লতিফের পোশাকের দোকান ব্যবসায় দেড় লাখ টাকা মাসে আয়

আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর এই ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিপনী বিতান গুলোতে পোশাক ক্রয় করতে ভীড় জমাচ্ছে ক্রেতারা। এই দৌড়ে ছেলেদের থেকে মেয়েরা কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন। এজন্য মেয়েদের গাউন, ডাবল থ্রি পিসসহ রকমারি পোশাকের পরসা সাজিয়েছে পোশাক ব্যবসায়ীরা। তবে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন মার্কেট, শো-রুম ও মহল্লার দোকান গুলোতে ছেলেদের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে রমরমা। আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে ছেলেদের রেডিমেড পোশাক বাজারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা।

ছেলেদের পোশাক বাজার নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পাশের এক মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী মো. আব্দুল লতিফের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয় আজকের বাজারের। লতিফ দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটানোর পরে দেশে ফিরে সল্প পুঁজি নিয়ে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেন। নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। আজকের আয়োজনে আমরা একজন সল্প পুঁজির ব্যবসায়ী থেকে লতিফের সফল ব্যবসায়ী হওয়ার গল্প জানবো।

লতিফের ব্যবসা শুরু: দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটানোর পরে দেশে ফিরে ২০১৩ সালে পোশাক ব্যবসায় পা রাখেন লতিফ। আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার মত পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসায় পথ চলা শুরু হয়েছিলো লতিফের। শুরু থেকে প্রায় সাত বছর পেরেয়ি এখন লতিফের ব্যবসায়ী পুঁজি দাড়িয়েছে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকায়। আর প্রতিমাসে এখান থেকে তার মুনফা আসে প্রায় দেড় লাখ টাকা।

লতিফের পছন্দে ছেলেদের পোশাক: ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাক নিয়ে লতিফের ব্যবসা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে লতিফের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসে। সে লক্ষ্য করলো যে, একটা দোকানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাক ডিসপ্লে করা কষ্টসাধ্য। কারণ, এখানে ছেলে কিংবা মেয়ে যাদের পোশাকই রাখা হোক না কেন, সেই শ্রেণীর শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত সবার আইটেমই থাকতে হবে। তাই লতিফ ছেলেদের আইটেমকে তার পছন্দে বেছে নিয়েছিলো।

লতিফের কথায় ছেলেদের পোশাক ব্যবসার সম্ভাবনা

কিভাবে ব্যবসা শুরু করা যায়: কেউ যদি এই ব্যবসা করতে চায়, তাহলে তার কিছু অভিঙ্গতা থাকতে হবে। তাকে অবশ্যই দীর্ঘদিন এই ব্যবসার সাথে জড়িত থাকতে হবে। অথাৎ তাকে অন্য কোন দোকানে অন্তত ছয় মাস কাজ করতে হবে। কেননা, সে কোথা থেকে পণ্য কালেকশন করবে, কোন পণ্যটা কিভাবে সেল করবে এবং কোন পণ্যটা তার দোকানে চলবে আর কোনটা চলবে না, এসব বিষয়ে ধারনা নিতে তার ছয় থেকে এক বছরের কাজের অভিঙ্গতা থাকতে হবে।

কোথা থেকে পণ্য সংগ্রহ করা যায়: পলওয়েল, গাজীভবন ও কেরানীগঞ্জ থেকে সাধারণত ছেলেদের আইটেমগুলো কালেকশন করা যায়। ছেলেদের বাচ্চা আইটেমগুলোর কালেকশন করা হয় গাজীভবন থেকে। আর চায়না ও থাইল্যান্ডের শার্ট, জিন্স প্যান্ট, গেভাডিন প্যান্ট ও থ্রী কোয়াটারের আইটেমগুলো পলওয়েল থেকে কালেকশন করা হয়। বাকি আইটেমগুলো কেরানীগঞ্জ থেকে কালেকশন করা যায়। তৈরি পোশাক পাইকারী সেলের মূল কেন্দ্রই হলো কেরানীগঞ্জ। এখান থেকে শুধু রাজধানীর ব্যবসায়ীরা নয়, সারাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা মালামাল সংগ্রহ করে থাকে।

ব্যবসায় রিস্ক: এই ব্যবসা করার জন্য রানিং পয়েন্ট হতে হবে। যদি দোকান রানিং পয়েন্টে না হয়, তাহলে এক মাস/বছরের পোডাক্ট অন্য মাস/বছরে নাও চলতে পারে। সেক্ষেত্রে লসের সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার পাইকারী মার্কেট থেকে পণ্য ক্রয় করার সময় চয়েজফুল আইটেম খুঁজে নিতে হবে। চয়েজফুল/কোয়ালিটিফুল পণ্য দোকানে তুলতে না পারলে মার্কেটে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

শিক্ষিত বেকারদের জন্য এই ব্যবসায় সম্ভাবনা: আমাদের দেশের বেকার সমস্যা চরমে। তাই বেকার যুবকেরা একটা সময় হতাশাগ্রস্থ হয়ে দেশের বাহিরে পাড়ি জমানোর কথা চিন্তা করেন। তাদের মধ্যে অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও বেকার সমস্যায় ভূগছেন। তারা যদি অল্প পুঁজি (আনুমানিক দুই থেকে তিন লাখ টাকা) নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে তাহলেও আস্তে আস্তে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখন দুই-তিন লাখ টাকা ব্যবস্থা করা কারো জন্য অসাধ্য হবেনা। যেখানে তারা ৫/৭ লাখ টাকা দিয়ে দেশের বাহিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন, সেখানে তারা যদি এর থেকেও অনেক কম পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে, তবে সেটা তাদের জন্য সম্ভাবনার পথ তৈরি করতে পারে।