসলাম, সন্দ্বীপ রায় ও মেহেদী হাসান মিরাজ। একটি উইকেট নেন মাশরাফি।

এর আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে রানের পাহাড় গড়ে আবাহনী। রূপগঞ্জের বিপক্ষে শুরু থেকে দাপটের সঙ্গে খেলেছে তারা, যার নেতৃত্ব সামনে থেকে দিয়েছেন নাসির। শান্ত ও নাসিরের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রান করে আবাহনী। অধিনায়কোচিত এক ইনিংস খেলে দলকে সাড়ে তিন শ ছাড়ানো রান এনে দেন নাসির। তাকে উপযুক্ত সঙ্গ দেন শান্ত। তিনিও করেছেন সেঞ্চুরি।

উদ্বোধনী জুটিতে এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে ৯২ রানের জুটি গড়েন নাজমুল। ৪৮ রানের ব্যবধানে পারভেজ রসুল ৩ উইকেট নিয়ে আবাহনীকে বিপদে ফেলেন।

এনামুল ৫১ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ৫৭ রানে আউট হওয়ার পর রসুলের টানা দুই ওভারে হানুমা বিহারি (৬) ও মোহাম্মদ মিঠুন (১) সাজঘরে ফেরেন। এরপর নাজমুলকে সঙ্গে নিয়ে ১৮৭ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন নাসির। দলীয় ৩১০ রানে অধিনায়ককে হারানোর পর আবাহনীকে এগিয়ে নেন নাজমুল। ৯৭ বলে ১০টি চার ও ২টি ছয়ে সেঞ্চুরি করা এই ওপেনার থেমেছেন ১১৩ রানে। তার ১০৭ বলের ইনিংসে রয়েছে ১১ চার ও ২ ছয়।

রূপগঞ্জের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন রসুল। আর দুটি পান মোহাম্মদ শহীদ।

আরএম/