শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএসইর নতুন এমডি কে এ এম মাজেদুর রহমান
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএসইর নতুন এমডি কে এ এম মাজেদুর রহমান

বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি সব পক্ষের কাছে শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি বাড়ানো এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান। নিজ দপ্তরে গতকাল মঙ্গলবার কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানালেন তিনি। ভাবমূর্তি ফেরানোর পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য কৌশলগত বিনিয়োগকারী জোগাড় করাকেও অন্যতম চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তিনি।
স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা করা বা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের বিধান অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর হাতে শেয়ার হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিধান অনুযায়ী, ডিমিউচুয়ালাইজেশন-পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জের শতভাগ শেয়ারের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যমান সদস্য বা ট্রেকহোল্ডারদের (ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট, যারা ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে পরিচিত)। সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বরাদ্দ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর জন্য। বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা যাবে। কৌশলগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির জন্য মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ আলাদা করে ব্লক হিসেবে রাখা আছে।
ডিএসইর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে কৌশলগত ভালো বিনিয়োগকারী পাওয়া না গেলে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছ থেকে বাড়তি কিছুদিন সময় চেয়ে নিতে হবে। কিন্তু শেষ বিচারে কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করতেই হবে। তাই আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করার।’
ডিএসইর এমডি হিসেবে মাজেদুর রহমান ১২ জুলাই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ডিএসইতে যোগ দেওয়ার আগে সর্বশেষ তিনি বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল প্রথম আলোসহ দেশের কয়েকটি দৈনিকের সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি নিজের পরিকল্পনার কথা জানান।
মাজেদুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি বন্ড ও ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) বাজারকে জনপ্রিয় ও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগকে (এসএমই) এগিয়ে নিতে আলাদা একটি বোর্ড করা হবে।
বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মাজেদুর বলেন, বাজারে একধরনের স্থিতাবস্থা রয়েছে। গত কয়েক দিনে লেনদেনেরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ লেনদেন মোটেই আমাদের জন্য প্রত্যাশিত নয়। নতুন নতুন পণ্য যুক্ত করে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে লেনদেনে আরও গতি আনার চেষ্টা করা হবে। তিনি জানান, ডিএসইর দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতিদিনের লেনদেনের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার। হয়তো শিগগির সেটি হবে না। কিন্তু আমাদের চেষ্টা থাকবে সেই লক্ষ্য পূরণের।
তবে বাজার ও লেনদেনের বিষয়ে রাতারাতি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করাটাও ঠিক হবে না বলে জানান মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, যখন প্রত্যাশা খুব বেড়ে যায় তখন তার বিপরীতে হতাশাও বাড়ে। তাই প্রত্যাশার বিষয়েও সবাইকে বাস্তববাদী হতে হবে।
মাজেদুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশীয় অনেক কোম্পানির মধ্যে করপোরেট সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ভালো ভালো কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো এখনো পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত নয়। সেসব কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসা সম্ভব হলে তাতে বাজারের গভীরতা আরও অনেক বাড়বে।