লবণপানি হতে পারে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি

শরীর সুস্থ রাখতে আমরা কত কিছুই না করি। অ্যালোপ্যাথি থেকে হোমিওপ্যাথি সব ধরনের চিকিৎসকের পরামর্শে কাজ করি। কিন্তু আমাদের হাতের নাগালেই কিছু সহজ সমাধান রয়েছে – যা আমরা জানি না বা সেদিকে আমাদের নজর থাকে না। সে রকম সুস্থ থাকার একটি ঘরোয়া পদ্ধতি লবণপানি। কিন্তু আমাদের কর্পোরেট জীবনে দেখা যায় না এর ব্যাবহার।

মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে লবণপানি। লবণের মধ্যে থাকা পজেটিভ আইকন, পানির মধ্যে থাকা নেগেটিভ আইকন এর সঙ্গে মিশে ইলেকট্রিকাল চার্জেসের মাত্রা বাড়ায়। ফলে লবণপানি পান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে শক্তির ঘাটতি পূরণ হয়।

লবণপানির কিছু উপকারিতা:

১.পানির ঘাটতি দূর হয়:

সাধারণত পিপাসা পেলে আমরা পানি পান করি। স্বাভাবিক নিয়মেই এই পানি আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু পানির সঙ্গে অল্প লবণ মিশিয়ে তা পান করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। বেশি সময় ধরে শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে লবণ। ফলে খুব সহজেই পানির মধ্যে থাকা উপকারি উপাদান শোষণ করতে পারে শরীর।

২. হজম ক্ষমতার উন্নতি:

আমাদের স্যালিভার গ্যাল্ডকে মারাত্মক অ্যাকটিভ করে লবণপানি। ফলে বেশি মাত্রায় স্যালাইভা উৎপাদন হওয়ায় খাবার হজম হতে কোনো সমস্যাই হয় না। অন্যদিকে লবণের প্রভাবে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লরিক অ্যাসিড এবং বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণও বেড়ে যায়। এই দুইটি উপাদান দ্রুত খাবারকে ভেঙে ফেলে। ফলে খাবার হজমের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। একইসঙ্গে বদ হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

৩. হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:

একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, শরীরে দীর্ঘ দিন ধরে লবণের ঘাটতি থাকলে নানা রকম ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। যেমন- মেটাবলিক ডিজঅর্ডার, হার্ট ডিজিজ, কগনিশান লস প্রভৃতি।

প্রতিদিন আমাদের শরীরে কম-বেশি ৮ গ্রাম লবণের প্রয়োজন, এই পরিমাণ লবণ শরীরে প্রবেশ না করলে দেহ ক্রাইসিস মুডে চলে যায়। বেশি দিন যদি শরীর এমন ক্রাইসিস মুডে থাকলে রেনিন নামে এক ধরনের এনজাইম এবং অ্যালডোস্টেরন নামে এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই দুইটি উপাদানের মাত্রা বাড়লে শরীরে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। একইসঙ্গে ইনফ্লেমেটরি এজেন্টের মাত্রা বাড়ে। ফলে সারা শরীরে মারাত্মক যন্ত্রণাসহ বিভিন্ন জটিলতা প্রকাশ পায়।

৪. ঘুম ভালো হয়:

জার্নাল অব নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ভালো ঘুম না হওয়ার পিছনে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্ট্রেস দায়ী। আর ভালো ঘুমের জন্য সাহায্য করতে পারে লবণপানি। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে অল্প প্রাকৃতিক লবণ মিশিয়ে পান করুন। ঘুমের সমস্যা দূর হবে। কারণ অক্সিটসিন নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায় লবণ, যা স্ট্রেস লেভেল কমানোর পাশাপাশি অ্যাংজাইটি দূর করে।

৫. শরীরকে বিষমুক্ত করে:

অনেকের খাবার হজমে সমস্যা হয়। ফলে তাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্রাক্টে হজম না হওয়া খাবার জমতে শুরু করে। এই জমতে থাকা বর্জ্য পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত এবং কোলোনে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। একইসঙ্গে শরীরের বিশেষ কিছু অংশে টক্সিনের মাত্রাও বাড়ে। ফলে ধীরে ধীরে শরীর ভাঙতে শুরু করে। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। শরীরে জমে থাকা টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থকে বের করে দেয় এই পানীয়, ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

৬. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে:

প্রাকৃতিক লবণে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ভিতর থেকে চামড়াকে সুন্দর করে। একইসঙ্গে ব্রন এবং ত্বকের সংক্রমণের প্রকোপ কমাতেও দারুণ কাজে দেয়। প্রতিদিন লবণপানি পান করলে একজিমা, ড্রাই স্কাল্প এবং ফুসকুড়ির মতো রোগও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আজকের বাজার: সালি/৫ জুলাই ২০১৭