শীতে ত্বকের যত্নে বিশেষজ্ঞদের ৬ পরামর্শ

হিমশীতল আবহাওয়া আপনার মুখ ও শরীরের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। ত্বক শুষ্ক হতে পারে এবং এমনকি কখনো কখনো ত্বকে ফাটল হতে পারে যা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে অথবা চুলকাতে পারে।

শীতে ত্বককে রক্ষার জন্য ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ত্বক বিশেজ্ঞরা।

* ঘর ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখুন

নিউ ইয়র্ক সিটির ওয়েস্টসাইড মাউন্ট সিনাই ডার্মাটোলজি ফ্যাকাল্টি প্র্যাকটিসের পরিচালক ডা. অ্যাঞ্জেলা ল্যাম্ব বলেন, ‘আমাদের ত্বক হচ্ছে একটি বেষ্টনী যা শরীরের ভেতরের পানি ধরে রাখে, তাই যখন এটি শুষ্ক ও ঠান্ডা হয় ত্বকের পৃষ্ঠ থেকে পানি দ্রুত ও সহজে শুকিয়ে যায়।’

শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে ডা. ল্যাম্ব হিউমিডিফায়ার ব্যবহার ও অতিরিক্ত এক বা দুই গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। সোয়াইগার ডার্মাটোলজি গ্রুপের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. মিশেল ফারবারও ডা. ল্যাম্বের উপদেশের সঙ্গে সুর মিলান। তিনি বলেন, ‘ঘরে ময়েশ্চারাইজার ফিরিয়ে আনতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার চমৎকার উপায়।’

* কোমল প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন

ডা. ল্যাম্ব, যিনি ইনস্টিটিউট অব ফ্যামিলি হেলথের ডার্মাটোলজি বিভাগেরও পরিচালক, বলেন, ‘ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখার চাবিকাঠি হচ্ছে, কোমল পরিষ্কারক ব্যবহার করা। আমি শরীরের জন্য ডাব ফোমিং বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে ভালোবাসি। এটি খুব আর্দ্রতাপূর্ণ এবং ত্বক থেকে আর্দ্রতা দূর করে না।’

ওয়াশিংটন স্কয়ার ডার্মাটোলজির বোর্ড-সনদপ্রাপ্ত ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সামের জাবের মুখ ও শরীরের জন্য সাজেশন দিয়েছেন ।তিনি বলেন, ‘আপনার মুখের জন্য আপনি সিটাফিলের মতো অধিক কোমল পরিষ্কারক ব্যবহার করতে পারেন। আপনার শরীরের জন্য আপনি গ্রীষ্মে স্বাভাবিকভাবে চমৎকার সুগন্ধযুক্ত বডি ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু শীতকালে আপনি ডাব অথবা সিটাফিল কিংবা ভ্যানিক্রিমের মতো বেশি কোমল কোনো কিছু ব্যবহার করতে পারেন।’

আপনার ত্বকে ত্বক সমস্যার প্রাদুর্ভাব হলে আপনার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার বেষ্টনী মেরামত ও রক্ষা করতে ডা. ফারবার উক্ত স্থানে শুধুমাত্র পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন, অন্যথায় সিরামাইড ও গ্লিসারিন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে বলছেন।

* অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল পরিহার করুন

বিশা স্কিনকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড-সনদপ্রাপ্ত ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. পুরবিশা প্যাটেল বলেন, শীতের মাসগুলোতে হট শাওয়ার বা অতিরিক্তি গরম পানিতে গোসল করলে ও ময়েশ্চারাইজিং না করলে ত্বকের পৃষ্ঠে ক্র্যাক বা ফাটল সৃষ্টি হতে পারে। গরম পানি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ত্বক সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্র করা না হলে ত্বকের ক্র্যাক বা ফাটল ত্বকের স্নায়ুকে বাতাসের প্রতি এক্সপোজ হতে দেয়, যার ফলে ত্বকে পেপার কাট এবং অ্যাকজিমার মতো হয় অথবা শীতকালীন চুলকানি হয়।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত এমআই স্কিন ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেজার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ডা. মেলডা আইজ্যাক বলেন, ‘ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমরা দীর্ঘ হেঁটে ঘরে ফিরে হট শাওয়ার নিতে চাই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অত্যধিক গরম পানি আমাদের ত্বককে ডিহাইড্রেটেড করে ফেলে।’

তিনি যোগ করেন, ‘যদি আপনি হট শাওয়ার বা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে চান, আপনার বাথরুমের দরজা বন্ধ করুন এবং শুষ্ক হওয়ার পর ত্বককে আর্দ্র করুন।’ ত্বকের বেষ্টনী থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি হ্রাস ঠেকাতে তিনি সিরামিড ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন।

* ময়েশ্চারাইজার আপডেট করুন এবং প্রায়সময় এটি ব্যবহার করুন

ত্বককে পুরো শীতে হাইড্রেটেড রাখতে ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং করা গুরুত্বপূর্ণ। ডা. ল্যাম্ব বলেন, ‘গোসলের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুব পুরু ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এবং তারপর দৈনিক একবারের বেশি এটির ব্যবহার আপনার ত্বকে চমৎকার ও মসৃণ অনুভূতি অনুভবে সাহায্য করবে। মাঝেমাঝে মুখ ও শরীরে ক্রিমভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পূর্বে তেলের প্রলেপ হাইড্রেশন ধরে রাখতে সাহায্য করবে।’

ডা. ফারবার বলেন, ‘গোসলের পূর্বে আমি সবসময় বডি অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিই। আমি নারকেল তেল পছন্দ করি, কারণ এটি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে পারে এবং গরম পানিতে গোসলের পূর্বে ত্বকের বেষ্টনীকে রক্ষা করে। নারকেল তেল ছাড়াও এসেনশিয়াল অয়েল আসলেই চমৎকার কাজ করে। আর্গান অয়েল, টি ট্রি অয়েল, রোজ অয়েল, রোজ হিপ অয়েল মুখের জন্য চমৎকার এবং ব্রণ প্রবণ লোকদের জন্য এসব তেল সামান্য সুবিধাজনক।’

ডা. জাবেরের মতে, ‘লোকজনের মধ্যে প্রচলিত একটি ভুল হচ্ছে ক্রিমের পরিবর্তে লোশন নির্বাচন করা। লোশন হচ্ছে কমন ময়েশ্চারাইজার এবং তা পাম্প হিসেবে পাওয়া যায়। লোশনের অসুবিধা হচ্ছে, এসব পুরু নয়, তাই ময়েশ্চারাইজিং খুব একটা হয় না। যখন শীতে আপনার ত্বক শুকিয়ে যাবে, তখন ক্রিম ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ, যা জার ও অয়েন্টমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। আপনি সুগন্ধিও এড়িয়ে যেতে পারেন, কারণ এসব ত্বকে অস্বস্তি ও শুষ্কতা সৃষ্টি করতে পারে।’

তিনি যোগ করেন, ‘অয়েন্টমেন্ট অথবা ভ্যাসলিনের মতো অত্যধিক পুরু প্রোডাক্ট শরীরের ত্বকের জন্য অধিকতর উপযুক্ত, কিন্তু মুখের জন্য নয়, কারণ এসব লোমকূপ বন্ধ করে দিতে পারে।’ তিনি মুখের জন্য ক্রিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ননকমিডোজেনিক ও সুগন্ধমুক্ত সিরামাইড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট নির্বাচনের পরামর্শ দেন।

ডা. আইজ্যাকের পরামর্শকৃত একটি উপাদান হচ্ছে, ভিটামিন বি থেকে উদ্ভুত নিয়াসিনামাইড। তিনি নিউট্রোজেনার হাইড্রো বুস্ট ময়েশ্চারাইজেরও সমর্থক, যেখানে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আছে, সেই সঙ্গে তিনি অ্যাভিনো ও ইউসেরিন প্রোডাক্টের নামও উল্লেখ করেন।

* ভেজা ত্বক নিয়ে শীতে বাইরে যাবেন না

ডা. আইজ্যাক বলেন, ‘অনেক মানুষ তাদের হাত ধুয়ে অথবা ঘরের কোনো কাজ করে বাইরে বের হয়ে যায়, কিন্তু যদি আপনার ত্বক ভেজা বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে এবং আপনি ঠান্ডায় বাইরে বের হলে আপনার ত্বকে আরো বেশি ক্র্যাক বা ফাটল হবে। এটি অনেকটা ঠোঁট শুষ্ক হয়ে গেলে তা চাটার মতো, যার ফলে সমস্যা আরো খারাপের দিকে চলে যায়।’

* ত্বকে এক্সফোলিয়েট কম করুন

ত্বক থেকে মরা কোষ দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য অনেকেই নিয়মিত ত্বকে এক্সফোলিয়েট করে থাকেন। ডা. জাবের বলেন, ‘এক্সফোলিয়েট করবেন কি করবেন না তার উত্তর সবার জন্য একই রকম না।’ তিনি যোগ করেন, ‘যদি আপনার ত্বক খুব খুব শুষ্ক হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই ত্বকে এক্সফোলিয়েট করবেন না। যদি ত্বক ঠিক থাকে, তাহলে আপনি এক্সফোলিয়েট করতে পারেন। তবে শীতে স্বাভাবিকের তুলনায় এক্সফোলিয়েট কম করবেন কারণ শুষ্কতা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে আপনার ত্বকের বেষ্টনী সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

যদি আপনি এক্সফোলিয়েট করতে চান, তাহলে ত্বকের কোষের পুনরুৎপাদন ত্বরান্বিত করতে ও ময়েশ্চারাইজার আরো ভালোভাবে প্রবেশ করাতে সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. আইজ্যাক। তথ্যসূত্র : হাফিংটন পোস্ট

আজকের বাজার/এমএইচ