রূপপুরের বালিশকাণ্ড: তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চায় হাইকোর্ট

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের গ্রিন সিটি আবাসিক পল্লীর আসবাব কেনা ও তোলায় অস্বাভাবিক দাম দেখানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। অবকাশকালীন ছুটি ২৩ মে শুরু হয়ে শেষ হবে ১৫ জুন।

ওই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন জানিয়ে করা এক রিটের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর যুগ্ম-বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে।

আদালত বলেছেন, যেহেতু এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, আমরা ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চাই। এরপরই এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেব।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রিটকারী আইনজীবী যখন বালিশসহ আসবাব কেনা এবং ফ্ল্যাটে তোলার খরচের বিষয়টি তুলে ধরছিলেন, সেটা শুনে হাসতে থাকেন দুই বিচারপতি।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।

পরে তিনি বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় আমরা দেখেছি, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কেনাকাটায় অস্বাভাবিক মূল্য ধরা হয়েছে। সে বিষয়ে এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটির প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তাই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি।’

সৈয়দ সাইয়েদুল হক বলেন, ‘প্রত্যেক কাজের একটা জবাবদিহিতা থাকা দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। তাছাড়া এই প্রকল্পে যে টাকা খরচ দেখানো হয়েছে তা এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা। তাই বিষয়টি জবাবদিহিতায় আসা উচিত।’

রিটে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিবসহ ৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা।

একেকটি খাট কেনা দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। আর খাট ওপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। প্রতিটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা। আর টেলিভিশন ওপরে ওঠাতে দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬৩৮ টাকার খরচ।

বিছানার খরচ ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা দেখানো হয়েছে; তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। প্রতিটি ওয়ারড্রোব কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা। আর তা ওঠাতে দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকার খরচ।

এরকম বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি তদন্তে উচ্চপর্যায়ের পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। কমিটি দুটিকে আগামী সাত কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় রূপপুরের আসবাবপত্র সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনাও দিয়েছে।

আজকের বাজার/এমএইচ