রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঝুঁকিতে: প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের জন্য পাহাড় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করার কারণে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এ জন্য (রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি) ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে…পাহাড় ও জঙ্গল কেটে সেখানে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। যার ফলে, ওই এলাকা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে উঠছে।’

বুধবার, ১০ জুলাই রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ঢাকা মিটিং অব দ্য গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

মিয়ানমারের এ বিপুল সংখ্যক নাগরিককে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশ কাঁধে বিরাট বোঝা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন চায়। ‘তারা যত দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যাবে তা বাংলাদেশের জন্য তত ভালো হবে এবং আমি সেটা বিশ্বাস করি,’ যোগ করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ প্রশমন ব্যবস্থা না থাকলে অভিযোজন প্রক্রিয়ার বিস্তার হবে না।

বর্তমান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রচুর সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমি আপনাদের সবাইকে সচেতন হওয়ার এবং নিজ দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সর্বোত্তম অভিযোজন ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী সমাধান ও ঝুঁকি হ্রাসের সুযোগ গ্রহণ করতে চায়।

তিনি জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে এ সংস্থার প্রতিবেদনের পরামর্শগুলো দেখার জন্য অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তিনি অপেক্ষা করছেন। তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) পক্ষে কথা বলার জন্য তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তথ্য প্রমাণে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ জলবায়ু অভিবাসী রয়েছে এবং এ সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি, শস্য, পশু ও মৎস্য সম্পদের মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ তার ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে এবং মানুষের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০’ শীর্ষক প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।

‘বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী ও কার্যকর ব্যবস্থার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে,’ যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা সি হেইনি, বিশ্বব্যাংকের সিইও ও গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের কো-চেয়ার ড. ক্রিস্টালিনা জর্জিভা, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের বর্তমান সভাপতি ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তথ্য-ইউএনবি।