শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ও গোলটেবিল আলোচনা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী এবং গোলটেবিল অলোচনা সভার আয়োজন করেছে হাসু মণির পাঠশালা। ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ‘শেখ হাসিনা : স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সাধনা’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বঙ্গবন্ধু এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জাতীয় জাদুঘরের সামনে সব্যসাচী ভাস্কর উত্তম ঘোষ নির্মিত ১২ ফুট উচ্চতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তেজোদ্দীপ্ত ভাস্কর্যসহ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন,
“আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশেরই প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বিশ্বনেতা। বিভিন্ন গবেষণা ও প্রকাশনায় বিশ্বনেতাদের কাঁতারে তার নাম ওঠে এসেছে।বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতৃত্বের মাঝে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষে। একদিকে যেমন তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতৃত্বের শীর্ষে, অন্যদিকে তিনি ‘মানবতার মা’ বা ‘মাদার অব হিউমিনিটি’। বহু গুণের সংমিশ্রণ আমরা তার মাঝে দেখতে পাই।”
তিনি বলেন,“বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর যে দর্শন বঙ্গবন্ধু ধারণ করতেন, সেই লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের এক বিস্ময়কর রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য সাহস, দৃঢ় প্রত্যয় এবং বাংলার মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা, তাঁর অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ভ‚মিকা রাখবে। বাংলার মানুষ তাঁর সাথে আছে। আসুন, ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করি, উন্নত- সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলে একযোগে কাজ করে যাই।”

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, “শেখ হাসিনা তাঁর শৈশবকাল থেকে সংগ্রামের মনোবল, গ্রাম বাংলার প্রতি ভালোবাসা ও জন কল্যাণের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের  মাধ্যমে জনগণ আশার আলো দেখতে পান। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন এদেশের মাটিতে থাকা দেশবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তিনি বিচারের আওতায় আনবেন। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও তিনি তার প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেছেন।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও প্রশংসা করে তিনি বলেন, “তিনি তার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশকে অতি কম সময়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে এসেছেন। যার ফলে কেবল দেশেই নয় বিশ্ব দরবারে রতœ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। বিশ্ব সমস্যাগুলোকেও জাতিসংঘসহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার মতো আঞ্চলিক সমস্যায় যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশেই চুপ করে আছেন। তখন মানবতার পরিচয় দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দরজা খুলে দেন।”

আলোচনা সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “আমাদের তরুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আর্দশগুলো তুলে ধরতে হবে। আর এর জন্য বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার প্রয়োজন আছে। এটা হাসুমণির পাঠশালা আয়োজন করেছে-করছে। এই আলোচনায় যে সমস্ত তথ্য উপাত্ত উঠে এসেছে সেগুলো লিপিবদ্ধ করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের গবেষণার জন্য তুলে ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য রাজনীতির একটা পারফেক্ট উদাহরণ। তার যেই আদর্শিক দর্শন রয়েছে সেটাকে তিনি কিভাবে রাজনীতিতে প্রতিফলিত করছেন, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিফলিত করছেন সেটার মাধ্যমে যাতে আমরা তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করতে পারি সেজন্য কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে জাতির পিতা বাংলাদেশকে দক্ষ জনগোষ্ঠীতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি কারিগরি, বুনিয়াদি, সার্বজনিন এবং একটি সহনশীল অসা¤প্রদায়িক সমাজ সৃষ্টির জন্য কাজ করেছেন। আর সেটা বাস্তবায়নের জন্য তার কন্যা আজকে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে বছরের শুরুতে ৩৫ কোটি বই তুলে দিচ্ছেন। আগে চিন্তাও করা যেত না গ্রামের একটা বিদ্যালয় যেখানে একটা দালান হবে অবকাঠামো হবে। আজকে শেখ হাসিনা সরকার সেখানে অবকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। আজকে আমাদের এই দেশ একটি সেবাধর্মী রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে। আর এ কারনে আজকে প্রধানমন্ত্রী কন্যা বাংলাদেশ ছাপিয়ে বিশ্ব নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তিনি এখন শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নন বিশ্ব সম্পদ।”

অনুষ্ঠানে  হাসুমণির পাঠশালার সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল ইসলাম নাদেল, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আরো আলোচনা করেন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) সত্যব্রত সাহা, গবেষক ও সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ, চারুশিল্পী সংসদের সাধারন সম্পাদক শিল্পী কামাল পাশা, চিত্রশিল্পী কিরিটি রঞ্জণ বিশ্বাস, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খােকন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এর সচিব, শাহজাহান আলম সাজু প্রমুখ। অনষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম।