শিগগিরই গণমাধ্যম কর্মী আইন মন্ত্রিপরিষদে উঠবে: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শিগগিরই গণমাধ্যমকর্মী আইন মন্ত্রিপরিষদে উঠবে। তিনি বলেন, এর আওতায় ইলেকট্রোনিক মিডিয়াসহ সব ধরনের গণমাধ্যম কর্মীদের আইনী সুরক্ষায় আনা যাবে। তথ্যমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-র দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। গণমাধ্যমকর্মী আইনে যেসব সমস্যা ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা কোনভাবেই শ্রমিক নয়। তাই, এ বিষয়ে আরেকটি সভা করার পর গণমাধ্যমকর্মী আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়ে যেতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। ডিইউজের এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএফইজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ।

ডিইউজে’র সভাপতি আবু জাফর সূর্যের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী। তথ্যমন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই ‘নবম ওয়েজবোর্ড’ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যান্যবার ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করার সময় এতবড় চ্যালেঞ্জ ছিল না। কিন্তু নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, কারণ, এব্যাপারে হাইকোর্টে মামলা ছিল এবং রুল জারির পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রণালয়ের সচিবকে ওই মামলায় তলব করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আইনী প্রতিবন্ধকতা ভ্যাকেন্ট করে ভ্যাকেন্টকালিন সময়ে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছি। ’ এসব বিষয় নিজে এটর্নী জেনারেলের সাথে কয়েকবার কথা বলে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয় বলেও তথ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

ড. হাছান বলেন, সাংবাদিকরা দেশ, জাতি এবং সমাজের বিবেক। কারণ, তারা লেখনীর মাধ্যমে সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেন। তাদের লেখনীর মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র এবং সরকার দিক-নির্দেশনা পায়। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে ভাষাহীনদের মুখের ভাষা দিতে পারেন এবং ক্ষমতাহীনদেও ক্ষমতাবান করতে পারেন।’তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিশেষত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাংবাদিক-বান্ধব’ একজন নেতা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ১১ বছরে দেশের গণমাধ্যমের অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি বলেন, ১১ বছর আগে দেশে পত্রিকার সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ শ’র মতো। বর্তমানে এই সংখ্যা সাড়ে ১২ শ’র উপরে। এছাড়া, ১১ বছর আগে দেশে ইলেকট্রোনিক মিডিয়া ছিল ১০টি। বর্তমানে ৩৪টি ইলেকট্রোনিক মিডিয়া সম্প্রচারে আছে বলে তথ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। ড. হাছান বলেন, আগে হাতে-গোনা কয়েকটি ‘অন-লাইন’ পত্রিকা ছিল। আর এখন রেজিস্ট্রেশনের জন্য সাড়ে তিন হাজারের বেশি ‘অন-লাইন’ পত্রিকার আবেদন জমা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা যেখানে দিন-দিন কমছে, সেখানে আমাদের বেড়েছে। এরফলে, এখন সংবাদকর্মীদের ব্যাপ্তি ও পরিধিও বেড়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সরকারের নীতির কারণে।’ ড. হাছান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে আমি আপনাদের দৃষ্টিতে পুরোবিষয় দেখার চেষ্টা করেছি। যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা আপনাদের সাথে আলোচনা করেই নেয়ার চেষ্টা করেছি।’

সংবাদপত্র বাঁচিয়ে রাখে সাংবাদিকরা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, সাংবাদিকরা কাজ না করলে কোনো সংবাদপত্র টিকবে না। আর সাংবাদিকদের বঞ্চিত করে সংবাদপত্রের সমৃদ্ধি আসতে পারে না।’ তিনি বলেন, সংবাদপত্রের সমৃদ্ধির স্বার্থেই ঘোষিত ওয়েজবোর্ড পালন ও বাস্তবায়ন করা উচিৎ। মামলার বেড়াজাল দিয়ে এটি লংঘিত করা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে ওয়েজবোর্ডের অন্তর্ভূক্তির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়েজবোর্ড গঠিত হয়েছিল প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য। আর পার্লামেন্টে পাস করা আইনের ভিত্তিতে ওয়েজবোর্ড গঠিত হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে অন্তর্ভূক্ত করতে হলে আবার আইন করা প্রয়োজন। তবে, আমরা যে গণমাধ্যমকর্মী আইন করছি, তার মাধ্যমে টেলিভিশনসহ সকল গণমাধ্যমকর্মীকে আইনী সুরক্ষায় আওতায় আনা যাবে।’

ড. হাছান বলেন, ‘আপনাদের সুখবর দিতে চাই, বিএনপি-জামাতের আমলে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে যে শ্রমিক বানিয়ে দেয়া হয়েছিল, গণমাধ্যমকর্মী আইনে সেটি নিরসন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সচিব কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরেকটি সভার পর আমরা সেটি মন্ত্রিসভায় নিতে পারবো। একইসাথে আশা করছি, সম্প্রচার আইনটিও খুব সহসা আইন মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় হয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে আসবে। তখন আমরা সেটিও মন্ত্রিসভায় নিয়ে যেতে পারবো।’ গণমাধ্যমকর্মীদের চাকুরির সুরক্ষা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কাউকে যদি ছাঁটাইও করতে হয়, সেটিও আইন মেনেই করতে হবে। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলা একটা ছাঁটাইয়ের কাগজ ধরিয়ে দেয়া যায় না। রাষ্ট্রও সেটি অনুমোদন দেয় না। একজন মানুষ যেখানে কাজ করছে বছরের পর বছর, তাকে হঠাৎ করে ছাঁটাইয়ের কাগজ ধরিয়ে দেয়া, এটি কোনভাবেই সমীচীন নয়, আইনসম্মতও নয়।’ তিনি বলেন, মালিকপক্ষকে আমি অনুরোধ জানাবো, যে কাউকে যে কোনো সময় দয়া করে এভাবে ছাঁটাই করবেন না। তাদেরকে একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলা কোনভাবেই সমীচীন নয়। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান