সবাই আ’লীগকে আবারো ক্ষমতায় দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন: প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশন উপলক্ষে নিউইয়র্ক সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের সাথেই সাক্ষাৎ করেছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান এবং সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার সাথে কথা বলেছি তিনিই মনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন যেন আমরা আবারো নির্বাচিত হই। সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি, জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, সবাই একই কথা বলেছেন।’

নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে যত আন্দোলন ও পদক্ষেপ তা আওয়ামী লীগ সরকারই নিয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ছয় হাজার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কোনো অনিয়ম হয়নি।

যারা সরকারের পদত্যাগ চাইছে তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলে, ‘আমাদের অপরাধ কী? নিজের স্বার্থ নিয়ে তো রাজনীতি করি না, সরকার চালাই না। জনগণের স্বার্থে সরকার চালাই।’

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো এর পক্ষে।’

‘বন্দী থাকার সময় দিন বদলের সনদ লিখে রেখেছিলাম। কখন কী করব তা ঠিক করেছিলাম। প্রতিটি জায়গায় উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে,’ যোগ করে তিনি।

নেতা-কর্মীদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘অনেকে মানুষের কাছে যেতে পারে না, ভোট চাইতে পারে না, কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ আছে। এমন লোকদের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার কারণে দেশ বারবার বিপদে পড়ে। তাদের অপচেষ্টা সব সময় আছে। তাই নেতা-কর্মীদের সাবধান করে দিয়েছি।’

বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার জরিপের ফল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট। মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। তরুণদের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দেয়া হয়েছে। তারা উদ্যোক্তা হতে পারছে। শুধু চাকরির পেছনে ছুটছে না।

২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রাকৃতির দুর্যোগমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে সরকারে থেকে উন্নয়ন করেছি, তাই এমনি ক্ষমতায় চলে আসব- তা ভাবলে চলবে না। বাংলাদেশ তেমন দেশ না। তেমন সভ্য না। এক সময় মুক্তিযোদ্ধারাও তো নিজেদের পরিচয় দিতে ভয় পেতেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলব, যে সাংবাদিক মিথ্যা তথ্য দেবেন না তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। সিআরপিসিতে যা আছে আইনটিতে তাই দেয়া হয়েছে।’

সরকারকে ঘায়েল করার জন্য যারা বসে আছেন তাদের উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে তা সত্য প্রমাণ করতে না পারলে সাংবাদিক, প্রকাশক সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যেমনটা ইংল্যান্ডের আইন রয়েছে।’

‘অনেক সময় মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশের পর তদন্তে তা প্রমাণ হয় না। কিন্তু এ জন্য একজনের জীবনটা তো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সাংবাদিকের তো কিছু হয় না। আমাদের বিরুদ্ধে পদ্মাসেতু ও মিগ নিয়ে মামলা হয়েছে। কিন্তু প্রমাণ হয়নি। যারা এসব নিয়ে লিখেছেন তাদের তো কিছু হয়নি। কিন্তু আমরা তো হেয় হয়েছি,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনলাইনে ছিল এবং তা সবাই দেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন কিসের জন্য এত উদ্বেগ, আমার প্রশ্ন। সাংবাদিকদের বৈঠকে এমন লোকদের দেখলাম, তারা তো উদ্বিগ্ন হবেই। তারা তো বসেই আছে আমার বিরুদ্ধে লিখতে।’

আজকের বাজার/এমএইচ