সংবর্ধিত আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইদুজ্জামান

সংবর্ধিত হলেন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পথ দেখানো সাবেক দুই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইদুজ্জামান। বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) যৌথভাবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁদের এ সংবর্ধনা দেয়। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বণিক বার্তা ও বিআইডিএস গুণীজন সংবর্ধনা ২০১৯’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, শিল্পপতি, ব্যাংকার, শিক্ষাবিদসহ সমাজের বিশিষ্টজনরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ।

সূচনা বক্তব্য রাখেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, আমরা সবসময় নতুন ও মহৎ এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। এরই অংশ হিসেবে বিআইডিএসের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের সাবেক দুই অর্থমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার এ উদ্যোগ। তাদের সংবর্ধনা দিতে পেরে বণিক বার্তা ও বিআইডিএস গর্বিত।

বিআইডিএসের নির্বাহী পরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ বলেন, আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও এম সাইদুজ্জামান দুজনই ইতিহাসের সাক্ষী। তারা যা করেছেন তার একটা ডকুমেন্টেশন খুব জরুরি। এটা বর্তমান প্রজন্মের জন্য যেমন জরুরি, একইভাবে জরুরি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও।

সংবর্ধনা দেয়ার আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইদুজ্জামানের কর্মময় জীবনের ওপর সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর দুজনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ক্রেস্ট ও পোর্ট্রেট উপহার দেয়া হয়। আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। তার হাতে পোর্ট্রেট তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ক্রেস্ট উপহার দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এম সাইদুজ্জামানকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তার হাতে পোর্ট্রেট তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং ক্রেস্ট উপহার দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সংবর্ধনা প্রাপ্তির অনুভ‚তিতে এম সাইদুজ্জামান বলেন, ‘এ সংবর্ধনা পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। তবে নিজেকে গুণীজন মনে করি না। সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবেই ভাবতে ভালোবাসি নিজেকে। দীর্ঘ কর্মজীবন ও চলার পথে অনেক গুণীজনের সংস্পর্শ পেয়েছি, এটা আমার সৌভাগ্য। নিজেকে সাধারণ মানুষ মনে করতেই ভালোবাসি। সারা জীবন সাধারণ হিসেবেই সবার মাঝে থাকতে চাই।’ দীর্ঘ কর্মজীবনের নানা ঘটনাও এ সময় সংক্ষেপে তুলে ধরেন সাবেক এ অর্থমন্ত্রী।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘বণিক বার্তা ও বিআইডিএসকে ধন্যবাদ জানাই। অত্যন্ত বিনম্রভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তাদের এ উদ্যোগের। বিশেষ করে আমাদের দুজনকে একসঙ্গে অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

বণিক বার্তা ও বিআইডিএসের এ উদ্যোগ এবং দুই গুণীজনকে নিয়ে একে একে বক্তব্য রাখেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘মানুষের জীবনে কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত থাকে। এ মুহূর্তকে আমি সারা জীবন ধারণ করে রাখব। মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। এ সময় তার সঙ্গে যে আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়নি, তা নয়। পরক্ষণেই তা মিটমাট হয়ে গেছে।’

অনুষ্ঠানে এম সাইদুজ্জামান সম্পর্কে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি তার মতো করিৎকর্মা মানুষ খুব কমই দেখেছি। পেশাগত জীবনে যেমন তার কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার ও জানার সুযোগ হয়েছে, পারিবারিকভাবেও আমরা বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও এম সাইদুজ্জামানকে সংবর্ধিত করতে পেরে আমরা কৃতার্থ।’

সংবর্ধিত সাবেক দুই অর্থমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় তিনি আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘দুই গুণীজনকে সংবর্ধনা জানাল বণিক বার্তা ও বিআইডিএস। তাদের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এ দুই গুণী আমাদের জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুক যুগ যুগ ধরে।’

সাবেক এই দুই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রসঙ্গ উলে­খ করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, দুজনই বাংলাদেশের প্রথিতযশা ব্যক্তি। সংবর্ধিত সাবেক দুই অর্থমন্ত্রীকেই অভিনন্দন।

সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এম সাইদুজ্জামানের সঙ্গে কিছু কম, তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে, কিছু বলতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’

দেশের অর্থনৈতিক যে অগ্রগতি, তাতে আবুল মাল আবদুল মুহিতের বড় ধরনের অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করেছি। তারা আমার সিনিয়র ছিলেন।’

সামিট গ্র“পের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের উন্নয়নে যতটা অবদান রাখতে পেরেছেন, পৃথিবীর আর কোনো অর্থমন্ত্রীই তার দেশের জন্য ততটা পারেননি।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, এ দুই গুণীকে সংবর্ধিত করার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের দায়মুক্তি ঘটল। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা হলো।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়াকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে জানান মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, কয়েক বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য গুণীজনদের সংবর্ধনা দিয়ে আসছে বণিক বার্তা।